মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

রোজার কিছু জরুরি মাসয়ালা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

মুসলমানের কাছে পবিত্র রমজান সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন মাস। এই মাসের বিশেষ আমলটি হলো রোজা। এই রোজা বিশুদ্ধ করতে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ করতে সংশ্লিষ্ট সকল মাসয়ালা জানা প্রয়োজন। বিশেষ করে যেসব মাসয়ালা নিয়ে দ্বিধা তৈরি হয় সেগুলো জেনে নেওয়া জরুরি। এখানে তাদের জ্ঞাতার্থে রোজার গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো যেগুলো নিয়ে সাধারণ মুসলমানরা বেশি দ্বিধায় থাকেন।

১) স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙে না। (তিরমিজি: ৭১৯) 
২) মুখের থুথু গিলে ফেললে রোজা ভাঙে না। (নাওয়াজিল: পৃ. ১৫০) এমনকি থুথুর পরিমাণ বেশি হলেও। তবে, অন্য কারো থুথু গিলে ফেললে কিংবা নিজেরই থুথু মুখ থেকে বের করার পর গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে। (আমলগিরি, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২০৩)
৩) কফ-কাঁশি গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয় না। কেননা কফ পানাহার হিসেবে গণ্য হয় না। (আল-শারহুল মুমতি; শাইখ উছাইমিন: ৬/৪২৮) তবে এসব খেয়ে ফেলা অনুচিত। কেননা কফ ঘৃণিত জিনিস। হতে পারে কফের মধ্যে এমন কিছু রোগ রয়েছে— যা শরীর থেকে নিঃসরিত হয়েছিল। তবে এর কারণে রোজা ভাঙবে না।
৪) করোনার টিকা-ইনজেকশন বা ইনসুলিনের ব্যাপারে জমহুর ওলামাদের রায় হলো—এতে রোজা ভাঙবে না। কেননা এতে কোনোকিছু সরাসরি খাদ্যনালী অতিক্রম করে না। (তথ্যসূত্র: ইমদাদুল ফতোয়া: ২/১৪৪-১৪৭—৩/১৩৩-১৩৪; ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ: ৬/৪০-৪০৯; ফতোয়া রহিমিয়া: ৭/২৫৭; আহসানুল ফতোয়া: ৪/৪২২; ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৫/১৭৩-১৭৯; আপকি মাসায়িল আওর উনকা হল: ৩/২১২; ইমদাদুল ফতোয়া)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন:
রাসুলুল্লাহ (স.) কী দিয়ে ইফতার করতেন?
রমজানে দোয়া কবুলের ওয়াদা
রমজানে মূল্যবৃদ্ধি, রোজাদার যেভাবে প্রতিবাদ করবেন

৫) ইনহেলার নিলে রোজা ভেঙে যাবে। অতি প্রয়োজনে ব্যবহার করলেও ইনহেলারে রোজা ভঙ্গ হয় এবং পরে সেই রোজার কাজা দিতে হবে। তবে, স্প্রে করার পর না গিলে যদি থুতু দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে রোজা ভাঙবে না। (তথ্যসূত্র: ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৫/৪৫৯; হেদায়া: ১/১২০)
৬) অনিচ্ছাবশত গলার মধ্যে ধোঁয়া, ধুলাবালি, মশা, মাছি চলে গেলে রোজা ভঙ্গ হয় না। (শামি: খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা-৩৬৬)
৭) বমির বিধান দুই রকম। ইচ্ছাকৃত এবং অনিচ্ছাকৃত। অনিচ্ছাকৃত বমি হলে রোজা ভঙ্গ হয় না, মাকরুহও হয় না। এমনকি কিছু বমি পেটের ভেতরে ফিরে গেলেও রোজা নষ্ট হবে না। এমনকি যদি মুখভরে বমি হয়, তাতেও রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। (আল-মুগনী: ৪/৩৬৮) ইচ্ছাকৃত বমি করলে রোজা ভেঙে যাবে। সে যেন রোজার কাজা করে। (তিরমিজি: ৭২০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৬/১৮০; আল-বাহরুর রায়েক: ২/২৪৭)
৮) বাচ্চার খাবারের স্বাদ দেখতে অথবা শরবতে চিনির পরিমাণ কিংবা তরকারিতে লবণ-মসলার পরিমাণ কতটুকু হয়েছে, তা পরীক্ষা করতে জিহ্বায় অল্প পরিমাণ নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা সেরে নেওয়ার পরে পানি দিয়ে কুলি করে নিতে হবে। (ইবনে আবি শাইবাহ, বর্ণনা: ৯৩৮৫; খানিয়া: ১/২০৪; মুহিতুল বুরহানি: ৩/৩৫৬; আল-বাহরুর রায়েক: ২/২৭৯; হিন্দিয়া: ১/১৯৯) এ ব্যাপারে ইমাম আহমদ বলেন, খাবার চেখে না দেখাটাই আমার নিকট পছন্দনীয়। তবে, যদি চেখে দেখা হয়, তাতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। (মুগনি: ৪/৩৫৯) ইবনে তাইমিয়া বলেন, প্রয়োজন ছাড়া খাবার চেখে দেখা মাকরুহ; তবে এতে রোজা ভঙ্গ হবে না। (‘ফতোয়ায়ে কুবরা: ৪/৪৭৪)
৯) চোখে ওষুধ দিলে রোজা ভঙ্গ হবে না। (এমদাদুল ফতোয়া: খ. ২, পৃ-১২৭) চোখে ড্রপ দেওয়ার কারণে গলার ভেতরে এর স্বাদ গেলেও রোজা ভাঙ্গবে না। (আল-শারহুল মুমতি: ৬/৩৮২)
১০) রোজা অবস্থায় কানের ড্রপও ব্যবহার করা যাবে। (মুফতিরাতুস সাওম ফি মাজালিত তাদাওয়ি, মুফতিরাতুত তিব্বিয়াহ আল মুআসিরাহ)
১১) রোজা অবস্থায় নাকে ড্রপ বা তেল ব্যবহার করা যাবে না। এতে রোজা ভেঙে যাবে। এ বিষয়ের দলিল হলো রাসুলুল্লাহ (স.) লাকিত ইবনে সাবুরাহকে (রা.) বলেছেন, ‘তুমি অজু পরিপূর্ণ করো, তোমার আঙুলগুলো খিলাল করো এবং নাকে ভালো করে পানি দাও। তবে হ্যাঁ, রোজাদার হলে নাকে পানি দিও না।’ (তিরমিজি: ৭৭৮)
১২) ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্ত বের করা হলে রোজা নষ্ট হবে না। আর দুর্বলতার আশঙ্কা না থাকলে মাকরুহও হবে না।
১৩) ভেজা কাপড় শরীরে দেওয়া অথবা ঠাণ্ডার জন্য কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া অথবা গোসল করা মাকরুহ নয়। (শামি: খ. ৩, পৃ. ৩৯৪; দারুল উলুম: খ. ৬, পৃ. ৪০৫; বুখারি)
১৪) রোজায় এমন ইনজেকশন বা টিকা নেওয়া মাকরুহ, যেগুলো দ্বারা রোজার কষ্ট বা দুর্বলতা দূরীভূত হয়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: খ. ১, পৃ. ৩৭৯)
১৫) দাঁত থেকে অল্প রক্ত বের হয়ে যদি গলার ভেতর চলে যায়, তাহলে রোজা ভাঙবে না। যদি রক্তের চেয়ে থুতুর পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (শামি: খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৮)
১৬) দাঁতের ফাঁকে আটকে যাওয়া চানাবুটের চেয়ে ছোট জিনিস খেয়ে ফেললে। (শামি: খ. ৩, পৃ. ৩৬৭)
১৭)  মেসওয়াক করলে রোজা ভাঙে না। সেটি কাঁচা হোক কিংবা শুষ্ক। (আলমগিরি: খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৯৯)
১৮) রোজা রেখে পরীক্ষার জন্য কিংবা কোনো রোগীকে দেওয়ার জন্য রক্ত দিলে, রোজার ক্ষতি হবে না। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে— কেউ যদি শারীরিকভাবে এমন দুর্বল হয় যে, রক্ত দিলে সে রোজা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলবে; তাহলে তার জন্য রক্ত দেওয়া মাকরুহ। (আহসানুল ফতোয়া: ০৪/৪৩৫)
১৯) রোজা রেখে টুথপেস্ট, টুথ পাউডার, মাজন কিংবা কয়লা দিয়ে দাঁত মাজা মাকরুহে তানজিহি। কারণ, এতে স্বাদ রয়েছে। আর যদি তা গলায় বা পেটের ভেতর চলে যায়, তাহলে তো রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এক্ষেত্রে মিসওয়াক ব্যবহার করাই উত্তম। মেসওয়াকে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। (আল বাহরুর রায়েক, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৭৯; আলমগিরি, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৯৯; রদ্দুল মুখতার: ২/৪১৫-৪১৬; খানিয়া: ১/২০৪; হিদায়া: ১/২২০)
২০) দাঁতে অভ্যাসগতভাবে যারা গুল ব্যবহার করেন, তাদের রোজা অবস্থায় গুল ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে এবং কাজা ও কাফফারা আদায় করতে হবে। আর যদি অভ্যাসগত না হয়; বরং দাঁতের কোনো উপকার বা দাঁত পরিষ্কারের লক্ষ্যে গুল ব্যবহার করেন, তাহলে গলার ভেতর তার প্রতিক্রিয়া অনুভূত না হওয়া পর্যন্ত রোজা ভাঙবে না। (হিন্দিয়া: ১/২০৪, খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/২৫৩, ইমদাদুল আহকাম: ২/১২৮, ফকিহুল মিল্লাত: ৫/৪৫০)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রোজার সকল মাসয়ালা জানার, বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন