শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

রাসুলুল্লাহ (স.) কী দিয়ে ইফতার করতেন?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৫:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

রাসুলুল্লাহ (স.) কী দিয়ে ইফতার করতেন?

রোজাদারের জন্য ইফতার বড় আনন্দের। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দঘন মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো ইফতারের সময় এবং অন্যটি হলো (কেয়ামতের দিবসে) নিজ প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (বুখারি: ৭৪৯২; মুসলিম: ১১৫১; তিরমিজি: ৭৬৬)

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর অভ্যাস ছিল—খেজুর দিয়ে ইফতার করা। হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (স.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’(তিরমিজি; রোজা অধ্যায়: ৬৩২)

স্বাভাবিকতই ইফতারে খেজুর অত্যন্ত উপযোগী উপকরণ। এটি শর্করা ও পুষ্টি উপাদানের উৎস হিসেবে কাজ করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এটি প্রিয়নবী (স.)-এর সুন্নত। 

তবে, খেজুর দিয়ে ইফতার করা বাধ্যতামূলক নয়। বর্তমানে খেজুরের দাম অনেক বেশি। এই অবস্থায় দরিদ্রদের খেজুর কেনার সামর্থ্য নাও থাকতে পারে। সেজন্য হতাশ হওয়ার কারণ নেই। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, শুধু পানি দিয়ে ইফতার করলেও ইফতার আদায় হবে এবং রোজার সওয়াব থেকে কিছুই কমতি করা হবে না। সালমান ইবনে আমির (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দিয়ে; নিশ্চয় পানি পবিত্র‘। (আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও দারেমি; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬২, পৃষ্ঠা: ১৩১-১৩২)

উল্লেখ্য, অনতিবিলম্বে ইফতার করা মহানবী (স.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যতদিন মানুষ অনতিবিলম্বে ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।’ (সহিহ বুখারি: ১৮২১; সহিহ মুসলিম: ১৮৩৮)

অন্য হাদিসে নবী করিম (স.) বলেছেন, ‘দ্বীন ততদিন পর্যন্ত ঠিক থাকবে, যতদিন পর্যন্ত মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে। কেননা, ইহুদি-খ্রিস্টানরা বিলম্বে ইফতার করে’ (আবু দাউদ: ২৩৫৫)


বিজ্ঞাপন


উল্লেখিত বর্ণনাসমূহ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেজুর বা পানি খেয়ে অথবা যতটুকু ইফতার করলে তাৎক্ষণিক ক্ষুধা নিবারণ হয়, তা খেয়ে মাগরিবের নামাজ পড়ে নেওয়া উত্তম। নামাজ থেকে ফিরে এসে চাহিদামত আরো ইফতার নেওয়া যায়। তবে, ইবাদতে আলস্য বা অসুবিধা হতে পারে—অত বেশি খাওয়া জরুরি নয়।

প্রসঙ্গত, ইফতারের আগের মুহূর্তটি অতি মূল্যবান। এটি দোয়া কবুলের সময়। নবী করিম (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে ও নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া’ (ইবনে মাজাহ: ১৭৫২)। তিনি আরও বলেছেন, ‘ইফতারের সময় রোজাদের ন্যূনতম একটি দোয়া অবশ্যই কবুল হয়।’ (ইবনে মাজাহ: ১৭৫৩)

ইফতারের আগে গুনাহ ক্ষমার এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া দরকার— يَا وَا سِعَ الْمَغْفِرَةِ اِغْفِرْلِىْ উচ্চারণ: ‘ইয়া ওয়াসিয়াল মাগফিরাতি, ইগফিরলী’ অর্থ: হে মহান ক্ষমা দানকারী! আমাকে ক্ষমা করুন। (শু‘আবুল ঈমান: ৩/৪০৭)
অতঃপর ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহ’ বলে ইফতার শুরু করবে এবং পরে নিম্নের দোয়া দুটি পড়বে—

১. اَللّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلي رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়ালা রিজকিকা আফতারতু।’ অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোজা রেখেছি, এবং তোমারই দেয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করলাম। (আবু দাউদ: ১/৩২২)

২. ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْـتَلَّتِ العُرُوْقُ وَثَبَتَ الاَ جْرُ اِنْ شَاءَ الله تَعَا لى উচ্চারণ: যাহাবাযযমা ওয়াবতাল্লাতিল উরুকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহু তায়ালা। অর্থ: পিপাসা দূরিভূত হয়েছে, ধমনীসমূহ সতেজ হয়েছে, এবং ইনশাআল্লাহ রোজার সওয়াব নিশ্চিত হয়েছে। (আবু দাউদ: ১/৩২১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইফতারের মুবারক সময়ে করণীয় আমল যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর