বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

রমজানে মূল্যবৃদ্ধি, রোজাদার যেভাবে প্রতিবাদ করবেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২৩, ০৪:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

রমজানে মূল্যবৃদ্ধি, রোজাদার যেভাবে প্রতিবাদ করবেন

পবিত্র রমজান আত্মশুদ্ধি, নৈতিক প্রশিক্ষণ ও আত্মগঠনের মাস। মুসলমানদের জীবনকে পরিশুদ্ধ করার জন্য প্রতিবছর এই মাস আগমন করে। পবিত্র রমজান শুরু হতে আর অল্প কয়েকদিন বাকি। এখন থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী রমজান মাসকেই টাকার পাহাড় গড়ার সুযোগ হিসেবে বেছে নিয়েছে। অথচ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশই রমজান উপলক্ষে দ্রব্যমূল্যের সহজলভ্যতার জন্য প্রায় ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে থাকে। দুঃখজনকভাবে আমাদের দেশে বিষয়টি ব্যতিক্রম। ভুলে গেলে চলবে না- রমজান মাসকে টার্গেট করে রোজাদারকে কষ্ট দেওয়া ইসলামে মহাপাপ।

এমন প্রবণতা রমজানের শিক্ষার পরিপন্থী। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘ন্যায্যমূল্যে জিনিস সরবরাহকারী রিজিকপ্রাপ্ত আর মজুদ করে সংকট সৃষ্টিকারী অভিশপ্ত’ (বুখারি: ৩৭১২)। নবী কারিম (স.) আরও বলেন, ‘কেয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা মহা অপরাধী হিসেবে উত্থিত হবে। তবে যারা আল্লাহকে ভয় করবে, নেকভাবে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যবসা করবে তারা ব্যতীত।’ (তিরমিজি: ১২১০)


বিজ্ঞাপন


ভোক্তাদের জিম্মি করে বিত্তশালী হওয়ার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই; বরং ক্ষতি আর ক্ষতি। অবৈধ উপার্জন একদিকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ, অন্যদিকে দুনিয়ার জীবনও অভিশপ্ত। উপরন্তু উপার্জন হারাম হওয়ায় তার নামাজ, রোজা, হজসহ কোনো নেক আমলই কবুল হবে না। আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্য মজুদ রাখল সে আল্লাহর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, আল্লাহ দূরে গেলেন তার কাছ থেকে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৮/৪৮১)

রমজান মাসে রোজাদারেরও দায়িত্ব আছে। যে দায়িত্ব শুধু নিজের কল্যাণের নিয়তে নয়, অন্য ভাইয়েরও উপকার করাই হবে উদ্দেশ্য। সেটি হলো—যে জিনিসের দাম রমজান উপলক্ষে বাড়ানো হবে, সেটি বয়কট করা এবং সুলভ-সহজলভ্য জিনিসগুলো দিয়েই ইফতার, সেহেরি ইত্যাদি সেরে নেওয়া। 

মনে রাখবেন, বেশি খাওয়া-পরার সাথে সুন্নতের সম্পর্ক নেই। নবীজি (স.) সহজলভ্য ও সুলভে যা পেতেন, তা-ই খেতেন ও পরতেন। উম্মতের জন্য কঠিন হবে—এমন কিছুতে অংশগ্রহণ ছিল না দরদি নবীর (স.)। আপনিও নবীজিকেই অনুসরণ করুন। আর মহানবীকে অনুসরণের মধ্যেই চূড়ান্ত সফলতা নিহিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘হে রাসুল, আপনি বলে দিন- তোমরা যদি আল্লাহর ভালোবাসা চাও তাহলে আমাকে অনুসরণ করো; তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সুরা ইমরান :৩১)

নিজের টাকা-পয়সা আছে বলেই যদি অন্যায়ভাবে দাম বাড়িয়ে দেওয়া পণ্য আপনি কিনেন, তাহলে সেটা হবে অসৎ ব্যবসায়ীদের গুনাহের কাজে সহযোগী হওয়ার সামিল এবং পরোক্ষভাবে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত রোজাদারকে কষ্ট দেওয়ার শামিল। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ— ‘আর তোমরা সৎকাজ ও আল্লাহভীতিতে পরস্পরের সহযোগিতা করো। পাপকাজ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না।’ (সূরা মায়েদা: ২)


বিজ্ঞাপন


সুতরাং রমজানকে টার্গেট করে যারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হতে চায়, তাদের পণ্য বর্জন করুন। তাদের জন্য এই শাস্তিটাই যথেষ্ট। তখন কম-দামে বিক্রি করতে বাধ্য হবে এসব মহাজন। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে গোশতের মূল্য বৃদ্ধি পেলে লোকেরা তাঁর কাছে অভিযোগ করে তার মূল্য নির্ধারণের দাবি জানায়। তিনি বলেন, তোমরাই এর মূল্য হ্রাস করে দাও। তাদের কাছ থেকে গোশত কেনা ছেড়ে দাও। (আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া: ৯/১৪১)

বেশি লাভের জন্য যারা রোজাদারের পকেটকে টার্গেট করে, তাদের পরিণতি এরকমই হওয়া উচিত এবং এমন সওয়াবের কাজে রোজাদার হিসেবে আমার আপনার সবার সহযোগিতা জরুরি।

এক্ষেত্রে সৎ ব্যবসায়ীরাও ভূমিকা রাখতে পারেন। যেমন— অনৈতিক ব্যবসায়ীরা যেসব পণ্যের দাম বাড়ানোর চক্রান্ত করে, সেসব পণ্য পাবলিসিটি করে কম দামে বিক্রি করার ব্যবস্থা নেওয়া অথবা কোথায় কমদামে বিক্রি হচ্ছে সেটি ক্রেতাকে দেখিয়ে দেওয়া। এমন ব্যবস্থা গ্রহণকারীরা বিশেষ সওয়াব লাভ করবেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী (স.)-এর কাছে একজন লোক এসে তার নিজের জন্য একটি বাহন চাইল। কিন্তু তাকে তিনি দেওয়ার মতো কোনো বাহন না পেয়ে তাকে অন্য এক লোকের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। সেই ব্যক্তি তাকে একটি বাহন দিলো। এ ঘটনাটি তিনি নবী (স.)-এর কাছে এসে বললে তিনি বলেন, ‘সৎকাজের পথপ্রদর্শক ওই কাজ সম্পাদনকারীর সমতুল্য।’ (তিরমিজি: ২৬৭০)

রমজানের পবিত্রতা বিরোধী সব উপায়-উপকরণের লাগাম টেনে ধরতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্যে ভেজাল, মজুদদারি, মুনাফাখোরি ও প্রতারণামূলক সব কার্যক্রম বন্ধ করার যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আত্মশুদ্ধি অর্জন, নৈতিক উন্নত চরিত্র গঠন ও রমজানের সুফল লাভ কঠিন হবে। তাই সরকার, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দ্রব্যমূল্যরোধে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। আল্লাহ তাআলা সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর