বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

রমজানে কোরআন শেখানোর ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২৩, ০১:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

পবিত্র রমজানের সঙ্গে কোরআনুল কারিমের নিবিড় সম্পর্ক। কেননা কোরআন নাজিল হয়েছে রমজান মাসে। ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস, যে মাসে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সুপথপ্রাপ্তির সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর হক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন অবশ্যই এর রোজা রাখে।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)

রমজান মাসে রাসুলুল্লাহ (স.) কোরআন চর্চায় অধিক মনোযোগী হতেন। এসময় নবীজি (স.) ও জিবরাইল (আ.) পরস্পরকে কোরআন পাঠ করে শোনাতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রমজান মাসের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে উপস্থিত হতেন এবং তাঁরা উভয়ই পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করে একে অপরকে শোনাতেন।’ (বুখারি: ৬)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: রমজানে তেলাওয়াত ও চর্চা কোরআনের হক

সাহাবায়ে কেরামও রমজান মাসে বেশি বেশি তেলাওয়াত করতেন। নবীজি ও সাহাবিদের অনুসরণে সালফে সালেহিন প্রতি রমজান মাসে কোরআন খতম করতেন। রমজান মাস কোরআন তেলাওয়াতের যেমন উত্তম সময়, একইভাবে অপরকে কোরআন শেখানোরও উপযুক্ত ও উত্তম সময়। অপরকে কোরআন শেখানোর গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। এই দুটি কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের নবীজি শ্রেষ্ঠ মানুষ ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে-ই, যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।’ (সহিহ বুখারি: ৫০২৭)

শিক্ষকদের মর্যাদা এমনিতেই অতুলনীয়। আর সে শিক্ষা যদি হয় কোরআনের, তাহলে তো সোনায় সোহাগা! হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (স.) শিক্ষকদের মর্যাদা এভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন-‘সন্দেহ নেই, যিনি মানুষকে কল্যাণের শিক্ষা দেন, তার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন। তাঁর ফেরেশতাকুল, আকাশসমূহ ও পৃথিবীর অধিবাসীরা, এমনকি গর্তের ভেতরে থাকা পিঁপড়াও, মাছও এই ব্যক্তির জন্যে দোয়া করে। (জামে তিরমিজি: ২৬৮৫)

কোরআনের ছোঁয়া লেগেছে মানেই মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বে অনুপম হয়ে গেছে। যেমন—রমজান মাস কোরআন নাজিলের মাস। তাই রমজানের সঙ্গে অন্য মাসের তুলনা চলে না। আর কোরআন নাজিল হয়েছে লাইলাতুল কদরে। তাই এই রাত হয়ে গেছে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। 


বিজ্ঞাপন


একইভাবে যার অন্তরে কোরআন স্থান নিয়েছে, সেই মানুষটিও হয়ে ওঠেন অনন্য মর্যাদার অধিকারী। তিনি নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে সওয়াব লাভ করেন। তাদের সম্মান ও মর্যাদা এতই উঁচু যে, তাদের সঙ্গে হিংসা করতেও নিষেধ নেই। হাদিসে এসেছে, ‘কেবল দুই ব্যক্তিকে নিয়েই হিংসা করা যায়- এক. যাকে আল্লাহ কোরআনের শিক্ষা দিয়েছেন আর সে তা রাত ও দিনের বিভিন্ন প্রহরে তেলাওয়াত করতে থাকে; তার প্রতিবেশী তার তেলাওয়াত শুনে আক্ষেপ করে- আমিও যদি তার মতো শিখতে পারতাম, তাহলে এমন আমল আমিও করতাম! আরেকজন, আল্লাহ যাকে সম্পদ দান করেছেন আর সে সত্যের পথে তা ব্যয় করতে থাকে। (তাকে দেখে) অন্যরা বলে, আমারও যদি তার মতো সম্পদ থাকত, তাহলে আমিও এমন করতাম! (সহিহ বুখারি: ৫০২৬)

আরও পড়ুন: হাফেজদের সম্মানে নবীজির ঘোষণা

পবিত্র কোরআন এমন গ্রন্থ, যার শাব্দিক পাঠও ইবাদত। সেই পাঠ বা তেলাওয়াত বুঝে-না বুঝে যেভাবেই করা হোক না কেন, প্রতি হরফে নেকি লাভের ঘোষণা দিয়ে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কোরআনের যে একটি হরফ পাঠ করল তার জন্যে রয়েছে একটি নেকি। আর একটি নেকি দশটি নেকির সমান। (জামে তিরমিজি: ২৯১০)

নামাজে বা নামাজের বাইরে যেখানেই তেলাওয়াত করা হোক না কেন, তার আমলনামা সমৃদ্ধ হবে। যিনি তাকে এই কোরআন পড়তে শিখিয়েছেন হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, এর সমপরিমাণ সওয়াব তার আমলনামায়ও যোগ হবে। এমনকি মৃত্যুর মধ্য দিয়েও কোরআনের শিক্ষকের সওয়াবপ্রাপ্তি শেষ হবে না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার সকল আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল এর ব্যতিক্রম- এক. সদকায়ে জারিয়া, দুই. উপকারী ইলম, তিন. তার জন্যে দোয়া করে এমন নেক সন্তান।’ (নাসায়ি: ৩৬৫১)

সাহাবায়ে কেরাম পবিত্র কোরআনের পেছনে প্রচুর সময় ব্যয় করতেন। সময় নিয়ে গভীরভাবে কোরআন শেখার চেষ্টা করতেন। ইমাম মালেক রাহ. বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) আট বছর ধরে কেবল সুরা বাকারাই শিখেছেন। (মুয়াত্তা মালেক: ৪৭৯)

অতএব নবীজি, সাহাবি ও পূর্ববর্তী বুজুর্গ আলেমদের অনুসরণে মুমিন মুসলমানেরও উচিত রমজানে বেশি বেশি কোরআন শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়া। বিশেষ করে পবিত্র রমজানে কোরআনের পেছনে সময় ব্যয় করা মুত্তাকিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা কোরআন নাজিলের মাসে কোরআন চর্চা—এ এক মহান ইবাদত। বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (স.) ইরশাদ করেছেন, রোজা ও কোরআন কেয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে প্রতিপালক!! আমি তাকে খাদ্য ও যৌনসম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, (অর্থাৎ না ঘুমিয়ে সে তেলাওয়াত করেছে) অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। নবীজি (স.) বলেন, অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৬৬২৬; মুসতাদরাকে হাকিম: ২০৮০) 

 আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন