রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

রমজানে তেলাওয়াত ও চর্চা কোরআনের হক

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২২, ০৩:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

রমজানে তেলাওয়াত ও চর্চা কোরআনের হক

রমজান মাসের সঙ্গে কোরআনের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। এই সম্পর্ক এত গভীর যে, রমজানকে কোরআনের মাস বলেই অভিহিত করা হয়। বিশ্বমানবতার মুক্তির পথনির্দেশ হিসেবে রমজান মাসে কোরআন নাজিল করে আল্লাহ কোরআন ও রমজানের মধ্যে সুগভীর সম্পর্ক তৈরি করেছেন। 

তাই বলা যায়, রমজান মাসে তেলাওয়াত করা হলো কোরআনের অন্যতম হক। ইমাম যুহরি (রহ) বলেন, রমজান হচ্ছে কোরআন তেলাওয়াত ও আহার বিতরণের মাস। (ইবনে আব্দুল বার, আত তামহিদ: ৬/১১১) 


বিজ্ঞাপন


তবে এ তেলাওয়াতে কোনোভাবেই তাড়াহুড়ো করা যাবে না। সব সময় ধীরস্থিরতার সঙ্গে তারতিল অনুযায়ী কোরআন তেলাওয়াত করা উত্তম। তেলাওয়াতের পাশাপাশি কোরআনের ভাব-ভাষা-ভঙ্গি-মর্মার্থ অনুধাবন করাও মুসলিম উম্মাহর জন্য একান্ত কর্তব্য। কেননা এ মর্মার্থ অনুধাবনের মধ্যেই রয়েছে হেদায়েত-কল্যাণ-রহমত-বরকত গ্রহণের পাথেয়। 

রমজান ও কোরআন উভয়ের উদ্দেশ্য এক। আর তা হলো তাকওয়া অর্জন। ‘তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো‘ (সুরা বাকারা: ১৮৩)। ইবনে হাজার (রহ) বলেন- তেলাওয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য আত্মিক উপস্থিতি ও উপলব্ধি। (ফাতহুল বারি: ৯/৪৫)

রমজানে নবীজি (স.) অধিক পরিমাণে কোরআন অনুশীলনে ব্যস্ত থাকতেন। কোরআন শিক্ষায় রাসুলের সহপাঠী হওয়ার জন্য জিব্রাইল (আ.) নিয়োজিত ছিলেন। এ বিষয়ে হাদিসে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়— ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, জিবরাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং ফজর অবধি তার সাথে অবস্থান করতেন। (বুখারি: ১৯০২)

রাসুলুল্লাহ (স.) তাকে কোরআন শোনাতেন এবং তিনি রাতভর তারাবি ও কিয়ামুল লাইলে দীর্ঘক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করতেন। আরো এসেছে- রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর প্রিয়কন্যা ফাতেমাকে (রা.) গোপনে জানালেন যে, জিব্রাইল প্রতি বছর (রমজানে) আমাকে একবার কোরআন শোনাতেন এবং শুনতেন, এ বছর তিনি দুবার আমাকে শুনিয়েছেন-শুনেছেন। একে আমি আমার সময় সমাগত হওয়ার ইঙ্গিত বলে মনে করি। (বুখারি: ৩৬২৪)

রমজানে রাসুলুল্লাহ (স.) নামাজেও দীর্ঘ তিলাওয়াত করতেন। বিশেষত তাহাজ্জুদের নামাজে। কখনো কখনো এত দীর্ঘ তিলাওয়াত করতেন যে, দুই রাকাত নামাজে পুরো রাত কেটে যেত। হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি (রমজানের) এক রাতে রাসুল (স.)-এর সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) সুরা বাকারা তেলাওয়াত করলেন, অতঃপর সুরা নিসা এবং তারপর সুরা আলে ইমরান। যখনই কোনো ভীতি প্রদর্শনের আয়াত এসেছে, রাসুল (স.) তা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। তিনি বলেন, দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে করতে বেলাল (রা.) এলো এবং নামাজের জন্য আজান দিল। (সুনানে বায়হাকি)

ইবনে বাত্তাল (রহ) বলেন, রাসুলের এ কোরআন শিক্ষা ও অনুশীলনের একমাত্র কারণ ছিলো পরকালের আকাঙ্ক্ষা ও ব্যাকুল ভাবনার জাগরণ এবং পার্থিব বিষয়ে অনীহার সৃষ্টি করা। (ইবনে বাত্তাল, শরহে বুখারি: ১/১৩)

রমজান মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত এবং কোরআন খতম করা মোস্তাহাব। রমজানের এই ফজিলতপূর্ণ আমলটি করতে না পারা মানে দুর্ভাগাই বলা যায়। খতম করতে না পারলে যে গুনাহ হবে, তা নয়। তবে, অনেক সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবেন। এর দলিল হচ্ছে- 
রাসুলুল্লাহ (স.)-এর অনুসরণে সলফে সালেহিনের আদর্শ ছিল রমজান মাসে কোরআন খতম করা। ইব্রাহিম নাখায়ি বলেন, আসওয়াদ রমজানের প্রতি দুই রাতে একবার কোরআন খতম করতেন। (আস- সিয়ার: ৪/৫১)

কাতাদা (রহ) সাতদিনে একবার কোরআন খতম করতেন। রমজান মাস এলে প্রতি তিনদিনে একবার কোরআন খতম করতেন। শেষ ১০ রাত শুরু হলে প্রতি রাতে একবার কোরআন খতম করতেন। (আস সিয়ার: ৫/২৭৬)

মুজাহিদ (রহ) থেকে বর্ণিত, তিনি রমজানের প্রতি রাতে কোরআন খতম করতেন। (নববির ‘আত তিবয়ান, পৃষ্ঠা-৭৪) তিনি বলেন, উক্তিটির সনদ সহিহ।
মুজাহিদ (রহ) থেকে বর্ণিত, আলী আল-আজদি রমজানের প্রতি রাতে একবার কোরআন খতম করতেন। (তাহজিবুল কামাল: ২/৯৮৩)

রবী’ বিন সুলাইমান বলেন, শাফেয়ি রমজান মাসে ৬০বার কোরআন খতম করতেন। (আস সিয়ার: ১০/৩৬)

কাসেম বিন হাফেজ ইবনে আসাকির বলেন, আমার পিতা নিয়মিত জামাতে নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াত করতেন। প্রতি শুক্রবারে কোরআন খতম করতেন। রমজান মাসে প্রতিদিন খতম করতেন। (আস সিয়ার: ২০/৫৬২)

এখানে উল্লেখ্য, ব্যক্তি বিশেষের ভিন্নতার প্রেক্ষিতে এর বিধানও ভিন্ন হবে। যে ব্যক্তি তার সূক্ষ্ম চিন্তা দিয়ে খুঁটিনাটি বিষয় উদঘাটন করতে সক্ষম, সে ব্যক্তি শুধু ততটুকু পড়বেন, যতটুকু পড়ে তিনি এটি ভালভাবে বুঝে নিতে পারেন। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি ইলম বিতরণে অথবা দ্বীনের অন্য কোনো বিশেষ দায়িত্বে অথবা মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত রয়েছেন তিনিও। সেক্ষেত্রে তিনি ততটুকু পড়বেন, যতটুকু পড়তে তার দায়িত্ব অবহেলা না হয়। আর যদি ব্যক্তি এ শ্রেণির কেউ না হন, তাহলে তিনি যত বেশি পড়তে পারেন তত বেশি পড়বেন; তবে যেন বিরক্তি আসার পর্যায়ে না পৌঁছে। (আত তিবয়ান, পৃষ্ঠা-৭৬)

শাইখ উসাইমিন বলেন, রমজান মাসে রোজাদারের জন্য কোরআন খতম করা ফরজ নয়। তবে ব্যক্তির উচিত রমজানে বেশি বেশি কোরআন পড়া। এটাই ছিল রাসুলের আদর্শ। গোটা রমজান মাসে জিব্রাইল (আ.) নবী (স.)-এর সাথে কোরআন পাঠ করতেন। (মাজমুউ ফতোয়া, ইবনে উসাইমিন:২০/৫১৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র রমজানে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত, চর্চা ও কোরআন খতম করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর