বুধবার, ২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

নবীজির দেখা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জায়গা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

হজরত ওসমান (রা.) যখন কোনো কবরের কাছে দাঁড়াতেন, কেঁদে দিতেন, তাঁর দাড়ি ভিজে যেত। একদা তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো- জান্নাত ও জাহান্নামের কথা স্মরণ হলে আপনি কাঁদেন না। আর আপনি এ জায়গায় (কবরস্থানে) দাঁড়িয়ে কাঁদছেন? তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আখেরাতের মঞ্জিলসমূহের মধ্যে কবর হলো প্রথম মঞ্জিল। কেউ যদি এ মঞ্জিলে মুক্তি পেয়ে যায়, তাহলে পরের মঞ্জিলগুলো অতিক্রম করা তার জন্য সহজসাধ্য হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি এ মঞ্জিলে মুক্তি লাভ করতে পারলো না, তার জন্য পরবর্তী মঞ্জিলগুলো আরও কঠিন হয়ে পড়ে। অতঃপর তিনি (ওসমান রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) এটাও বলেছেন, কবর থেকে বেশি কঠিন কোনো ভয়ঙ্কর জায়গা আমি কখনো দেখিনি। (মেশকাত: ১৩২)

হাদিস অনুযায়ী, নবীজির দেখা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জায়গা হলো কবর। মহানবী (স.)-কে আল্লাহ তাআলা মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরের অনেক রহস্য দেখাতেন। তন্মধ্যে কবর জগতের অবস্থাও বিদ্যমান। কবরে কার কী অবস্থা হয়, তার উল্লেখ রয়েছে নবীজির বিভিন্ন হাদিসে। 


বিজ্ঞাপন


মৃত্যুর পর থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময় হচ্ছে কবরের জগত বা আলমে বরজখ। ‘কবরে ফেরেশতাদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ভিত্তিতে জাহান্নামের গর্ত কিংবা জান্নাতের টুকরোয় পরিণত হবে কবর।’ (তাবিয়াতুল হায়াত ফিল কবর; আল-ইসলাম সুওয়ালুন ওয়া জাওয়াব: ০৪-১১-২০১৮)

কবর আজাবের কারণ
১. পরনিন্দা
২. প্রস্রাব থেকে পবিত্র না হওয়া
৩.অন্যের দোষ খোঁজা
৪. অন্যের সম্পদ হরণ এবং প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা
৫. ধোঁকাবাজি ও প্রতারণা 
৬. কোরআন-হাদিস অস্বীকার করা
৭. কোরআন তেলাওয়াত বা অধ্যয়ন না করা
৮. ফরজ নামাজ না পড়ে ইচ্ছাকৃত ঘুমানো
৯. মিথ্যা বলা
১০. সুদ খাওয়া ও 
১১. জেনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া। 
কোরআন-হাদিসের আলোকে এগুলোই কবর আজাবের অন্যতম কারণ। (ড. আবদুল্লাহ ইবনে হামুদ আল-ফারিহ; মিন আসবাবি আজাবিল কাবরি মাআদ দলিল, শাবকাতুল আলুকাহ: ০৪-১১-২০১৮)

আরও পড়ুন: যে গুনাহ না করলে ‘আল্লাহর ক্ষমা’ আপনার অধিকার

কবর আজাব থেকে মুক্তির উপায়
কবর আজাব থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রথমত কবর আজাবের উল্লেখিত গুনাহগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। পাশাপাশি অধিক হারে মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে হবে। কেননা মৃত্যুর স্মরণ গুনাহ থেকে বাঁচতে সহায়ক এবং তওবা করতে উৎসাহী করে, নেক আমলে উদ্বুদ্ধ করে, পরকালের ব্যাপারে ভীতি সঞ্চার করে এবং ঈমান-বিশ্বাসে সঞ্জীবিত করে। এছাড়াও তাওহিদ-বিশ্বাস, তাকওয়ায় অটলতা, আল্লাহর রাস্তায় গমন ও শাহাদাত বরণ, ইসলামি রাষ্ট্রের পাহারা দেওয়া, নিয়মিত সুরা মুলক পাঠ এবং সময়োপযোগী আমল-ইবাদত ইত্যাদি কবর আজাব থেকে রক্ষা করে। (ড. খালিদ রাতিব, আল-আসবাব আল-মুনজিয়া মিন আজাবিল কবর; শাবকাতুল আলুকাহ: ০৪-১১-২০১৮)


বিজ্ঞাপন


মোদ্দাকথা, আল্লাহর ওপর ঈমান, তাঁকে ভয় করা, তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা, দান-সদকা, দোয়া, কোরআনকে ধারণ এবং তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমেই কবর আজাব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব এবং এসব আমলই মূলত পরকালীন সফলতার সবচেয়ে বড় উপায়। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা বলে আমাদের রব আল্লাহ, অতঃপর এর ওপর দৃঢ় থাকে তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা আহকাফ: ১৩)

আরও পড়ুন: কবরে যাদেরকে প্রশ্ন করা হবে না

কবর আজাব থেকে মুক্তির দোয়া
 اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নামা, ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল কবরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জালি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জাহান্নামের আজাব থেকে আশ্রয় চাই, কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই মাসিহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং আশ্রয় চাই জীবন-মরণের বিপদাপদ থেকে।’ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (স.) এই দোয়াটি এমনভাবে শেখাতেন, যেভাবে তাদের কোরআনের সুরা শেখাতেন। (আবু দাউদ: ১৫৪২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন সুন্নাহ নির্দেশিত পবিত্র ও সরল জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। কবর আজাব থেকে মুক্তি দিয়ে আমাদের সবাইকে তিনি জান্নাত নসিব করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন