রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

অবশেষে ব্যাংককে বসছেন ইউনূস-মোদি, গলতে পারে সম্পর্কের বরফ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

অবশেষে ব্যাংককে বসছেন ইউনূস-মোদি, গলতে পারে সম্পর্কের বরফ

নানা জল্পনার পর অবশেষে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে দিল্লির সবুজ সংকেত পেয়েছে ঢাকা। এই বৈঠকের মাধ্যমে গত ৫ আগস্টের পর থেকে ঢাকা-দিল্লির মধ্যে সম্পর্কের যে বরফ জমেছে তা অনেকটাই গলতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

বুধবার (২ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসসের খবরে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের (সিএও) একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।


বিজ্ঞাপন


এদিকে কূটনৈতিক একটি সূত্র জানিয়েছে, ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকের ইচ্ছার কথা জানিয়ে দিল্লিকে চিঠি পাঠিয়েছিল ঢাকা। ওই চিঠির প্রতিউত্তর এসেছে দি‌ল্লি থেকে। সেখানে বৈঠকের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। আগামী শুক্রবার বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে এই বৈঠকটি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে দুপুরে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট ও সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলিসংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান এই দুই নেতার মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেন।

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে এই বৈঠক (দুই দেশের নেতাদের মধ্যে) আয়োজনের অনুরোধ করেছি... এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে’।

আরও পড়ুন

ড. ইউনূসকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মোদির চিঠি

এক প্রশ্নের জবাবে ড. খলিলুর বলেন, বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নেতারা সংস্থাটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করবেন, তাই অধ্যাপক ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠক হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

খলিলুর রহমান বলেন, ‘এই বৈঠক নিয়ে আমাদের আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।’

একই দিন ব্যাংককে অবস্থানরত পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি হবে বলে তারা আশা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে একটি অনুরোধ করা হয়েছে। আমরা অবশ্যই আশা রাখছি, এই বৈঠক হবে।’

DD

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয় গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি ভারত। ড. ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পরে প্রায় আট মাস পেরিয়ে গেলেও মোদির সঙ্গে তাঁর মুখোমুখি আলোচনা হয়নি। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ অধিবেশন চলাকালে নিউইয়র্কে দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি।

এবার বিমসটেক সম্মেলনে ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠক হতে পারে সেই গুঞ্জন অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। তবে ভারতের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছিল না। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, নরেন্দ্র মোদির এই সফরে দ্বিপাক্ষিক কোনো বৈঠক হবে না।

আরও পড়ুন

মার্চে ভারত থেকে ছড়ানো হয়েছে ২৬টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য

তবে শেষ পর্যন্ত প্রতিবেশী দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে এই বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন দুই দেশের কূটনীতিকরাই। তারা বলছেন, এই বৈঠকের ফলে সম্পর্কের বরফ অনেকটা গলে যেতে পারে। গত আট মাস ধরে সম্পর্কের যে টানাপোড়েন চলছে তা অনেকটা কমে আসতে পারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরীর মতে, উপদেষ্টা বা প্রধান উপদেষ্টা বা প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হলে সম্পর্কের বরফ গলতে পারে৷ স্বাভাবিক হওয়ার পথ তৈরি হতে পারে৷ তবে এর চেয়েও বড় বিষয় হলো ভারত যে চোখে বাংলাদেশকে দেখে, যেভাবে ট্রিট করে– এটা তাদের বদলাতে হবে৷ পরিবর্তনটা মেনে নিতে হবে৷ আন্তরিক হতে হবে৷ বাংলাদেশকে তারা ছোট চোখে দেখে৷ সেটা হলে তো হবে না৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, দুই দেশের মন্ত্রী বা শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হলে সম্পর্কের বরফ গলতে পারে৷ কিন্তু তাতেও আমি মনে করি সময় লাগবে৷ কারণ সম্পর্কের দূরত্ব অনেক বেড়েছে৷ সবার আগে আমি মনে করি দুই দেশের মিডিয়াকেই তাদের লাগাম টানতে হবে৷ বিশেষ করে ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার করছে৷ বাংলাদেশেও যে একদম হচ্ছে না তা কিন্তু নয়৷ তবে ভারতের তুলনায় অনেক কম৷

জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর