জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে জুলাই আন্দোলনে নিহত পরিবারের সদস্যরাও এসেছেন। তারা সমাবেশ থেকে নির্বাচনের আগেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা জুলাই সনদ ঘোষণার দাবিও জানিয়েছেন।
শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশে জুলাই শহীদদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য বক্তব্যে এই দাবি জানান।
বিজ্ঞাপন
সমাবেশে বক্তব্য দেন রংপুরের শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী। তিনি বলেন, ১৬ জুলাই যখন আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে পুলিশের সামনে জীবন দিয়েছিল, যে কারণে জীবন দিয়েছিল, সেই কারণের বাস্তবতা কি আমরা আজ পেয়েছি? যদি সেই শহীদ ভাইয়ের বাস্তবতা আমরা না পাই তবে এই বাস্তবতা আমরা ফেরত চাই। না হলে আমরা আমাদের শহীদ ভাইদের ফেরত চাই। চব্বিশের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান শহীদ ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে আজকের বাংলাদেশ পেয়েছি।

রমজান আলী বলেন, আমরা গত ১৭ বছর কি এমন সমাবেশ করতে পেরেছি? যদি না পেরে থাকি তবে আমাদের ভাইয়ের অধিকার, সেই অধিকার আমরা ফেরত চাই। যদি ফিরিয়ে না পাই, তাহলে আমাদের ভাইদের ফিরিয়ে দেন।
আবু সাঈদের ভাই বলেন, আজ দীর্ঘ এক বছর পেরিয়ে গেল, কিন্তু এই বাংলার মাটিতে আমরা একজন শহীদ ভাইয়ের হত্যার বিচারও পাইনি। আমাদের শহীদ ভাইদের হত্যার বিচারের দরকার আছে কি নাই? আমি মনে করি, নির্বাচনের আগে এই শহীদ ভাইদের হত্যার বিচারের রায় প্রয়োজন। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে যে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদীরা ঘাঁপটি মেরে আছে, তারা পাঁয়তারা করছে। ফ্যাসিবাদী দোসরদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের গ্রেফতার করতে হবে। বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
জুলাই শহীদ আলভির বাবা আবুল হাসান বলেন, আমার ছেলে শাহরিয়ার হাসান আলভি এই দেশের জন্য প্রাণ দিলো। কিন্তু এক বছরেও তার হত্যাকারীদের বিচার শুরু হলো না। বিচার নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। আপনারা বিচার নিয়ে আমাদের সঙ্গে টালবাহানা করবেন না।
আবেগ আর বেদনার আবহে তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনারা জুলাই মাসের মধ্যেই ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করুন। দুই হাজার মায়ের বুক খালি হয়েছে, আর কতদিন বিচারহীনতা চলবে?

আবুল হাসান বলেন, গত বছরের ৪ আগস্ট মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয় আমার ছেলে। আজ এক বছর পেরিয়ে গেল অথচ আমরা এখনো বিচারের ন্যূনতম আলোকরেখাও দেখতে পাচ্ছি না। হত্যাকাণ্ডের মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করে নি। যারা হাসিনার আমলে পুলিশের চাকরিতে ছিল। তারা এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। তারা কীভাবে খুনিদের ধরবে?
তিনি বলেন, পুলিশকে বললে শুধু একটাই উত্তর। যাচ্ছি, যাবো। এ কেমন ব্যবস্থা? আমাদের সন্তানরা শহীদ হলো, আর আপনারা আমাদের সঙ্গে টালবাহানা করছেন!
বুয়েটে ছাত্রলীগের নৃশংস নির্যাতনে শহীদ আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ জানান, এখনো তিনি তার ছেলের হত্যার বিচার পাননি। তিনি বলেন, ৬ বছর হয়ে গেছে। ছেলে হত্যার বিচার এখনো পাইনি। আমি চাই, দ্রুত যেন আমার ছেলে হত্যার বিচার করা হয়।
আবরার ফাহাদের বাবা বলেন, দেশের পক্ষে কথা বলার জন্য নির্মমভাবে নির্যাতন করে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। সেই বিচার এখনো হয়নি।

এর আগে সাত দফা দাবিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুপুর দুইটায় কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। তবে সমাবেশের কার্যক্রম সকাল থেকেই চলছে। সারাদেশে থেকে লাখ লাখ নেতাকর্মী এই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
এমআইকে/জেবি













































