জীবনের গতিপথ মৌলিক অধিকারের সড়ক খোঁজে। যে পথে গিয়ে মানুষ তার অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা পায়। এদিকে মানুষ তখনই নাগরিক, যখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পেয়েও দেশের সংবিধান সম্পর্কে ধারণা নিতে পারার সক্ষমতায় থাকে। এর বাইরে মানুষের পরিচয় একজন জীবই কেবল।
রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমে রাজনীতিকেরা জানান দেয়, তারা মানুষের জন্য কী কী করবে, নাগরিক অধিকার প্রশ্নে কতটুকু কী করতে পারবে। কিন্তু, দেশের কিছু বামধারার প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে জনগণের জন্য বিরোধী শিবিরের হয়েও কোনো কার্যকর মত অন্য কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী রাখতে পারছে না। একমাত্র টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনস্বার্থে যা যা করতে পারছে বা করতে চায়, তুলনামূলক বিচার করতে চাইলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো তাদের থেকে বা আমাদের থেকে যোজন যোজন পিছিয়ে আছে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কথাই ধরা যাক। তাদের রাজনীতি কী, তা বোঝা দুষ্কর। গেল এক যুগে বাংলাদেশের মানুষের জন্য তারা কী কী করতে চায়, তা তুলে ধরতে পারেনি। লোক দেখানো কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক অনুষ্ঠান কালেভদ্রে দুই একবার করলেও সেটার কোনো ফলোআপ নেই। মুখে সারাক্ষণ সমালোচনা আর সরকারের সমালোচনা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সেদিন ভারত সফর গেলেন। বিএনপি যদি সত্যিকারের রাজনৈতিক দল হতো, তারা তো পারত ওই সময়ে তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়ন চেয়ে কিংবা একান্নটি অভিন্ন নদীর সমাধান দাবি করে লংমার্চের মতো কর্মসূচি দিতে! এতে করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বলতে পারত, দেখুন আমাদের দেশের অপরাপর রাজনৈতিক শক্তিগুলোও মাঠে নেমেছে।
কিন্তু, বিএনপি সেই ২০১৪ সালে একবার প্রহসনের লংমার্চ করেছিল, এই ইস্যু নিয়ে। তাও করত না, আনু মুহাম্মদেরা সে সময়ে নিজেরা করছিলেন বলে, অস্তিত্ব সংকটে পড়ে এই বিএনপি তিস্তামুখী হয়েছিল। কিন্তু, এরপর? তারা আর কোনো ওই কর্মসূচির ধারাবাহিকতা রক্ষা করেনি। ফলত বিএনপি কিন্তু কোনোভাবেই রাজনৈতিক শক্তি হয়ে বিচরণ করছে না, তারা রাজনৈতিক অপশক্তির মতো করে কাজ করছে।
রাজধানী ঢাকা শহর। এমনিতেই এই নগরের প্রতিটি দেয়াল, ইট কিংবা স্থাপনারগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকার আমার অভ্যাস আছে। আমার সব সময় মনে হয়, এই স্থাপনাটা অন্য জায়গায় করলে ভালো হয়, অন্যটার ডিজাইন খুব সুন্দর হয়েছে-এমন। প্রকৃতিময় করে রাজশাহীর মতো করে প্রাণের শহরকে সবুজ ঢাকা করতে ইচ্ছে করে। পেশাগত ও সাংসারিক জীবনকে মোকাবিলা করতে আমার ঢাকা-দুবাই যাতায়াতটাও বেশি। বাসার উদ্দেশে ঢাকার এয়ারপোর্টে নামলে দেশের জন্য ভালো লাগে, কিন্তু মনও খারাপ হয়। কারণ, বিদেশি এয়ারপোর্টগুলোর মতো কেন আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে পারছি না? এত দেরি হচ্ছে কেন- নানা ধরনের প্রশ্ন মাথায় ফিরে।
বিজ্ঞাপন
রাস্তায় মানুষগুলো নাগরিকের মতো করে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করে না, সুনাগরিক হতে চায় না, যত্রতত্র রাস্তার মাঝখান দিয়ে অপর প্রান্তে চলে যায়। যেখানে সেখানে সিগারেটের ফিল্টার ফেলে দিচ্ছে, পান খেয়ে থুথু ফেলছে। মোদ্দাকথা, সচেতনতার অভাব। উপরন্ত, যানজট তো রয়েছেই।
আওয়ামী লীগ ঢাকা থেকে শুরু করে সারাদেশে যোগাযোগব্যবস্থায় সড়ক নির্মাণ, সড়ক সংস্কার, ফ্লাইওভার, সেতু, মেট্রোরেলের মতো ব্যবস্থাকে পরিচিত করালেও আমরা সাধারণ মানুষদের নাগরিক হিসেবে তৈরি করতে পারছি না। এর দায় রাজনীতির সাথে যারা আমরা সংযুক্ত, তারাই। কাজেই আমি মনে করি, সকল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ এলাকায় জনসচেতনতায় কাজ করতে হবে। সময় দিতে হবে। অনেকেই বলেন, আমি যদি ঢাকা উত্তরের মেয়র হতাম, ঘুম কী তা আমি জানতাম না, জানতে দিতাম না। আসলে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হলে নিদ্রাহীন হয়েই নাগরিক তৈরি ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবনের সেরাটা দিতে পারতাম।
এখন তো আরও বড় শঙ্কা। শহরের সোন্দর্য নিয়ে চিন্তা করতে করতে দেখতে পাই, একশ্রেণির বিপথগামী তরুণ, যুবকেরা শলা পরামর্শ করছে। কী যেন করতে চায় তারা? খুব খেয়াল করলে দেখা যায় যে, জুমার নামাজ আদায়ের পর একটি পক্ষ মসজিদ থেকে বের হয়ে পরিবারের সকলকে নিয়ে দুপুরের আহার সারতে আগ্রহী নয়। তারা রাস্তার অলিগলিতে ঢুকে মিটিং করে! এই এদের পূর্বসূরিরাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘটিয়েছিল, এরা ২১ আগস্টের মতো আবারও আঘাত আনতে চায়। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও অতি সম্প্রতি আমাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এরা আঘাত আনবে।
খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, আওয়ামী লীগের চেয়ে উন্নত চিন্তায় পরিবেষ্টিত হতে পারলেই রাজনৈতিক কোনো শক্তি নির্বাচনের মাধ্যমে ফলাফল অনুকূলে নিতে পারবে। এর বাইরে অন্য কোনো পন্থায় অর্জিত হবে না। তাই বিএনপির মতো রাজনৈতিক অপশক্তিকে অনুরোধ করব, আপনারা রাজনীতির মূলধারায় ফিরে রাজনীতিতে ফিরে আসুন। অবাক হয়ে যাই, এক তরুণ নেতা ভিপি নুর সেদিন বলছেন চিৎকার করে, কেন আমেরিকা কর্তৃক নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা ব্যক্তিকে আইজিপি করতে হবে? মনে হলো, ছেলেটা বাংলাদেশের মানুষ নয়, আমেরিকার কথিত নাগরিক। আমি এই শ্রেণিভুক্ত রাজনীতিকদের বলবো, আপনাদের আগে নাগরিক হতে হবে, নিজেরা না হতে পারলে দেশের মানুষকে কীভাবে নাগরিক হিসেবে দাঁড় করাতে পারবেন?
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় আমি তাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে বলব, খুবই সতর্ক অবস্থানে থাকুন। আপনারা নিজেরাও চোখ কান খুলে পথচলাকে নির্ধারিত করুন। আপনাদের ওপর তারা আঘাত আনতে পারে। বিএনপির মতো অপশক্তির যন্ত্রণায় সামনের দিনে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন হলে, সামনে বাস আছে, তারা আগুন দিয়ে বাসটিকে নয়, মানুষকে পুড়িয়ে দিলো। মুন্সীগঞ্জের মৃত শাওনকে নিয়ে লাশের রাজনীতির পেছনেও বিএনপির কালো হাত থাকতে পারে বলে অনুমিত হয়। শহরের প্রাকৃতিক শোভায় সজ্জিত করব এমন মানসে যখন বিভোর থাকি, ঠিক তখন আশপাশ সাক্ষ্য দেয়, কারা যেন কী করতে চায়? ওরা কারা? এখনই মোকাবেলা করার সময় বলেও মনে করার সুযোগ রয়েছে।
লেখক: রাজনীতিক ও সমাজকর্মী