মিডিয়া সবসময় ‘টপ লাইন’ বা ‘হেডলাইন’ খোঁজে। সাক্ষাৎকার দাতার কাছ থেকে যখন সহজে কোনও প্রসঙ্গ বের করা যায় না তখন প্রেজেন্টার লিডিং প্রশ্নের আশ্রয় নেয়। অর্থাৎ সব কনটেক্সট সেট করে দিয়ে সাক্ষাৎকারদাতাকে এমন একটা জায়গায় আনা হয় যখন তিনি ‘হ্যাঁ’ বলেন। এতে সংবাদমাধ্যম ভালো হেডলাইন খুঁজে পায়। এটা ইন্টারভিউ করার পুরোনো কৌশল।
তুলসী গ্যাবার্ড ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন সেখানেও এ বিষয়টি ঘটেছে। এনডিটিভির প্রেজেন্টার বাংলাদেশ প্রসঙ্গ (ভুল তথ্য দিয়ে) টেনে জিজ্ঞেস করেছেন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন? তারা কি মনে করে না (বাংলাদেশে) স্থিতিশীলতা দরকার? জবাবে তুলসী গ্যাবার্ড বলেছেন - ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে খুব লম্বা সময় ধরে সেখানে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, ক্যাথলিক....’। প্রশ্নকর্তা মিস গ্যাবার্ডের মুখে উত্তর তুলে দিয়েছেন!
বিজ্ঞাপন
তাকে যদি প্রশ্ন করা হতো- বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের মুখে একটা সরকার পালিয়ে গেছে। এখন সেখানে যে পরিস্থিতি সেটা তুমি কিভাবে দেখ? প্রশ্ন এভাবে করা হলে উত্তর কেমন হতো? নিশ্চয়ই ভিন্ন হতো। তাছাড়া লক্ষ্য করুন, মিস গ্যাবার্ড বলেছেন, ‘লম্বা সময় যাবত’। এ কথার অর্থ কী? এটা কি আওয়ামী লীগের সময় থেকে শুরু করে? কারণ, বাংলাদেশের ইতিহাসে হিন্দুদের ওপর সবচেয়ে বড় তিনটি আক্রমণ হয়েছে আওয়ামী লীগের সময়। নাসিরনগর, রংপুর এবং কুমিল্লা-নোয়াখালী। একটা ঘটনারও বিচার হয়নি। লম্বা সময় মানে তো শুধু সাম্প্রতিক সাত মাস বোঝায় না।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে- বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মিস গ্যাবার্ড যে মন্তব্য করেছেন সেটা সংবাদমাধ্যমের সাথে সাক্ষাৎকারে। ভারতের স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে কী ধরনের আলাপ হয়েছে সেটি নিয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, এ বিষয়ে তারা কোনো যৌথ বিবৃতি কিংবা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেনি। সুতরাং বাংলাদেশ বিষয় নিয়ে সত্যিই সিরিয়াস কতটা আলোচনা হয়েছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
সংবাদমাধ্যমে মিস গ্যাবার্ডকে প্রশ্ন না করলে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ হয়তো আসতোই না। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের খবর নিয়ে বেশ আগ্রহ আছে। তাদের খবর নিয়ে তারা যতটা আলোচনা করে আমরাও ততটাই করি। তারা জানে বাংলাদেশের পাঠক/দর্শকরা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফলো করে। সেজন্য তারা সবসময় বাংলাদেশ ইস্যুকে সামনে আনে। এর পাশাপাশি তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তো আছেই।