বর্তমান বিশ্বে তামাক সেবনের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর বৃদ্ধি। তবে, এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তামাক কোম্পানিগুলোর নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, যা সত্য ও বাস্তবতার সাথে সম্পূর্ণ বিপরীত।
তামাক কোম্পানির বিভিন্ন বিষয়ে অপপ্রচার চালায়। তামাক কোম্পানিগুলোর প্রায়ই দাবি করে যে কর বৃদ্ধি তাদের ব্যবসার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, ফলে অর্থনৈতিক মন্দা ঘটবে এবং হাজারো কর্মসংস্থান বিপন্ন হবে। তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করে তামাক কোম্পানিগুলি দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। পক্ষান্তরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যে দেখা গেছে, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে তামাকজাত দ্রব্য থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোন অর্থবছরে রাজস্ব আদায় কমেনি। গত ১৮ বছরে তামাকজাত দ্রব্য থেকে রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১১ গুণ।
বিজ্ঞাপন
তামাক কোম্পানি নিজেদের পণ্যকে ভোক্তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ হিসেবে তুলে ধরে, বিশেষ করে ই-সিগারেটের ক্ষেত্রে এবং দাবি করে যে সরকারের হস্তক্ষেপ ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন করছে। তামাক কোম্পানিরা সতর্ক করে যে উচ্চ করের ফলে অবৈধ বাজার (চোরাচালান) বৃদ্ধি পাবে, যা সরকারের রাজস্ব কমাতে পারে ইত্যাদি। এছাড়া বাজেটের আগে ফেক নিউজের মাধ্যমে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে তামাক পণ্যের ওপর উচ্চমাত্রায় কর বৃদ্ধি স্বাস্থ্য খাতে বিরাট লাভ নিয়ে আসে। তামাক সেবনের ফলে সৃষ্ট অসুস্থতা এবং রোগের কারণে স্বাস্থ্য খরচ বেড়ে যায়। কর বৃদ্ধি স্বাস্থ্য সেবার চাপ কমায়। এটা প্রমাণিত যে, কর বৃদ্ধি সাধারণত তামাক সেবনের হার কমাতে সহায়ক হয়, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হয়।
উচ্চ করের ফলে সরকার অতিরিক্ত রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারে, যা বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য প্রকল্পে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। তামাক কোম্পানির অপপ্রচার সত্ত্বেও, বাস্তবতা হলো স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির জন্য কর বৃদ্ধি প্রয়োজনীয়। সরকারের উচিত সঠিক তথ্য জানা, সচেতনতা বাড়ানো এবং তামাক কোম্পানির অপপ্রচার মোকাবেলা করা, যাতে সমাজের স্বাস্থ্যের উন্নতি সম্ভব হয়। তামাক সেবন হ্রাস করে একটি সুস্থ সমাজ গঠন সম্ভব, যা দীর্ঘমেয়াদে সকলের জন্য লাভজনক।
লেখক: জনস্বাস্থ্য কর্মী