রোববার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

বত্রিশ নম্বরের ভবন বিনাশ ও কাদের সিদ্দিকীদের ক্রন্দন

অনিরুদ্ধ অনিকেত
প্রকাশিত: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

কাদের সিদ্দিকী যতটুকু না বীর মুক্তিযোদ্ধা তার থেকে বেশি গলাযোদ্ধা। অথবা বলা যেতে পারে কণ্ঠযোদ্ধা। তিনি বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমেই আয়-রোজগার করে থাকেন। ১৯৭১ সালের পূর্বে ও পরে তার পারিবারিক ইতিহাস, ঐতিহ্য, অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে সহজেই বোঝা যায়, তাদের পূর্বপুরুষদের আর্থিক অবস্থা উল্লেখ করার মতো ভালো ছিল না। কোনো রকম সংসার চালিয়ে নেওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা ছিল তাদের। এই কাদের সিদ্দিকী সাহেব ও তার অন্যান্য ভাইয়েরা টাঙ্গাইলে মূলত ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। চাঁদাবাজি, লুণ্ঠন, দখলবাজির মধ্য দিয়ে প্রভূত বিত্ত-বৈভবের মালিক হন। নিজের পিতাকে ভুলে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ বলে বলে যে পরিমাণ জিকির করেন তার লক্ষ ভাগের এক ভাগও আল্লাহর নাম নিয়ে জিকির করলে তার বেহেশত নসিব হয়ে যেত। কিন্তু কী আর করা! বেহেশত তো সবাই চায় না। কেউ কেউ চায় ধানমন্ডি ৩২। যেখান থেকে দেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালিত হতো। এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মূল হোতা এবং নেতৃত্বে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব।

বিচিত্র চিন্তাভাবনা ও পিতৃপরুষদের জন্মভিটা ভারতপন্থী এক রাজনৈতিক ছিলেন শেখ মুজিব। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ব্যাগ-বোস্কা বহন করা, ফরমায়েশ খাটা, বিড়ি, সিগারেট, চা নিয়ে এসে দেওয়া, আওয়ামী লীগের অফিস পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা ধুয়ে মুছে ঝাড়ু দেওয়া, এই সমস্ত কাজ করে শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের পদ পান। সেই পদকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে এবং ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সাথে হাত মিলিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ধীরে ধীরে ভারতীয় চিন্তা চেতনার নেতা হয়ে ওঠেন। দিল্লির দালালি তার অন্যতম ব্যবসা ছিল। তার পিতার ব্যবসা নিয়ে যদিও বেশ বিতর্ক রয়েছে। তারপরও শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের ব্যবসা সকলেই জানে। তিনি কীভাবে চাটুকারবৃত্তি করে ব্যক্তিত্ব খোয়ায়ে ভারতের সেবাদাস হয়ে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব স্থানে আসেন সেটা সবার জানান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পরে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ কাউকে আর পাত্তা দিতেন না। এমনকি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং ওই সময়ের এ কে ফজলুল হক, খাজা নাজিম উদ্দিনকেও তিনি অপমান অপদস্থ করতেন। এগুলো সবই সম্ভব হয়েছিল ভারতের সাথে হাত মেলানোয়। কারণ অন্য নেতারা ভারতের দাদাগিরি সহ্য করতে চাননি। এমনকি ভারতের একটি কথাও তারা মানতে চাননি, যে কারণে ভারত বিকল্প হিসেবে শেখ মুজিবকে তাদের স্বার্থে গড়ে তোলে।


বিজ্ঞাপন


পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে আলাদা করে বাংলাদেশকে শোষণের রাজধানীতে পরিণত করার অভিপ্রায় ছিল ভারতের। এমন মারাত্মক অভিপ্রায় বাস্তবায়ন সকলের হাত দিয়ে করা সম্ভব না। ভারত বারবার খুঁজেছে এমন একজন নেতা যে বাইরে মুখে মুখে বাংলাদেশের জন্য কাঁদবে আর অন্তরে ভারতের জন্য অপরিসীম ভালোবাসা থাকবে। আরও সহজ করে বলা যায়, দিনের বেলা আওয়ামী লীগ করবে, বাংলাদেশের জন্য কথা বলবে, আর রাতের বেলা ভারতের আদর্শে একীভূত হবে। এই ধরনের আদর্শই ছিল মুজিবুর রহমান সাহেবের একমাত্র আদর্শ। কাদের সিদ্দিকীর মতো যারা শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে প্রবলভাবে ভালোবাসেন তারা সকলেই ভারতের দাদাবাবুদের সন্তুষ্টির জন্য, খুশির জন্য ও ভালোবাসার জন্য সবকিছু করতে পারেন। 

কাদের সিদ্দিকী সাহেব অভাব অনটনের ভেতর মানুষ হলেও এখন তিনি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। এটা তিনি কীভাবে অর্জন করলেন তা দেখা প্রয়োজন। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং দখলবাজির মধ্য দিয়েই তার এই অর্জন। এখনো পর্যন্ত তিনি মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে শত শত কোটি টাকার সরকারি সম্পদ দখল করে রেখেছেন। আজও মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ নিয়ে ব্যবসায় লিপ্ত কাদের সিদ্দিকী। যদিও তিনি বিভিন্ন সময়ে বড় বড় কথাও বলেন। জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিবাদী হাসিনার বুলেটের আঘাতে যখন রক্ত ঝরেছে, হাজার হাজার ছাত্র জনতা শহীদ হয়েছে, তখন কাদের সিদ্দিকীকে তো রাজপথে দেখা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী তরুণ শিক্ষার্থীরা তারা কি রাজাকার? তারা তো এদেশের সূর্যসন্তান। তারা দিল্লির দাসত্ব মানতে চায় না। এটাই কি তাদের অপরাধ? তা না হলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী সাহেব কেন এই ন্যায্য দাবির জন্য রাজপথে নামলেন না?

BB

অবশ্য তা তিনি পারবেন না। কারণ তিনি শেখ মুজিবের সন্তান। শেখ মুজিবের এই সমস্ত অবৈধ সন্তানরা বাংলাদেশকে লুটেপুটে খাচ্ছে। ৩২-এর জন্য মায়া কান্নায় দিনরাত কাটে তাদের। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, সাবেক সেনাপ্রধান, বাংলাদেশের অন্যতম সফল রাষ্ট্রনায়ক, সজ্জন ও ন্যায়ের প্রতীক রাষ্ট্রনায়ক, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের স্ত্রী, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যখন ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা, তখন তো এইসব বঙ্গবীরেরা কাঁদেননি। তখন তো বঙ্গবীর সিদ্দিকীদের ফ্যান কান্না কানতে দেখা যায়নি। এখন কেন তিনি কাঁদতে এসেছেন? কারণ ভারত থেকে তাকে ফোন করা হয়েছে, সে কারণেই তিনি এসেছেন। কারণ তিনি তো আল্লাহর কথা শোনেন না, যতটা ভগবান ভারতের কথা শোনেন।  বাংলাদেশের বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ সাহেব সপরিবারে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে থাকতেন। রক্ষী বাহিনী তাদের নির্যাতন করে বাড়ি থেকে রাস্তায় নামিয়ে দেয়। হুমায়ূন আহমেদ তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক। তিনি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কাছে সহযোগিতা চাইলে, কীভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে হুমায়ূন আহমেদকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তা তাঁর ‘দেয়াল’ উপন্যাসে লিখেছেন এভাবে-


বিজ্ঞাপন


‘আমাদের বাড়ি থেকে সামান্য দূরে পরিত্যক্ত বিশাল এক তিনতলা বাড়িতে দলবল নিয়ে থাকতেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। রক্ষীবাহিনী আমাদের রাস্তায় বের করে দেওয়ার পর সাহায্যের আশায় আমি তাঁর কাছেও গিয়েছিলাম। তিনি অতি তুচ্ছ বিষয়ে তাঁকে বিরক্ত করায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। মহাবিপদে মানুষ খড়কুটো ধরে, আমি বঙ্গবীরকে ধরতে গিয়ে দেখি তিনি খড়কুটোর মতোই।’

কোন সম্মানী মানুষ বাস্তুচ্যুত হলে এবং এমনকি বঙ্গবীরের পিতা শেখ মুজিব কর্তৃক নির্যাতিত হলে, বঙ্গবীর সেখানে কোনো ভূমিকা রাখেন না। এটা তার পুরাণো অভ্যাস। তিনি শুধু ধানমন্ডি ৩২ এ কাঁদতে যান। এখন তাই প্রয়োজন কাদের সিদ্দিকীর সহায়-সম্পত্তির খোঁজ করা। কারণ নিজেকে তিনি দাবি করেন বিরাট বীর মুক্তিযোদ্ধা অথচ বাংলাদেশকে ভারতের সেবাদাস বানাতে চান। এমন ভারতীয় রাজাকার এবং দালাল যারা আছেন তাদের বিচার হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে দেশে শান্তি আসবে না। মাঝে মাঝেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। মানুষ অশান্তির দাবানলে জ্বলবে, পুড়বে এবং মরবে।

লেখক: রাজনীতিক বিশ্লেষক

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন