রাজনীতিতে (মরণোত্তর) একুশে পদক- ২০২৩ এর জন্য মনোনীত হয়েছেন রাজবাড়ী জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত আলী হোসেন পনিরের বাবা ও গোপালগঞ্জ ২ আসনের সাবেক এমপি প্রয়াত আকতার উদ্দিন মিয়া।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও ২টি প্রতিষ্ঠানকে সরকার এ বছর একুশে পদকের জন্য মনোনীত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
এই ১৯ জন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে গোপালগঞ্জ ২ আসনের সাবেক এমপি প্রয়াত আকতার উদ্দিন মিয়ার নাম রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রাজবাড়ীর যুবলীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত আলী হোসেন পনিরের সহধর্মিনী ও গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি প্রয়াত আকতার উদ্দিন মিয়ার পুত্রবধু রাজবাড়ী টাউন মক্তব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুন কক্স বলেন, আমি আকতার উদ্দিন মিয়ার পুত্রবধূ এটা মনে করতেই গর্ববোধ করি। কারণ আমার শ্বশুর ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সহচর ও কাছের মানুষ। এছাড়াও তার তিন পুত্রের মধ্যে সেজো পুত্রের স্ত্রী হওয়ার সুবাদে কিছু কিছু ঘটনা আমি পরিবার থেকে জেনেছি। পরিবার ও তার সংস্পর্শে থাকা মুরুব্বিদের মুখে শুনেছি সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে আমার শ্বশুরসহ পার্লামেন্টের সকল এমপিদের টিএ বিল জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। তিনি মাত্র ৩৬ টাকার টিএ বিল জমা দেন। যেখানে অন্যরা ১ হাজার টাকার নিচে কেউ টিএ বিলের ভাউচার জমা দেননি। বিষয়টি জানতে পেরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তাকে কাছে ডেকে সকলের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে আকতার ভাইয়ের মতো সোনার মানুষ দরকার’। তিনি বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের একজন মানুষ ও সৎ রাজনীতিবিদ ছিলেন।
তিনি বলেন, আমার শ্বশুর একজন এমপি হওয়া সত্বেও অঢেল সম্পদ রেখে না গেলেও তিনি তার সততা ও সত্যের মুকুট আমাদের জন্য রেখে গেছেন। তিনি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তার উপর অর্পিত সরকারি দায়িত্ব পালন ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার স্বীকৃতিস্বরূপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান ২০২৩ সালের রাজনীতিতে (মরণোত্তর) একুশে পদক প্রদানের জন্য মনোনীত করেছেন। যা আমাদের পরিবারের কাছে রাজমুকুট।
বিজ্ঞাপন
আর সেই জন্য আমি ও আমার পরিবাবার খুব খুশি। এই সম্মান প্রদানের জন্য আমরা আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশসহ তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আমরা যেন ভবিষ্যতে তার এই সম্মান ও মর্যাদাকে ধরে রাখতে পারি।
উল্লেখ্য যে, আখতার উদ্দিন মিয়া ১৯২০ সালে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার ঘোনাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৮ সালে এন্ট্রাস পরীক্ষায় পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতায় যান এবং ব্রিটিশ আর্মিতে যোগ দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি দেশে ফিরে মোক্তারি পাস করে গোপালগঞ্জ কোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। এ সময়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর সংস্পর্শে আসেন এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন।
তিনি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলনের সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-১ কাশিয়ানী আসন থেকে আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭১ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি স্থানীয় জনগণকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য সংগঠিত করেন এবং এপ্রিল মাসে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ভারত যেয়ে এবং কাদিহাটি ইউথ রিসিপশন ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্বগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ থেকে আগত যুবকদের ক্যাম্পে দেখভাল ও যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য তিনি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে ও জনগণের পুনর্বাসনে আত্মনিয়োগ করেন।
এ সময়ে তিনি ভারত থেকে ফিরে আসা হিন্দু সম্প্রদায়ের দখলকৃত সম্পত্তি ও বাড়িঘর পুনরুদ্ধার এবং তাদের পুনর্বাসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দেশে যখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি বিপন্ন এবং দলের নেতাকর্মীরা দিশাহারা তখন তিনি গোপালগঞ্জের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে সাহসী ভূমিকা পালন করেন এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জের নেতাকর্মীদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন।
১৯৭৯ সালে তিনি পুনরায় কাশিয়ানী আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সংসদ ও সংসদের বাইরের আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরলে তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করেন। তৎকালীন স্বৈরশাসক গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের আসন কমানোর লক্ষে কাশিয়ানী তথা গোপালগঞ্জ-১ সংসদীয় আসনকে বিলুপ্ত করে গোপালগঞ্জ সদর ও মুকসুদপুর আসনের সঙ্গে যুক্ত করে দেন। এতে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হন এবং সংসদীয় আসন ফিরিয়ে আনার জন্য এলাকার জনগণকে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করতে থাকেন এবং আন্দোলন চলমান অবস্থায় ১৯৮৪ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি কাশিয়ানী হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
প্রতিনিধি/এসএস