শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

দিলীপের সুখের সংসার গেল রাক্ষুসী ঘাঘটের পেটে

তোফায়েল হোসেন জাকির
প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০২২, ০৯:০৫ এএম

শেয়ার করুন:

দিলীপের সুখের সংসার গেল রাক্ষুসী ঘাঘটের পেটে

মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে দিলীপ চন্দ্র সরকার। পৈতৃক সূত্রে পেয়েছিলেন ৪ বিঘা জমি। এসব জমির ফসল উৎপাদন করে সুখেই চলছিল তার সংসার। এরই মধ্যে সেই সংসারে আঘাত হেনেছে ঘাঘট নদ। রাক্ষসী এই নদটি গিলে খেয়েছে দিলীপের সংসার। ইতোপূর্বে আড়াই বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হলেও চলতি বর্ষায় বসতভিটে ও ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব এখন তিনি।  

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সকালে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের ঘাঘট নদের কোলঘেষা হামিন্দপুর (কইপাড়া) গ্রামের দেখা গেছে ভাঙনের ভয়াবহ দৃশ্য। এই ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে নদীপারে বসে অঝরে কাঁদছিলেন দিলীপ চন্দ্র।


বিজ্ঞাপন


জানা যায়, ওই গ্রামের মৃত কৈলাশ চন্দ্র সরকারের ছেলে দিলীপ চন্দ্র সরকার (৪৫)। যুবক বয়সে হারিয়েছেন তার বাবাকে। সহায় সম্পদ হিসেবে পেয়েছিলেন ৪ বিঘা জমি। এ দিয়ে শুরু করেছিলেন নতুন জীবন। কৃষি ফসল উৎপাদন করে সংসার সাজানোর স্বপ্ন দেখেন। দীর্ঘদিন মাঠঘাটে নিরলস পরিশ্রমের ধারাবাহিকতায় সেই স্বপ্নের বাস্তবরূপ দিয়েছিলেন তিনি। বিধিবাম! ওইস্থানে ঘাঘটের অব্যাহত ভাঙন গত ৪ বছরে বিলীন হয়েছে তার আড়াই বিঘা আবাদি জমি। এরপর থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সংসারে শুরু হয় টানাপোড়েন। বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে ঢাকা শহরে পাড়ি জমায় দিলীপ চন্দ্র। সেখানে একটি বিল্ডিংয়ে কেয়ার টেকারে চাকরি করে কোনমতে জীবিকা চলছিল পরিবারটির। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! গত কয়েকদিন আগে ঘাঘটের পেটে চলে গেছে বসতভিটেসহ তার ঘরবাড়ি। এখন পরিবার-পরিজনরা মাথা গোজার ঠাঁই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।

ভুক্তভোগী দিলীপ চন্দ্র সরকার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাপ-দাদার পাওয়া জায়গা জমি টুকু চলে গেছে নদীতে। ঘরবাড়িও বিলীন হয়েছে। আমি এখন সবকিছু হারিয়ে একেবারই নিঃস্ব।’

স্থানীয়রা জানান, শুধু দিলীপ চন্দ্রই নয়, হামিন্দরপুর (কইপাড়া) নামকস্থানে প্রায় ৬০০ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এখানকার রবিন্দ্র চন্দ্র সরকারের বাড়িসহ আরও বেশ কিছু পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। জরুরিভাবে এটি ঠেকানো না হলে যেন কোনো মুহূর্তে বিলীন হতে পারে ঘরবাড়ি, মন্দির ও মৎস্য পুকুর। একই সঙ্গে হুমকিতে রয়েছে সাদুল্লাপুর-নলডাঙ্গার প্রধান সড়কটিও। এছাড়া সাদুল্লাপুর উপজেলার রসুলপুরের মহিষবান্দি, নলডাঙ্গার শ্রীরামপুর, দামোদরপুরের খুনিয়াপাড়া, কুঠিরপাড়া, জামুডাঙ্গা, শালাইপুর ও কামারপাড়ার পুরান লক্ষীপুর এলাকার বেশকিছু স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব স্থানগুলোতে নদী ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্টদের নিকট দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, ভাঙন কবলিত ও ঝুঁকিতে থাকা স্থানগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


বিজ্ঞাপন


টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর