‘ভাইয়া, আমি ইকবাল। আমরা সুনামগঞ্জ থেকে রওনা দিয়েছিলাম ৩টার দিকে। আমরার নৌকা দুয়ারাবাজারের কাছাকাছি এসে নৌকা গাছের লগে বারি খাইসে। এখন নৌকাটা মোভ করছে না। আপনি প্লিজ আমাদের বাঁচান।’ -এমন আর্তনাদে একটি স্ক্রিনসট ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
মৌলভীবাজারের ছেলে ইকবাল মাজেদ। তারা দশজনের একটি দল গত বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যান। ভেবেছিলেন বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই ফিরতে পারবেন। কিন্তু বিধি বাম! সেই সুযোগ আর পাননি। আটকে পড়েন তারা।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, পাহাড়ি ঢল আর বিরামহীন বৃষ্টিতে হঠাৎ বন্যা দেখা দেওয়ায় শনিবার (১৮ জুন) বেলা ৩টায় এক ট্রলারে চড়ে তারা নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। প্রাথমিক গন্তব্য ছিলো সিলেট।
কিন্তু পথেই বাধে বিপত্তি! সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট যাওয়ার পথে দুয়ারাবাজার এলাকায় একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায় ট্রলারটি। এতে ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। ট্রলারে অবস্থান করা যাত্রীদের সবাই আটকা পড়েছিলেন। তাদের কেউ পর্যটক, কেউ ব্যবসায়ী, আবার কেউ ছিলেন সাধারণ মানুষ।
এ অবস্থায় ট্রলারে থাকা যাত্রীদের সবাই বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন। ট্রলারে অবস্থান করা ইকবাল মাজেদ নামে এক যাত্রীর কাছ থেকে পাওয়া মেসেজের বরাতে এ খবর আরও জানা গেছে, ট্রলারটিতে শতাধিক যাত্রীদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৩৫ শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন।
যোগাযোগ মাধ্যমে ইকবালের মেসেজ ছড়িয়ে পড়লে যে যার মতো চেষ্টা করেন তাদের উদ্ধারে।
বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারের শহরের বাসিন্দা অমিত রায় ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ইকবাল মাজেদসহ তার বন্ধুরা শনিবার বিকেলে দুয়ারাবাজার এলাকায় আটকা পড়েন এই খবর পাই। সেখানের নেটওয়ার্ক দুর্বল থাকায় যোগাযোগে বেশ বেগ পেতে হয়। তাদের সাহস দেই। সাধ্যমতো চেষ্টা করি তাদের উদ্ধারের।’
স্থানীয় পরিবেশকর্মী রিপন দে। তিনিও ট্রলারে অবস্থান করা যাত্রীদের উদ্ধারে সক্রিয় ছিলেন। আলাপকালে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘একশ জনের অধিক মানুষ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। তাদের উদ্ধারে অনেকের ফোনে কল দিয়েছি, অনেককেই মেসেজ দিয়েছি। কোন লাভ হচ্ছিলো না। নিরাস হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আমার দেওয়া ম্যাসেজ সিন করেন পর্যটকদের উদ্ধারকাজের সমন্বয়কারীদের একজন জাহাজি দ্যা কিং অফ ট্যাঙ্গুয়ারের বিজয় কুমার ঘোষ। তিনি তখনই জানতে চান তাদের লোকশন। তারপর শুরু হয় উদ্ধার অভিযান।’
পর্যটকদের উদ্ধারকাজের সমন্বয়কারী বিজয় কুমার ঘোষ জানান, চার্জের কারণে ফোন অফ, রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফোন অন করি। দেখি বেশ কিছু মেসেজ। শ’খানেক ট্যুরিস্ট দুয়ারাবাজার এলাকায় আটকে আছেন তাদেরকে উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের লোকেশান ও নম্বর পেলাম রিপন দের কাছ থেকে। নেটওয়ার্ক শার্ট ডাউন, বিদ্যুৎ নাই, কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না। অবশেষে অনেক খোঁজাখোঁজি করে দুয়ারাবাজার প্রেসক্লাবের কয়েকজনের নম্বর পেলাম। শুরু করলাম তাদের কল দেওয়া। প্রথম ১৩টা অফ ১৪ নাম্বার জনেরটা খোলা। ওনার সঙ্গে কথা বললাম। ওনাকে ভিকটিমের নম্বর দিলে তিনি ওদের এবং মাঝির সঙ্গে কথা বলে তাদের নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করেন।
রিপন দে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘৫ ঘণ্টা চেষ্টা করে রাত ২টায় যখন সফলতার খবর পেলাম। তখন একটু ভরসা পেলাম যে, তারা নিরাপদ আছেন।’
অমিত রায় রোববার (১৯ জুন) সকালে উদ্ধারের খবর নিশ্চিত করে বলেন, ‘তারা এখন সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।’
উল্লেখ্য, চারদিন আগে মৌলভীবাজারের কয়েকজন শিক্ষার্থী সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে যান। হঠাৎ বন্যা দেখা দেওয়ায় সেখানে অন্যদের সঙ্গে তারাও আটকা পড়েন। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শনিবার দুপুরে একটি নৌযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করে সিলেটের উদ্দেশে পাঠানো হয়। বিকেলের দিকে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় নৌযানটি অচল হয়ে পড়ে।
টিবি