শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, শুরু হয়নি ত্রাণ বিতরণ

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২২ জুন ২০২২, ০১:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, শুরু হয়নি ত্রাণ বিতরণ

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি না বাড়লেও বাড়ছে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি। পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার কাজিপুর, চৌহালী, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুরের চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ফলে অবনতি হচ্ছে জেলার বন্যা পরিস্থিতি।

পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের মানুষ। বাধ্য হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অনেকে বাঁধ ও উঁচু জায়গায় নির্মাণাধীন ভবনে আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউ আবার রাস্তার ধারে ঝুপড়ি করে আছেন। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। তবে এখন পর্যন্ত বন্যা কবলিতদের পাশে দাঁড়ায়নি কোনো এনজিও ও জনপ্রতিনিধিরা।


বিজ্ঞাপন


গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকায় বুধবার (২২ জুন) সকালে শহর রক্ষা বাধ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জের গেজ রিডার হাসানুর রহমান এ তথ্য জানান।

shirajgang

যমুনা নদীর পানি না বাড়লেও বাড়ছে ইছামতি, ফুলঝোড়, করতোয়া, বড়াল ও চলনবিলের পানি। জেলার এসকল অভ্যন্তরীন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলার পাঁচটি উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের অন্তত ২০ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এসকল এলাকার বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বানভাসিরা। গবাদিপশু ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন দূরের কোনও আত্মীয়ের বাড়ি বা নিরাপদ স্থানে। তবে নিজেরা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটালেও শিশু সন্তান ও গবাদিপশুর খাবার জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। শুকনো জ্বালানি কাঠের অভাবে রান্নাও করা যাচ্ছে না। খোলা আকাশের নিচে খড়কুটা দিয়ে কোনোমতে রান্না করছেন।


বিজ্ঞাপন


ইতোমধ্যেই এসকল এলাকার ৬০৯২ হেক্টর জমির আউস ধান, পাট, তিল, কাউন, বাদামসহ উঠতি ফসল নষ্ট হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক। কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার শ্রমজীবীরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন অনেকেই। বন্যা কবলিত এলাকায় এখনো শুরু হয়নি সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ত্রাণ বিতরণ।

খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের গুনেরগাতী গ্রামের বন্যা কবলিত হায়দার আলী, খোরশেদ আলম ও জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বসতবাড়িগুলো তলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে গলাপানি। কোনও জিনিসপত্র বের করতে পারি নাই। কয়েকটা টিন খুলে এনে ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি।’

একই গ্রামের শামসুল হক ও রহমত আলী বলেন, ‘ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। যাওয়ার মতো কোনও জায়গা নাই। তাই ওয়াপদার ধারে কোনোমতে জীবনযাপন করছি। বৃষ্টির কারণে সময়মতো রান্নাও করতে পারি না। অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হচ্ছে। এখনও কোন ত্রাণ সাহায্য ও সহযোগিতা পাইনি।’

shirajgang

খোকশাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল হাসান জানান, বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দুর্গতদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তালিকা শেষে তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। সবসময় তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুকাতে রাব্বি জানান, বন্যা কবলিতদের দুঃখ ও কষ্ট নিরসনে ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে সভা করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যানদের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ত্রাণের বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ হাতে পেলে বানভাসিদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান জানান, বন্যার্তদের জন্য ইতোমধ্যেই ৯১১ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২০ লাখ টাকা এবং ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এগুলো বিতরণের জন্য নিজ নিজ এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা হাতে পেলে বিতরণ শুরু করা হবে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে আরও অন্তত তিন দিন। চৌহালী ও শাহজাদপুরের ভাঙনরোধে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতেও পানি বাড়ছে। এতে ধীরে ধীরে প্লাবিত হচ্ছে যমুনার চর ও নিম্নাচল। ফলে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে বন্যা ও ভাঙন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মদ জানান, জেলার ৫ উপজেলায় বন্যা কবলিতদের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইউএনওরা তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। তালিকা অনুযায়ী বন্যাকবলিতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হবে।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর