রংপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা চেষ্টা মামলায় গ্রেফতার লিপি খান ভরসাকে জাল দলিলে জমি আত্মসাত চেষ্টা মামলায় শ্যোন অ্যারেস্টের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) রংপুর মেট্রোপলিটন আমলি আদালত-১ এর বিচারক সোয়েবুর রহমান এই আদেশ দেন। এর আগে তাকে কড়া পুলিশি পাহারায় আদালতে তোলা হয়।
বিজ্ঞাপন
রংপুর মেট্রোপলিন আদালতের ইন্সপেক্টর জানান, আদালতে লিপি খান ভরসার বিরুদ্ধে তার শ্বশুর প্রয়াত সাবেক এমপি করিম উদ্দিন ভরসার নাম ব্যবহার করে রংপুর সদর সাব রেজিস্টারের সঙ্গে যোগসাজে অছিয়ত দলিল সম্পাদনের বিষয়ে শরিফুল ইসলাম ভরসার নামের একটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্টের আবেদন করেন বাদী পক্ষের আইনজীবী আফতাব উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম। ওই মামলাতে তিনি ১ নম্বর আসামি। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে জামিন না মঞ্জুর করে তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আদেশ দেন। জামিন শুনানির জন্য ২৭ মার্চ দিন ধার্য করেন।
শুনানিতে অংশ নেওয়া বাদী পক্ষে অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম জানান, রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছার) প্রয়াত এমপি করিম উদ্দিন ভরসা অসুস্থ ও মানসিক ভারসাম্যহীনতার সুযোগ নিয়ে জাল ও ভুয়া অছিয়ত নামা দলিল করে জমি আত্মসাৎ করে দখল নেওয়ার ঘটনায় লিপি খান ভরসা ও তার স্বামী সাইফুল উদ্দিন ভরসা, তৎকালীন রংপুর সদর সাবরেজিস্টার রামজীবন কুন্ড, দলিল লেখক মনিরুল ইসলাম এবং পলাশসহ ৬ জনের নামে ২০২২ সালে মামলা করেন শফিকুল ইসলাম ভরসা।
অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম আরও বলেন, ঘটনার সময় করিম উদ্দিন ভরসা বার্ধক্যজনিত কারণে বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন এবং সম্পূর্ণরূপে মানসিক শক্তি লোপ পায় তার। ওই অবস্থাতেই কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ২০২২ সালের ২৬ জুন ঢাকার এভার কেয়ার হসপিটালে ভর্তি হন তিনি। একই বছরের ৮ জুলাই লিপি খান ও সাইফুল উদ্দিন ভরসা জোরপূর্বক ছাড়পত্র নিয়ে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে লুকিয়ে রাখেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরলে পুণরায় সেই বছরের ১৪ জুলাই এভার কেয়ার হসপিটালে ভর্তি করান এবং ২৩ জুলাই কোভিডে আক্রান্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এরই মধ্যে লিপি খান তার স্বামী সাইফুল উদ্দিন ভরসাকে শনাক্তকারী বানিয়ে অন্য আসামিদের সহযোগিতায় করিম উদ্দিন ভরসার নাম ব্যবহার করে রংপুর সদর সাব রেজিস্টারের সঙ্গে যোগসাজসে কাউনিয়া উপজেলার ৬ একর ৯৮ দশমিক ৫ শতক জমি অছিয়ত নামা দলিল সম্পাদন করে নেন।
এরপর সাড়ে ৮ শতক জমি ভুয়া খাজনা খারিজ করে বিক্রি করে দেন লিপি খান। এঘটনায় মামলা হলে পুলিশ ব্যুরো পিবিআ ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই অছিয়ত নামা দলিলটিকে ভুয়া এবং করিম উদ্দিন ভরসার আঙ্গুলের ছাপ ও টিপ সইয়ের মিল নেই মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন আদালতে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের পর আদালত লিপিখানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলাটি এখনও বিচারাধীন রয়েছে। সেই মামলায় আদালতে জমি জালিয়াতি মামলার ওয়ারেন্ট কপি দাখিল করে শ্যোন অ্যারেন্টের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। সেই আবেদন বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, গত ১৬ মার্চ রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেফতার করা হয় লিপিখান ভরসাকে। তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে আহত বিএনপি নেতা মামুনুর রশিদ মামুনের করা হত্যা চেস্টা মামলার ১৭৯ নম্বর এজাহারভূক্ত আসামি। এর আগে ১৩ মার্চ লিপি খানের ম্যানেজার পলাশ হাসান বাদী হয়ে ওই মামলা থেকে লিপিখানের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী অমিত বণিক কর্তৃক উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সারের নামে ১০ লাখ চাঁদাদিাবির মামলা করেন। ওই মামলায় অমিত বণিককেও গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তা শিবলীকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে প্রত্যাহার করে সদর দপ্তরে নেওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, লিপি খান ভরসা সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশির আস্থাভাজন নেত্রী ছিলেন। লিপি খান ভরসার বাড়ি পাবনা। একসময় অভিজাত হোটেলে নাচগান ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। তিনি সাবেক এমপি মরহুম করিম উদ্দিন ভরসার পুত্রবধূ। তার বিরুদ্ধে ভরসা পরিবারের জমিজমা জাল জালিয়াতি করে আত্মসাতের অভিযোগে মামলা ও ওয়ারেন্টও রয়েছে। ২০২৪ সালে সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন তিনি।
প্রতিনিধি/টিবি