ঢাকার সচিবালয়ে যেন রহস্যের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন। সেই সঙ্গে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়িয়ে তুলেছে সন্দেহ। এমন পরিস্থিতিতে গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ অভিযোগ করেছেন, সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমলাদের সরাসরি হাত রয়েছে।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি মোড়ের বিজয় চত্বরে ‘জুলাই বিপ্লব পরবর্তী তরুণরা কেমন বাংলাদেশ চায়’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও নবগঠিত জেলা কমিটির পরিচিতি সভায় তিনি বলেন, সচিবালয়ে সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ করে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সঠিকভাবে তদন্ত করা হলে আমলাদের জড়িত থাকার প্রমাণ বেরিয়ে আসবে। কিন্তু যাদের নামে অভিযোগ, সেই আমলাদের ওপরই তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি চরম হাস্যকর ও চক্রান্তের অংশ।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, সরকার আমলাদের কাছে জিম্মি। আওয়ামী লীগের দোসর আমলারা সচিবালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এই আমলারা যেকোনো সময় প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করতে পারে। তাদের রক্ষার জন্যই সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে।
আলোচনা সভায় বক্তারা সরকারের কর্মকাণ্ড এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন। তারা অভিযোগ করেন, সচিবালয়ে সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ করে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের রক্ষা করার চেষ্টা চলছে।
আবু হানিফ বিএনপির কিছু নেতাকর্মীর ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, গত ১৫ বছর বিএনপি নির্যাতিত হয়েছে। তাদের অনেক নেতাকর্মী গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর কিছু নেতাকর্মীর আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। তারা ক্ষমতায় আসার আগেই চাঁদাবাজি ও দখলদারি শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের পতন থেকে বিএনপির শিক্ষা নেওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে দেশে গুম-খুন করেছে। সবশেষ জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা চালিয়েছে। গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না।
বিজ্ঞাপন
আবু হানিফ বক্তৃতায় তরুণদের উদ্দেশে একতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু এখন সেই ঐক্যবদ্ধ ছাত্র জনতার মাঝে বিভক্তি লক্ষ করা যাচ্ছে। শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি করা হচ্ছে। এখনও আন্দোলনে আহতরা সঠিক চিকিৎসা পায়নি, নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়নি। ঐক্য ছাড়া কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন যুব অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সুমন তালুকদার, শ্রমিক অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান, গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট মোমিন, জেলা আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন লিটন, সদস্য সচিব মোখলেছুর রহমান উজ্জ্বল, নারী নেত্রী মোশফিকা বৃষ্টি, ছাত্র নেতা ইমরান ও রিপন রাজ।
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড এবং সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকায় এই ঘটনায় স্বচ্ছ তদন্তের দাবি করেছেন বক্তারা। তাদের মতে, প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করতে সরকারের উচিত নিরপেক্ষভাবে বিষয়টি তদন্ত করা।
প্রতিনিধি/এফএ