বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

পা দিয়ে লিখে শাহজাহানের এসএসসি জয়

জেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২৪, ০৮:৩৭ এএম

শেয়ার করুন:

পা দিয়ে লিখে শাহজাহানের এসএসসি জয়

কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার চর নেওয়াজি বিএল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পা দিয়ে লিখে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ- ৪.৫০ পেয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহজাহান। অভাব, দারিদ্রতা ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে প্রতিহত করে উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে শাহজাহান।

আরও পড়ুন

৫৭ বছর বয়সে এসএসসি পাস করলেন পুলিশ সদস্য, হতে চান হোমিও চিকিৎসক

কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ফকির পাড়া গ্রামের দরিদ্র কাঠমিস্ত্রী মো. ফরিদুল হক ও রাশেদা বেগম দম্পত্তির ঘরে জন্ম হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. শাহজাহান শেখের। ছয় ভাইয়ের মধ্যে শাহজাহান তৃতীয়। জন্মের পর শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহজাহানকে নিয়ে পরিবারে চিন্তার অন্ত ছিল না। দু’টি হাত থাকলেও সেই হাতে ছিল না কোনো শক্তি। তবে ছোট থেকেই শাহজাহানের খেলাধুলা ও পড়ালেখার প্রতি ছিল খুব আগ্রহ।

আরও পড়ুন

দুর্ঘটনায় হারান দুই হাত, পা দিয়ে লিখে রাব্বির জিপিএ-৫

বড় ভাই মুদি দোকানদার আশরাফের সহযোগিতায় পড়ালেখার সুযোগ হয় শাহজাহানের। অনেক দুর্গম পথ অতিক্রম করে প্রাইমারির গন্ডি পেড়িয়ে শাহজাহান ভর্তি হয় দুই কিলোমিটার দূরের স্কুল চরনেওয়াজী বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ে। এতো দূরের স্কুলে তার পক্ষে একা চলাচল করা সম্ভব ছিল না। তার বড় ভাই আশরাফ প্রতিদিন স্কুলে রেখে আসতো এবং ছুটি হলে নিয়ে আসতো।

আরও পড়ুন

ছেলের সঙ্গে এসএসসি পাস করলেন মা-খালা

শাহজাহানের বড় ভাই আশরাফ বলেন, বাড়ির পাশে প্রাইমারি স্কুল হওয়ায় তেমন কষ্ট করতে হয়নি, কিন্তু হাইস্কুল অনেক দূরে হওয়ায় পাঁচটি বছর আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। প্রতিদিন সকালে স্কুলে নিয়ে যাওয়া এবং বিকেলে ছুটি হলে নিয়ে আসা ছিল অনেক কষ্টকর। তবুও আজ আমি খুশি কারণ যেখানে অনেক সুস্থ সবল ছাত্ররা হাত দিয়ে লিখেও ফেল করেছে, সেখানে আমার ভাই পা দিয়ে লিখে ভালো রেজাল্ট করে সবার মুখ উজ্জ্বল করেছে।

আরও পড়ুন

এতিমখানায় বেড়ে ওঠা ৬ বন্ধুর এসএসসি জয়, স্বপ্ন স্বনির্ভর হওয়া

শাহজাহানের বাবা মো. ফরিদুল হক বলেন, আমাদের অভাবের সংসারে ছেলেদের পড়ালেখা করানোর কথা চিন্তাই করতে পারিনি। তার ওপর শাহজাহান ছিল জন্মগত ভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ওর ইচ্ছা আর ওর বড় ভাইদের প্রচেষ্টায় পড়ালেখা করানো সম্ভব হয়েছে। ওর স্যাররাও অনেক সহযোগিতা করেছে।

আরও পড়ুন

অষ্টম শ্রেণির রহিমার শ্রুতিলিখনে এসএসসিতে নাবিলার সাফল্য

শাহজাহানের মা রাশেদা বেগম বলেন, আমার প্রতিবন্ধী ছেলেটা ছোট থেকে অনেক কষ্টে পড়ালেখা করে ভালো রেজাল্ট করেছে। ওর বাবা কাঠ মিস্তিরির কাজ করে ওকে কীভাবে পড়ালেখা করাবে তা নিয়েই চিন্তা করেছি। এ চিন্তা শাহজাহানের মাঝেও ছিল।

আরও পড়ুন

পা দিয়ে লিখে এসএসসি পাস করল সিয়াম

শাহজাহান জানায়, সে প্রতিবন্ধী। বাইরে পড়ালেখা করার সামর্থ নাই। কতদূর পর্যন্ত পড়ালেখা করতে পারে সেটাই তার চেষ্টা থাকবে।

চরনেওয়াজী বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিউল আলম বলেন, দুই তিন বছর আগেও এ স্কুলে প্রতিবন্ধীদের পড়ালেখার কোনো পরিবেশ ছিল না। সেই সময়ে শাহজাহান অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। তার ভাই প্রতিদিন বাইকে করে রেখে যেত আবার স্কুল ছুটি হলে নিয়ে যেত। ছেলেটা অনেক মেধাবী। স্কুল থেকে আমরা সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দিয়েছি। পরিবার থেকে আরেকটু সুযোগ পেলে ছেলেটা হয়তো এ প্লাস পেতো।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর