বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে জড়িয়ে দুই হাত হারিয়েছেন সীতাকুণ্ডের রফিকুল ইসলাম রাব্বি। তবুও দমে যাননি অদম্য এই তরুণ। পা দিয়ে লিখে অংশগ্রহণ করেছিলেন এসএসসি পরীক্ষায়। পেয়েছেন জিপিএ-৫।
রোববার (১২ মে) চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড থেকে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, রফিকুল এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। সে হাজী তোবারাক আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
বিজ্ঞাপন
রাব্বি ভাটিয়ারী ইউনিয়নের বজলুর রহমানের ছেলে। ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় স্কুল থেকে ভাটিয়ারী বাজারে ফুট ওভারব্রিজের ওপর দিয়ে যাওয়ার বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে তার দুই হাত হারান। এরপর আয়ত্ত করেন মুখ ও পা দিয়ে লেখা।
রাব্বি জানান, আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী। তবে মনোবল অটুট ছিল। মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় আমি ভালো ফলাফল করেছি। ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চাই।
বাবা বজলুর রহমান বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আমার ছেলে কঠোর পরিশ্রম করেছে, জিপিএ-৫ পেয়েছে।
ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্য্য বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও রাব্বি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে ভালো ফলাফল করেছে। পা দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিয়েছে। বিত্তবানরা যেন তার পড়ালেখায় সহযোগিতা করে, সেটাই প্রত্যাশা।
বিজ্ঞাপন
পরীক্ষাকেন্দ্র ফৌজদারহাট খয়রাতি মিঞা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, তাকে নিয়ম অনুযায়ী ৩০ মিনিট সময় অতিরিক্ত দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়তি সময় সে নেয়নি।
সীতাকুণ্ডের শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুচ্ছাফা বলেন, রাব্বিকে সেই পঞ্চম শ্রেণি থেকে আমরা মুখ দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিয়ে সাফল্য পেতে দেখেছি। সে পা দিয়ে লিখে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেছে।
এর আগে রোববার (১২ মে) সকাল ১০টার পর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বেলা সাড়ে ১২টায় সম্মিলিত ফলের সারসংক্ষেপ তুলে ধরবেন শিক্ষামন্ত্রী।
উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় গত ১২ মার্চ। ব্যবহারিক পরীক্ষা ১৩ মার্চ থেকে ২০ মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এ বছর ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৬ লাখ ৬ হাজার ৮৭৯ জন। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষার্থী মোট ২ লাখ ৪২ হাজার ৩১৪ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৩ জন।
এইউ