বুধবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

জ্বিনের আছর থেকে বাঁচার আমল

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

জ্বিনের অস্তিত্ব স্বীকার করা ঈমান বিল গায়েব বা অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনার অন্তর্ভুক্ত। জ্বিনজাতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ ‘সুরা জ্বিন’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরাও নাজিল করেছেন। হাদিসে আল্লাহর রাসুল (স.) জ্বিনের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। হাদিসে এসেছে, ‘যে এই আয়াত (আয়াতুল কুরসি) পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত করে দিবেন এবং কোনো পুরুষ ও নারী জ্বিন-শয়তান তার কাছে আসতে পারবে না।’ (সহিহ বুখারি: ৫০১০)

জ্বিনজাতি মানুষের মতো পুরুষ ও স্ত্রী জাতিতে বিভক্ত। জ্বিনদের মধ্যে ভালো-খারাপ রয়েছে। দুষ্ট জ্বিনরা সুযোগ পেলেই মানুষের ক্ষতি করে বসে। তাই জ্বিনের আছর সম্পর্কে জানা এবং এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। দুষ্ট জ্বিনেরা বাচ্চা ও নারীদের ওপর আক্রমণ করে বেশি। তাদের নানাভাবে কষ্ট ও যন্ত্রণা দেয়। 


বিজ্ঞাপন


জ্বিনে আছর করলে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায়
যারা জ্বিনের আছরে আক্রান্ত হয়, তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন— ঘুমের মধ্যে হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে ওঠা। উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলা। আতঙ্কিত হয়ে ঘুম থেকে জেগে বসে পড়া বা দাঁড়িয়ে যাওয়া। হঠাৎ বেহুঁশ হয়ে যাওয়া। সব সময় ভীতু ভাব নিয়ে থাকা। কখনো ভিন্ন ভাষায় ও ভঙ্গিতে কথা বলা। আশ্চর্যজনক আচরণ প্রকাশ পাওয়া, যেমন অল্প সময়ে বহুদূর চলে যাওয়া। মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেক সময় স্বামী-সন্তান ও সংসার বিরক্তিকর হয়ে ওঠা। কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির শুনলে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়া। যেহেতু খারাপ জিনেরা এসব সহ্য করতে পারে না।

আরও পড়ুন: জ্বিনের অস্তিত্ব অস্বীকারের সুযোগ নেই

স্বপ্নে কালো কুকুর, কালো সাপ, কালো বিড়াল অথবা পাহাড় বা উঁচু স্থান থেকে পড়ে যেতে দেখা অথবা পানিতে পড়ে যাওয়া দেখা। কানে শোঁ শোঁ আওয়াজ শোনা। শরীরের ভারসাম্যহীনতা অনুভব করা। অল্পতেই রেগে যাওয়া। সর্বদা ঘুমের ভাব লেগে থাকা এবং গভীর ঘুম থেকে জেগে কষ্ট অনুভব হওয়া। একাকী ও নির্জনতা পছন্দ করা। এমন কাজ করেছে মনে হওয়া, যা সে করেনি। কাজেকর্মে বেশি ভুল হওয়া। দীর্ঘ সময় টয়লেটে অবস্থান করা, অদেখা কারও সঙ্গে কথা বলা ইত্যাদিসহ আরও অনেক অদ্ভুত আচরণ দেখা দিতে পারে। 

জ্বিনের আছর থেকে নিরাপদ থাকার আমল
১) সবসময় পবিত্র থাকা। গোসল ফরজ হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গোসল করা।
২) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ও শরিয়ত মোতাবেক চলা।
৩) ঘরে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় সুন্নাহসমর্থিত দোয়া পড়া। ঘরে প্রবেশের সময় সালাম করে প্রবেশ করা।
৪) প্রস্রাব-পায়খানায় যাওয়ার সময় দোয়া পড়া। সেখান থেকে ফিরেও দোয়া পড়া। কারণ এসব জায়গায় দুষ্ট জিনদের আনাগোনা বেশি থাকে।
৫) ঘরে নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করা। বিশেষ করে সুরা বাকারা তেলাওয়াত করা।
৬) প্রতি নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করে ঘুমানো।
৭) খাবারের সময় মাসনুন দোয়া পড়া। কারণ দোয়া না পড়লে দুষ্ট জিনেরা খাবারে অংশগ্রহণ করার সুযোগ থাকে। গোশত খাওয়ার পর হাড়গুলো পানিতে না ফেলা, কারণ এগুলো জিনদের খাবার। এগুলো নষ্ট করলে তারা কষ্ট পায়। অনেক ক্ষেত্রে এ কারণেও আক্রমণ করে বসতে পারে।
৮) ঘরে কোনো প্রাণীর কঙ্কাল ও মূর্তিজাতীয় জিনিস না রাখা। 
৯) নির্জন বা ময়লার স্তূপ, আগুনের কুণ্ডলীর কাছে একাকী না যাওয়া। 
১০) জনমানবহীন স্থান, গভীর জঙ্গলে রাতের বেলায় একা সফর না করা।
১১) কোনো অবস্থায় ভয় পাওয়া যাবে না। কারণ ভয় পেলে তারা আরো বেশি সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। 
১২) ভরদুপুর ও সন্ধ্যায় বাচ্চাদের ঘরের বাইরে না রাখা। 
১৩) সকাল-সন্ধ্যা এবং শোবার সময় সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস তিনবার করে পড়ে হাতের মধ্যে ফুঁক দিয়ে শরীরে মুছে নেওয়া। ১৪) সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে বিসমিল্লাহ বলে ঘরের দরজা ও জানালা বন্ধ রাখা। 
১৫) নারী ও শিশুদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে না দেওয়া। রাতের এক প্রহর যাওয়ার পর এ বাধ্যবাধতা নেই।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ইবলিস কোন শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আদমকে সেজদা করেনি?

আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা

উলামায়ে কেরাম অভিজ্ঞতার আলোকে জ্বিনে আক্রান্ত রোগীর সামনে এমন কিছু আয়াত পড়েন, যেগুলো তেলাওয়াত করলে জ্বিনরা দিশেহারা হয়ে যায়। যেমন—কাউকে জ্বিনে আছর করেছে মনে হলে প্রাথমিকভাবে তার কানের কাছে উচ্চৈঃস্বরে নিম্নের আয়াতগুলো পাঠ করতে হবে। এতে তার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে আয়াতগুলো আরো বেশি বেশি পাঠ করতে হবে। এতে জ্বিন অনেক ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে কোরআন পাঠ বন্ধ করানোর চেষ্টা করবে। রোগীর মুখ দিয়ে অনেক কথা বলাবে। কিন্তু থামা যাবে না। যদি কোনো কারণে থামতেই হয়, তাহলে সুরা ফালাক, নাস ও দরুদ শরিফ পড়ে থামতে হবে।

যে আয়াতগুলো পড়তে হয়

সুরা ফাতেহার সব আয়াত। সুরা বাকারার ১-৫, ১৬৪, ২৫৫-২৫৭, ২৮৫-২৮৬। সুরা আলে ইমরানের ১৮-১৯ নম্বর আয়াত। সুরা আরাফের ৫৪-৫৬ নম্বর আয়াত। সুরা মুমিনুনের ১১৫-১১৮ নম্বর আয়াত। সুরা সফফাতের ১-১০ নম্বর আয়াত। সুরা আহকাফের ২৯-৩২ নম্বর আয়াত। সুরা আর রাহমানের ৩৩-৩৬ নম্বর আয়াত। সুরা হাশরের ১২-২৪ নম্বর আয়াত। সুরা জিনের ১-৯ নম্বর আয়াত। সুরা হুমাজাহর ১-৭ নম্বর আয়াত। সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস।

তবে এই আয়াতগুলো পড়ার পর জ্বিন রোগীর শরীরে ঝাঁকুনি দিতে পারে। তাই কোনো ভীতু লোক এ ধরনের চিকিৎসার চেষ্টা করা ঠিক হবে না। সেক্ষেত্রে উল্লিখিত সুরাগুলোর অডিও ক্লিপ রোগীকে শোনানো যেতে পারে। অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য নিজেও বেশি বেশি এই সুরাগুলো শুনতে পারে।

কিছু আয়াত এমন আছে, যেগুলোকে আয়াতুল হরক্ব বলে। এগুলো তেলাওয়াত করলে জিনের খুব কষ্ট হয়। ফলে সে চলে যেতে বাধ্য হয়। আয়াতগুলো হলো, সুরা ফাতেহা। আয়াতুল কুরসি। সুরা নিসা : ১৬৭-১৭৩, সুরা মায়িদা : ৩৩-৩৪, সুরা আনআম : ৯৩, সুরা আরাফ : ৪৪-৫১, সুরা আনফাল : ১২-১৩, সুরা তাওবা : ৭, সুরা ইবরাহিম : ১-১৭, সুরা হিজর : ১৭-১৮, সুরা ইসরা : ১১০-১১১, সুরা আম্বিয়া : ৭০, সুরা দুখান : ৪৩-৫২, সুরা আহকাফ : ২৯-৩৪, সুরা হজ : ১৯-২২, সুরা মারিয়াম : ৬৮-৭২, সুরা মুলুক : ৫-১১ নম্বর আয়াত।

আল্লাহ তাআলা সবাইকে দুষ্ট জ্বিনের আছর থেকে হেফাজত করুন। মুসলিম উম্মাহকে উপরোক্ত আমলগুলো যথাযথ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর