সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫, ঢাকা

মেট্রো স্টেশনের সামনে অটোরিকশার অবৈধ সাম্রাজ্য

মো. মেহেদী হাসান হাসিব
প্রকাশিত: ০৮ মে ২০২৫, ০৬:৪৪ পিএম

শেয়ার করুন:

মেট্রো স্টেশনের সামনে অটোরিকশার অবৈধ সাম্রাজ্য

রাজধানীর বিভিন্ন মেট্রোরেল স্টেশনের সামনের সড়ক এখন যেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার অঘোষিত স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। মেট্রোরেল স্টেশনের যাত্রী ও বেশি ভাড়ার আশায় দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য ব‌্যাটারিচালিত অটোরিকশা পুরো রাস্তা দখল করে রাখায় মেট্রো স্টেশনগুলো দেখে মনে হয় যেন অটোরিকশার স্টেশন। এতে চলাচলে সাধারণ যাত্রী ও পথচারীরা পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে। মেট্রোরেল স্টেশনের সামনে থেকে অটোরিকশার সরাতে ইতোমধ্যে ম‌্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা চেয়েছে ঢাকা ম‌্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড।

সরেজমিনে বিশৃঙ্খল এই চিত্র চোখে পড়েছে আগারগাঁও, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১০-সহ গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোর সামনে। ব্যস্ত সময়ে স্টেশনের সামনের রাস্তা দিয়ে হাঁটাও দায় হয়ে পড়ে। মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার বা বাসে করে আসা যাত্রীদের স্টেশনে নামতে বা উঠতেও ভোগান্তি পোহাতে হয়। ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও অনেক সময় এই যানজট ও বিশৃঙ্খলা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা চোখে পড়ে না। অনেক সময় দেখা যায়, রিকশাগুলো স্টেশনের মূল প্রবেশপথ পর্যন্ত আটকে রাখছে।


বিজ্ঞাপন


সময় বাঁচালেও স্টেশনের বাইরে যন্ত্রণা

মেট্রো স্টেশনের সামনে রিকশার এই অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ পথচারী, বাইকার ও প্রাইভেটকার চালকেরা। আগারগাঁও থেকে মেট্রোতে চড়ে উত্তরা যাবেন আজফার নামের এক যাত্রী। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, মেট্রো রেলে চড়লে সময় বাঁচে, কিন্তু স্টেশনের বাইরে অটোরিকশাগুলোর কারণে যে ভোগান্তি পোহাতে হয়, তাতে পুরো সুবিধাটাই মাটি হয়ে যায়। যাত্রীদের নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করতে প্রতিটি মেট্রো স্টেশনের সামনে সুপরিকল্পিত পার্কিং ও নির্ধারিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড প্রয়োজন। একই সঙ্গে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কঠোরতা এবং নিয়মিত নজরদারি জরুরি বলেও তিনি ‍উল্লেখ করেন।

1000029791
মেট্রোরেলের শেওড়াপাড়া স্ট্রেশনের সামনে অটোরিকশার জটলা। ছবি: ঢাকা মেইল

একজন বাইকার অভিযোগ করে বলেন, আমরা বাইকে করে স্টেশনে আসি, কিন্তু ঢোকার আগেই জ্যামে আটকে যাই। অনেক সময় রিকশা চালকরা ইচ্ছা করেই রাস্তা ছাড়ে না।

কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশনের সামনে পথচারী আব্দুল হামিদ বলেন, স্টেশনের সামনে হাঁটারও জায়গা পাই না। রিকশাগুলো এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, যাত্রী নামা বা ওঠা কঠিন হয়ে যায়। বৃদ্ধ বা শিশুরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে।
মিরপুর ১০ মেট্রো স্টেশনের সামনে রিকশার দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে কথা হয় প্রাইভেটকার চালক জীবনের সঙ্গে। তিনি জানান, স্টেশনের সামনে এমন অবস্থা থাকে যেন এটা রিকশার স্ট্যান্ড। এ মোড়ে এমনিতেই সারাদিন যানজট থাকে, তার ওপর এ রিকশার চালকেরা নিজেদের ইচ্ছে মতো জটলা বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে এতে আরও বেশি যানজট তৈরি হয়, সময় নষ্ট হয়, দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থাকে।

এ বিষয়ে কথা হলে মেট্রো স্টেশনগুলোর সংলগ্ন সড়কে অপেক্ষমাণ কয়েকজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক একই সুরে কথা বলেন। তারা জানান, যাত্রী তুলতেই তারা স্টেশনের সামনে অবস্থান করেন। মেট্রো থেকে নামার পর যাত্রীরা এখানেই গাড়ি খোঁজে। আমরা সামনে না থাকলে তারা রিকশা যেমন পাবে না তেমনি আমরা যাত্রী পাই না।

আগাঁরগাও মেট্রো স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আব্দুর রহিম নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘আমাদের রিকশা রাখার কোনো জায়গা নাই। কোথায় দাঁড়াব, সেই ব্যবস্থাও তো কেউ করে দেয়নি। আমরা রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকি, এতে সবাই বলে আমরা রাস্তা দখল করে আছি। কিন্তু আপনে নিজে দেখেন, এখাকার সকল সরকারি অফিসের গাড়ি রাস্তার উপরে রাখছে। এ নিয়ে কেউ কথা বলবে না। সবাই আমাদের দোষ দেয়। আমরা গাড়ি না রাখলে খাওন জুটবে না। আমরা বিশৃঙ্খলা চাই না। কিন্তু জায়গা না থাকলে তো রাস্তাতেই দাঁড়াতে হয়।’

রিকশা সরাতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা চায় মেট্রো কর্তৃপক্ষ

এদিকে মেট্রোরেল স্টেশেনের সামনে থেকে অটোরিকশা সরাতে ম‌্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা চায় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম‌্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। এ বিষয়ে সংস্থাটির পরিচালক ( প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এগুলোর বিষয়ে আমাদের স্টেশনগুলোতে ম‌্যাজিস্ট্রেট দেওয়ার জন‌্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। ম‌্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেতে অনেকটা সময় লাগতে পারে। এজন‌্য আমরা ঢাকার জেলা প্রশাসকে চিঠি দিয়ে যোগাযোগ করেছি। ডিএমপি কমিশনারকেও আমরা চিঠি দিয়েছি এগুলো সরিয়ে দেওয়ার জন‌্য। আবার আমাদের যে এমআরটি পুলিশ আছে তারাও কাজ করছে।’

আরও পড়ুন-

মেট্রোরেল স্টেশনের সামনের রাস্তাগুলো দখল করে রাখে ব‌্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এগুলো সরানোর জন‌্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম‌্যাজিস্ট্রেট মো. শাহীদুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের এগুলো নিয়ে অভিযান চলমান থাকে। আমরা সেখানে গেলে তারা চলে যায়। আমরা আরও সিরিয়াস হব।’ 

1000029782
মেট্রোরেল স্টেশনের সামনে অটোরিকশার জটলা। ছবি: ঢাকা মেইল

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. এম শামসুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সরকার তো চলে কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। আর এ প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল ও অক্ষম। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) নিবন্ধন দেয়, কে রাস্তায় চলতে পারবে, আর কে চলতে পারবে না। সে দায়িত্বটা তারা ঠিকমতো পালন করে না। তারা শুধু নিবন্ধন দিয়েই যায়। সরকার আসবে সরকার যাবে, থাকবে প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো যদি অক্ষম হয়, দুর্বল হয় এবং তাদের যদি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে কিন্তু এ সমস্যার সমাধান হবে না।’

ড. এম শামসুল হক বলেন, ‘আমরা যদি সক্ষম প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে না পারি তাহলে কিন্তু এগুলোর নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবে সম্ভব হবে না। এদের সংখ্যা বেশি হলে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। পুলিশ কয়টা ধরবে, এগুলো তো পরিচালনা যোগ্য নয়।’

এমএইচএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর