রাজধানীসহ সারাদেশে কোনো নিবন্ধন বা রুট পারমিট ছাড়াই চলছে লাখ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা। দিন দিন শুধু বেড়েই চলেছে এই রিকশার পরিমাণ। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সরকার রাজধানীতে এই রিকশা চলাচল বন্ধের উদ্যোগ নিয়েও সফল হতে পারেনি। এসব রিকশা চলাচল বন্ধ না করার পেছনে আইনি বাধাও রয়েছে। দেশের উচ্চ আদালত থেকে অনুমতি পাওয়ায় তারা মানছে না কোনো বিধি-নিষেধ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার শেষ সময়ে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের একটি উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে এসব রিকশার চালকদের হঠাকারিতা এবং মারমুখী আন্দোলনের কারণে সেই সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরপর হাইকোর্ট থেকে এসব রিকশা বন্ধের নির্দেশনা এসেছিল। সরকারের নির্বাহী বিভাগও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিল। তবে রিকশা চালকদের আন্দোলনের মুখে সেই আদেশ স্থগিত হয়ে যায়। হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ থাকায় প্রশাসন চাইলেও বল প্রয়োগ করে এসব রিকশা বন্ধ করতে পারছে না।
বিজ্ঞাপন
মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষাসহ জনস্বার্থে উচ্চ আদালতে অনেক মামলা করে রায় পেয়েছে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।
সংগঠনটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আদালতের ওপর বন্দুক রেখে সরকার অটোরিকশা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। কারণ হচ্ছে, হাইকোর্ট এই অটোরিকশা চালানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে রিকশাচালকরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে থাকে। এমন প্রেক্ষাপটে অ্যাটর্নি জেনারেল চেম্বার আদালতে গিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন। পরে শুনানি শেষে আদালত তাদের অটোরিকশা চালানোর অনুমতি দেন। এই সরকার যেহেতু তাদের অটোরিকশা চালানোর অনুমতি দিয়েছে তাই তারা রাজধানীতে যত্রতত্র মহাসড়কে অটোরিকশা চালাচ্ছে।’
প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘যেহেতু আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত অটোরিকশা চালানোর অনুমতি দিয়েছেন, সেই ক্ষেত্রে তো আমরা কিছু বলতে পারি না। কারণ আদেশের বিরুদ্ধে কোনো কিছু বলা অনুচিত।’
বিজ্ঞাপন
মনজিল মোরশেদ আরও বলেন, ‘আমি এর আগে এ বিষয়ে সোচ্চার ছিলাম। হাইকোর্টের অন্য অন্য একটি বেঞ্চ অটোরিকশা চালানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। কিন্তু আপিল বিভাগ যদি চায় এবং সরকার যদি চায় সে ক্ষেত্রে আমাদের কী করার আছে?’
আদালতের আদেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাকসুদ উল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যেহেতু অনুমতি দিয়েছে তাই এ আদেশ মেনে অটো চালকরা রাস্তায় রিকশা চালাচ্ছেন। তাদের বড় একটা অংশ রাস্তায় অটো চালিয়ে সংসারের খরচ নির্বাহ করেন। তারা সংসার চালান এমতাবস্থায় কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আমরা যেতে পারি না।’
গত বছরের ২৫ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হকের আদালত অটোরিকশা চলাচলের ওপর হাইকোর্টের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করেন। তার আগে ১৯ নভেম্বর বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি মো. মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন। ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে রুল জারি করা হয়। আদেশটি স্বরাষ্ট্র সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, আইজিপি, ঢাকার পুলিশ কমিশনার, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
তথ্য বলছে, রাজধানী ঢাকার সড়কে অবৈধভাবে চলছে প্রায় আট লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা। প্রধান সড়কে আসার অনুমতি না থাকলেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ এ যান। গত দুই মাসে লক্ষাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও দৌরাত্ম্য থামছে না।
আওয়ামী লীগ সরকারও গত বছর এসব রিকশা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিল। গত বছরের ১৫ মে সড়ক থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের ঘোষণা দেয় সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়। এরপর আন্দোলনে নামে রিকশা চালকরা। এর পাঁচ দিন পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সড়ক ছাড়া রিকশা চলাচলের অনুমতি দেন।
এরপর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এটি ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন বলছে, সড়কে এখন চলছে অন্তত আট লাখ অটোরিকশা।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেপ্টেম্বর মাসে ৫০ হাজার আর অক্টোবর মাসে ৬৬ হাজার এসব রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। ব্যাটারি জব্দ করে নিলামেও তোলা হয়েছে। তবে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এসব রিকশা।
এআইএম/জেবি