বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫, ঢাকা

২৫ টাকার ব্রেকে চলন্ত মৃত্যুফাঁদ!

মো. মেহেদী হাসান হাসিব
প্রকাশিত: ০৮ মে ২০২৫, ০৮:৪৭ এএম

শেয়ার করুন:

২৫ টাকার ব্রেকে চলন্ত মৃত্যুফাঁদ!

ঢাকার রাস্তায় যাত্রী বহন করা ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো এখন যেন চলন্ত মৃত্যুফাঁদ। মাত্র ২৫ টাকায় বিক্রি হওয়া নিম্নমানের ব্রেকপ্যাডে ভরসা করছেন অধিকাংশ অটোচালক, যা যেকোনো সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও মানসম্পন্ন যন্ত্রাংশের অভাবে এই যানগুলো হয়ে উঠছে অনিরাপদ। চলন্ত অটোরিকশার গতি থামাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। 

সরেজমিন স্থানীয় বাজার ঘুরে জানা যায়, মোটা চাকার অটোরিকশার ব্রেক প‌্যাডের দাম এক সেট ৩৪০ টাকা, যার নিয়ন্ত্রণও ভালো। অন‌্যদিকে চিকন চাকার অটোরিকশার ব্রেকপ্যাড মাত্র ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঢাকায় চলাচল করা ব্যাটারিচালিত রিকশার বেশির ভাগ চিকন চাকার হওয়ায় চালকরা এই ব্রেকই ব্যবহার করছেন। করা হচ্ছে না নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও। 


বিজ্ঞাপন


1000029876_(1)

অটোরিকশার পার্টস বিক্রেতা সুমন এন্টারপ্রাইজের সুমনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। তিনি ঢাকা মেইলকে জানান, মোটা চাকার রিকশাগুলোতে দুই চাকায় ব্রেক হয়, যার এক সেটের দাম ৩৪০ টাকা। আর চিকন চাকার অটোরিকশায় শুধু সামনের চাকায় ব্রেক হয়, যা নিম্নমানের। এর একসেটের দাম ২৫ টাকা। ভালোমানের ব্রেকসেট নিতে গেলে মোটর কন্ট্রোল বক্স, ড্রিবোল শেয়ারসহ একটি সেট পাওয়া যায়। যার দাম ১৫ হাজার টাকা। যেখানে ড্রাম ব্রেকসেট থাকে। এটি সাধারণত মোটা চাকার অটোরিকশায় ব‌্যবহার করা হয়।

সুমন বলেন, মোটা চাকার অটোরিকশাগুলোতে দুই ধরনের চাকা ব‌্যবহার করতে হয়। একটি বড়, আরেকটি তুলনামূলক ছোট। এখানে বড় চাকার দাম দুই হাজার ২০০ টাকা, আর ছোট চাকার দাম এক হাজার ৫০০ টাকা। আর বড় চাকায় যে রিং ব‌্যবহার করা হয় তার দাম এক হাজার ৪০০ টাকা, ছোট চাকার রিংয়ের দাম ৮০০ টাকা। আর সামনের চাকায় যে শকআপ ব‌্যবহার করা হয় তার দাম তিন হাজার ৫০০ টাকা।

তিনি বলেন, এসিড পানি একসেট ব‌্যাটারির দাম ৬০ হাজার টাকা। আবার পাউডার ব‌্যাটারিও আছে, যা ১৮ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়ে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। কারণ এগুলো কেজি হিসেবে বিক্রি করা হয়। চিকন চাকার অটোরিকশাগুলো নিম্নমানের। কারণ আগে যে রিকশাগুলো পায়ে চালানো হতো সেগুলতে নিম্নমানের পাঁচ হাজার টাকার মোটর কন্ট্রোল বক্স লাগিয়ে এসব রিকশাকে অটোরিকশা বানানো হয়।

হাজারীবাগের অটোরিকশার গ‌্যরেজ মালিক আব্দুল হামিদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, ব‌্যাটারিচালিত অটোরিকশা শহরভেদে আলাদা হয়। ঢাকা শহরে বেশির ভাগ চিকন চাকার অটোরিকশা চলে, আর জেলা শহরগুলোতে মোটা চাকার। এখন মোটা চাকার একটি অটোরিকশা ভালোমানের একটি এসিড ব‌্যাটারি দিয়ে বানাতে গেলে এক লাখ ৪৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। আর চিকন চাকার একটি অটো তৈরি করতে গেলে যদি পাউডার ব‌্যাটারি দিয়ে করা হয়, তাহলে ৬০ হাজার টাকা লাগবে। আর এসিড ব‌্যাটারি দিয়ে তৈরি করলে ৮০ হাজার টাকার মতো লাগবে।

অটোরিকশাগুলোর ব্রেকিং সিস্টেম সম্পর্কে জানতে চাইলে এ গ‌্যারেজের মেকানিক রুস্তম ঢাকা মেইলকে বলেন, চিকন চাকার ব্রেকিং সিস্টেম ভালো না। কিন্তু মোটা চাকার ব্রেকিং সিস্টেম ভালো যা মহাসড়কে চলাচলের উপযোগী। কিন্তু মহাসড়কে এসব চলাচল করা উচিত না। 

1000029871

এ প্রসঙ্গে কথা হয় অটোচালক বাবলুর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি ভাড়ায় রিকশা নিয়ে তা চালাই। এখন ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশি চলে চিকন চাকার অটোরিকশা। গ‌্যারেজ মালিককে এর ভাড়াও কম দিতে হয়। এখন মোটা চাকার অটোরিকশা নিতে গেলে ভাড়া বেশি দিতে হয়। অন‌্যদিকে চিকন চাকার কোনো কিছু নষ্ট হলে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ‌্যে সারানো যায়। কিন্তু মোটা চাকার অটোরিকশাকার কিছু নষ্ট হলে ৫০০ টাকার নিচে সারানো যায় না। এ কারণে আমরা সাধারণত চিকন চাকার গাড়িগুলো নিই। 

অন‌্য এক রিকশা চালকের কাছে সস্তা ব্রেকিং সিস্টেম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সস্তা ব্রেক ঠিকমতো কাজ না করলেও আমরা একটু আগেভাগে ব্রেক কষি। ঝুঁকি থাকলেও অভ্যাস হয়ে গেছে।

নগরবাসী যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন, হঠাৎ ব্রেক ফেল করে অটো উল্টে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। মোহাম্মদপুরের এক যাত্রী দৃষ্টি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে অটোরিকশা করে নিউমার্কেট থেকে মোহাম্মদপুরে আসছিলাম। হঠাৎ দেখি উল্টো পথে আরেকটি অটো আসছে। ব্রেক ধরলেও মুহূর্তের মধ‌্যে দুটি অটোরিকশা সামনা-সামনি ধাক্কা যায়। বাচ্চা কোলে থাকায় আমি ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম। এখন অনেক সময় ভয়ে উঠতেই চাই না।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. এম শামসুল হক বলেন, ঢাকায় ইজিবাইক, অটোরিকশা পঙ্গপালের মতো প্রতিদিন বাড়ছে, এর মাঝে এটিকে রেগুলারাইজের কথা বলা হচ্ছে। ঢাকার রাস্তায় রিকশা, ফুটপাত, বাস নিয়ে নানা সমস্যা তো আছেই। এর মাঝে এটাকে (রিকশা) বৈধতা দিয়ে সরকার দ্বিতীয় সমস্যা তৈরি করছে। একবারও তারা বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে দেখছেন না।

এমএইচইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর