বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫, ঢাকা

ব্যাটারি রিকশার চালকরা হাত তুলছেন অহরহ, অসহায় এলিটরাও

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮ মে ২০২৫, ০৪:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

ব্যাটারি রিকশার চালকরা হাত তুলছেন অহরহ, অসহায় এলিটরাও

ঢাকার রাস্তায় প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দাপট। ট্রাফিক আইন অমান্য, বেপরোয়া চলাচল এবং যত্রতত্র থেমে যাত্রী ওঠানো-নামানো তো রয়েছেই, তার ওপর সম্প্রতি এক নতুন ও উদ্বেগজনক মাত্রা যোগ হয়েছে- মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার চালকদের ওপর অটোরিকশা চালকদের হামলা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি ঘটনার পর এসব হামলা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ চলে গেছে এসব ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ অটোরিকশাচালক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন। হঠাৎ করে রাস্তার মাঝখানে থেমে যাত্রী ওঠানো-নামানো, এক লেন থেকে আরেক লেনে ঢুকে পড়া, এমনকি ফুটপাত দখল করেও চলাচল করছেন অনেকে। মতিঝিল, গুলিস্তান, ফার্মগেট, নিউ মার্কেট, মিরপুর ও মগবাজার এলাকাসহ গুলশান বনানীর মতো আভিজাত এলাকার সড়কজুড়ে এই চিত্র প্রতিদিনের।


বিজ্ঞাপন


অথচ এসব এলাকায় নিয়মিত ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও তারা কার্যত এই যানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বলেই মনে করছেন নগরবাসী।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সচিবালয়ের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তার ওপর হামলা করার জন্য তেড়ে যান একজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক। সম্মান বাঁচাতে সেই কর্মকর্তা নীরবেই সবকিছু সহ্য করেন। পরে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাটিই তার গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে তার গাড়ির ক্ষতি করেছে। আবার উল্টো সেই হামলা করার জন্য তেড়ে আসছে।’

গত ১৯ এপ্রিল থেকে গুলশান-বনানী এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে প্যাডেলচালিত রিকশা আগের মতোই চলতে থাকে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে সেদিনই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন ব্যাটারিরিকশা চালকরা। সেই ধারাবাহিকতায় এর পরেও গুলশান, বনানী ও আশপাশের এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের পাশাপাশি সীমাহীন নৈরাজ্য চালান।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন-

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, ১৯ এপ্রিল সকালের দিকে বনানী ১১ নম্বর সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে বাধা দিয়ে কয়েকটি রিকশা জব্দ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর প্রতিবাদে চালকরা জোটবেঁধে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। অন্যদিকে সোসাইটির প্যাডেলচালিত রিকশা চালকরাও রাস্তার একপ্রান্তে জড়ো হন। দুপুর ১২টার দিকে ১১ নম্বর ব্রিজ এলাকায় দুপক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের ফলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্যাডেলচালিত রিকশা দেখলেই হামলার চেষ্টা করতে থাকেন অটোরিকশার চালকরা। একপর্যায়ে তারা পুলিশ বক্সে হামলা চালানোর পাশাপাশি পথচারীদেরও মারধর করেন। ওই পথে চলাচলকারী বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিকও তাদের হামলার শিকার হন। ঘটনার ভিডিও ধারণ করার চেষ্টা করলে কয়েকজন পথচারী ও গণমাধ্যমকর্মীকেও পেটানো হয়। বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভেঙে ফেলা হয় ও চালকদের বেধড়ক মারধর করা হয়। প্যাডেলচালিত দুজন রিকশাচালককে মেরে খালের পাশে ফেলে দেওয়া হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, ১১ নম্বর ব্রিজের ট্রাফিক পুলিশের বক্সে লাঠি দিয়ে আঘাত করছে ব্যাটারি রিকশার চালকরা। পুলিশের ব্যারিকেড টেনে সরিয়ে ফেলছে। একাধিক মোটরসাইকেল আরোহীর ওপর হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়।

এছাড়াও গত ২১ এপ্রিল রাজধানীর বনানী এলাকায় লাঠি দিয়ে পথচারী-বাইক রাইডারসহ কয়েকজনকে মারধর করেছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা। এ সময় যাদের ছবি-ভিডিও ধারণ করতে দেখেছেন তাদের মোবাইল-ক্যামেরাও ছিনিয়ে নিয়ে ধাওয়া দিয়ে লাঠিপেটা করারও অভিযোগ পাওয়া যায়।

Banani-Gulshan-RB-20250421233948

অটোরিকশাচালকরা এক ধরনের অঘোষিত ‘গ্রুপিং’-এর মধ্যে কাজ করেন বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘অটোরিকশা চালকদের একটা সংগঠিত নেটওয়ার্ক রয়েছে। কোনো একটি চালকের সঙ্গে কোনো ঝামেলা হলে আশপাশে থাকা চালকেরা দলবেঁধে এসে প্রতিপক্ষকে ঘিরে ফেলে। এটা শুধু আইনশৃঙ্খলার জন্য নয়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি।’

এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত গাড়িচালক বা অফিসগামী মানুষদের উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিদিন। গুলশানে কর্মরত এক করপোরেট কর্মকর্তা আরিফ হাসান বলেন, ‘আমি গুলশান-১ থেকে মহাখালী অফিসে যাই রোজ। প্রতিদিনই মনে হয় যেকোনো সময় অটোর সামনে পড়ে যেতে পারি। একদিন আমার সহকর্মীর গাড়ির পাশে ঘষে যায় একটা অটো। উল্টো সে চিৎকার শুরু করে। গায়ে যদি কেউ হাত দিত, কী হতো বলা মুশকিল।’

এদিকে মোটর সাইকেলচালকদের ওপর অবৈধ অটোরিকশাচালকদের হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি পালন করেছেন মোটরসাইকেল চালকরা। গত ২৬ এপ্রিল রাজধানীসহ সারাদেশে একযোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন ঢাকার নানা প্রান্ত থেকে আসা বাইকার কমিউনিটির সদস্যসহ চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ বাইকাররা। এই কর্মসূচিতে দেশজুড়ে সক্রিয় বাইকার সংগঠনগুলার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা যায়। একই সঙ্গে গুলশান ডিসি অফিসে বিভিন্ন ক্লাবের একটি প্রতিনিধিদল লিখিত স্মারকলিপি পেশ করে। স্মারকলিপিতে ২১ এপ্রিলের হামলার দ্রুত তদন্ত, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ভবিষ্যতে বাইকারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) অটোরিকশার একটি ডিজাইন নিয়ে কাজ করছে। এটি হলে অটোরিকশা চালকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে লাইসেন্স দেওয়া হবে। 

তিনি বলেন, ‘প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেওয়া হবে না। কারো এলাকায় অবৈধ অটোরিকশার গ্যারেজের তথ্য দিন আমরা সেগুলো বন্ধ করে দেব। আপনারা বাড়ি মালিক সমিতি থেকে উদ্যোগ নিন, আপনাদের এলাকায় অবৈধ অটোরিকশা প্রবেশ করতে দিয়েন না। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা চেষ্টা করছি।’

টিএই/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর