নাগরিক জীবনে নতুন যন্ত্রণার নাম ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এসব রিকশা যে ঝুঁকিপূর্ণ, দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ, এটা জানার পরও দিন দিন বাড়ছে এই যানটির চাহিদা। এমনকি ডিএমপির পক্ষ থেকে এ ধরনের রিকশায় না চড়ার আহ্বান সত্ত্বেও বেশির ভাগ মানুষ মানছে না সেই আহ্বান। এর পেছনে কারণ কী?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধানত দুটি কারণে এই রিকশায় সাধারণ মানুষ চলাচল করে। প্রথমটি হলো দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছা যায়। প্যাডেল রিকশার চেয়ে অনেক কম সময়ে এসব রিকশায় গন্তব্যে পৌঁছা যায়। ফলে কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই যাত্রীরা চড়ে।
বিজ্ঞাপন
দ্বিতীয় কারণটি হলো ভাড়ার দিক থেকে অনেক সাশ্রয়ী। ক্ষেত্র বিশেষে ভাড়া প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। প্যাডেল রিকশার চালকেরা অনেক জায়গায় যেতে গড়িমসি করেন। আর যেতে চাইলেও অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকেন। সেখানে ব্যাটারিচালিত রিকশার ড্রাইভাররা যেকোনো জায়গায় যেতে অনায়াসে রাজি হয়ে যান। বিশেষ কোনো ট্রাফিকের কবলে পড়ার কোনো আশঙ্কা না থাকলে ঢাকার এক মাথা থেকে আরেক মাথায় ছুটে যেতেও তাদের কোনো অনীহা থাকে না।
মিরপুর ১১ নম্বরের বাসিন্দা রফিক আলী। তিনি বলেন, বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো যান এখন এই ব্যাটারিচালিত রিকশা। কারণ অল্প সময় ও টাকায় বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া যায়। তবে দুর্ঘটনার ভয়ে রিকশায় ওঠার পর থেকে চালককে আস্তে চালানোর জন্য বার বার অনুরোধ করতে হয়। এতে অনেকটা ভালোভাবে যাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, এই রিকশা চালকরা খুবই বেপরোয়া হয়। রাস্তা একটু ফাঁকা পেলেই দ্রুতগতিতে যাওয়ার চেষ্টা করে। অনেক সময় উল্টো পথেও চলাচল করে। উল্টোপথে এবং দ্রুতগতিতে যাওয়ার সময়ই মূলত দুর্ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
তাসলিমা বেগম নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, কাছের যেকোনো জায়গায় যাওয়ার জন্য এই ধরনের রিকশা খুবই ভালো। কারণ বাসে উঠলে অনেক মানুষের ভিড় হয়। আর সিএনজিতে গেলে অনেক বেশি টাকা ভাড়া লাগে। সব মিলিয়ে এই ধরনের রিকশা খুবই ভালো।
তিনি বলেন, এই রিকশা হলো ফরমালিনযুক্ত ফলের মতো। রাজধানীর বাজারে বেশির ভাগ ফলে ফরমালিন দেওয়া থাকে। কিন্তু আমরা বাধ্য হয়ে কিনি। তেমনি বাধ্য হয়ে ইঞ্জিনের রিকশায় উঠতে হয়। তবে সরকারি নিয়মে এটির বিকল্প যান-বাহন থাকলে সেটায় উঠবো।
বিআরটিএ, যাত্রী অধিকার সংগঠন, পুলিশ ও অন্য অংশীজনের হিসাবে, ব্যাটারি ও যন্ত্রচালিত তিন চাকার অবৈধ যানবাহন এখন ৬০ লাখের বেশি। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে আছে প্রায় ৫০ লাখ। আর ঢাকায় আছে ১০ লাখের মতো। কেউ কেউ মনে করেন, ব্যাটারি ও যন্ত্রচালিত রিকশার সংখ্যা ১৫ লাখের কম হবে না, যা ক্রমাগত দ্রুত বাড়ছে।
যেসব কারণে এই রিকশা দুর্ঘটনাপ্রবণ
ব্যাটারিচালিত রিকশার প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রথমটি হলো বডি, চাকাসহ পুরো রিকশা ইঞ্জিন দিয়ে চলার মোটামুটি উপযোগী ভাবে তৈরি করা। অন্যটি হলো ঢাকার পুরনো রিকশার বডিতে সিট পরিবর্তন করে নতুন করে ব্যাটারি ও ইঞ্জিন সেট করা। প্রথমটির তুলনায় দ্বিতীয় ধরনের রিকশা দুর্ঘটনাপ্রবণ বেশি। কারণ এই রিকশায় যাত্রী পরিবহনের জন্য কোনো ধরনের ভারসাম্য পরীক্ষা না করেই রাস্তায় নামানো হয়েছে। ফলে একটু দ্রুতগতিতে চলাচল ও মোড় নেওয়ার সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রিকশা মেকানিক ঢাকা মেইলকে বলেন, ঢাকার পুরনো রিকশায় মোটর ইঞ্জিন ও ব্যাটারি সেট করে যেগুলো রাস্তায় নামানো হয়েছে এগুলোয় কারিগরি অনেক ত্রুটি রয়েছে। ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। আর যারা চালাক তারাও আগে থেকে ইঞ্জিনের রিকশা কখনো চালাননি। ফলে অনেক সময় নতুন ইঞ্জিনের রিকশার ভারসাম্য রাখতে পারেন না। দ্রুত চালাতে গিয়ে, মোড় নিতে উল্টে যায়। তবে কিছু দিন চালানোর পর নতুন চালকরাও ভারসাম্য বজায় রাখতে শিখে যান।
রাজধানীর অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়কগুলোয় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল। এই রিকশার দাপটে বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ির গতি কমে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশের কোনো ধরনের নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করেই সব রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব রিকশা। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রধান সড়কে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না বলে ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে রাস্তার অবস্থা ভিন্ন। বিভিন্ন মোড় ও সড়কের একটা বড় অংশ এখন এই ধরনের রিকশার দখলে।
অনুমোদনহীন এসব রিকশা চালক ট্রাফিক আইন যেমন জানেন না তেমনি তোয়াক্কাও করেন না। যান্ত্রিক ত্রুটি সম্বলিত এই রিকশার চলাচলে নিয়মিত রাস্তায় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। রাজধানীবাসীর অভিযোগ, পায়ে চালিত রিকশার তুলনায় ইঞ্জিনের রিকশা অনেক বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিপ্রবণ। কিন্তু বাধ্য হয়ে এই ধরনের রিকশায় উঠতে হয়।
বিআরটিএ, যাত্রী অধিকার সংগঠন, পুলিশ ও অন্য অংশীজনের হিসাবে, ব্যাটারি ও যন্ত্রচালিত তিন চাকার অবৈধ যানবাহন এখন ৬০ লাখের বেশি। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে আছে প্রায় ৫০ লাখ। আর ঢাকায় আছে ১০ লাখের মতো। কেউ কেউ মনে করেন, ব্যাটারি ও যন্ত্রচালিত রিকশার সংখ্যা ১৫ লাখের কম হবে না, যা ক্রমাগত দ্রুত বাড়ছে।
এএসএল/জেবি