শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ঢাকা

অলিতে-গলিতে এলপিজির মজুদ, ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ‘আইন’

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

অলিতে-গলিতে এলপিজির মজুদ, ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ‘আইন’

রাজধানীতে গত কয়েক বছরে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বা সিলিণ্ডার গ্যাসের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে৷ নগরীর ঘরে ঘরে এখন এলপিজি ব্যবহার করা হয়৷ চাহিদার কারণে রাজধানীর অলি-গলিতে গড়ে উঠেছে এলপিজি সরবরাহের দোকান৷ ঝুঁকিপূর্ণভাবে করা হচ্ছে মজুদ।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নবনির্মিত কোনো আবাসিক স্থাপনায় পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগ দেবে না তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। ফলে নতুন স্থাপনায় ওঠা নগরবাসীকে বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে এলপিজি৷ আবার রাজধানীর যেসব স্থাপনায় তিতাসের গ্যাস সংযোগ আছে সেখানেও গ্যাস সংকটের কারণে ব্যবহার করা হয় এলপিজি সিলিন্ডার।


বিজ্ঞাপন


ধানমন্ডির শংকর এলাকার বাসিন্দা জান্নাত আরা মিষ্টির বাসায় তিতাস সংযোগ থাকলেও তিনি এলপিজি ব্যবহার করেন।

এর কারণ জানতে চাইলে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার এলাকায় গ্যাস সংকট প্রকট। সকাল থেকে দুপুর ২টা-৩টা পর্যন্ত গ্যাসের দেখা মেলে না। দুপুরের পর এলেও সন্ধ্যায় পর আবার চলে যায়। শীত বা গরমকাল— সারাবছর একই অবস্থা। তবে শীতে অবস্থা বেশি খারাপ হয়, গ্যাস থাকে না বললেই চলে।

তিনি আরও বলেন, গ্যাস সংকট থাকলেও মাস শেষে বিল কিন্তু ঠিকই দিতে হয়। সিলিন্ডার থাকায় রক্ষা পেয়েছি। কিন্তু এই কারণে মাসের খরচ বেড়ে গেছে। কবে সমাধান হবে কেউ জানে না৷

বাড়তি খরচের মাধ্যমে সংকটের হাত থেকে সাময়িক রক্ষা পেলেও এলপিজি সিলিন্ডার দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না অনেকেই।


বিজ্ঞাপন


ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের এক হিসাব বলছে, ২০২৩ সালে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ফলে ২১০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে হতাহতের সংখ্যাও কম নয়।

জানা গেছে, বাজারে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩০টি প্রতিষ্ঠানের অন্তত দুই কোটি সিলিন্ডার রয়েছে।

তবে এ বিষয়ে কোনো ধরনের তদারকি নেই ফায়ার সার্ভিসের। যা অকপটে স্বীকার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের সহকারী পরিচালক আনোয়ারুল হক।

ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারের বিষয় বিস্ফোরক অধিদপ্তর দেখে৷ ফায়ার সার্ভিস দেখে না। ফায়ার সার্ভিস দেখে শুধু ফায়ারের লাইসেন্স আছে কিনা, সংশ্লিষ্ট দোকানের সেফটি আছে কিনা। ওই দোকানের অগ্নিনিরাপত্তা কি আছে, ওইটা আমরা দেখি।

যেসব দোকানে সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে সেখানে কোনো ধরনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আমাদের চোখে পড়েনি— এই প্রতিবেদকের এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই দমকল কর্মকর্তা বলেন, আমাদের বেশকিছু টিম ইতিমধ্যে ঢাকা শহরের বিভিন্ন মার্কেটে গিয়েছে। এখন মেইনলি বড় বড় যে শপিংমল, মার্কেট, বহুতল ভবন, এগুলোতে যাচ্ছে৷ ছোট ছোটগুলো এখন পর্যন্ত ওইরকম যাওয়া হচ্ছে না। আগে বড় বড়গুলোতে যাচ্ছে আরকি।

বিষয়টি নিয়ে বিস্ফোরক অধিদপ্তরে কথা বলতে গেলে উঠে আসে ভিন্ন তথ্য। সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঢাকা অফিসে তাদের কর্মকর্তাই আছেন মাত্র চারজন৷ যার মাধ্যমে প্রায় দুই কোটি মানুষের শহরের বিস্ফোরক বিষয়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার তদারকি করা হয়।

অরক্ষিতভাবে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার ও সংরক্ষণের বিষয়ে এ কর্মকর্তা দিয়েছেন আরও কিছু তথ্য। তিনি জানান, আইনের কারণে তাদের হাত-পা অনেকটা বাধা।

এলপিজি বিধিমালা ২০০৪ (সংশোধিত ২০১৬)- এ গ্যাস সিলিন্ডার মজুদের বিষয়ে বেশ ছাড় দেওয়া হিয়েছে।

বিধিমালার ৬৯ ধারা এলপিজি মজুদে বাধা-নিষেধ সংক্রান্ত। যার (১) এ বলা হয়েছে, লাইসেন্স ব্যতীত কোনো ব্যক্তি এলপিজি মজুদ করিতে পারবেন না।

তবে, উপধারায় আবার বিষয়টি শিথিল করা হয়েছে৷ উপবিধি (১) বলা হয়েছে- (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, লাইসেন্স ব্যতীত নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে এলপিজি মজুদ করা যাইবে, যথা:- (ক) সিলিন্ডারে অনধিক ১২৫ (একশত পঁচিশ) কিলোগ্রাম এলপিজি মজুদকরণ; (খ) ১০ (দশ) টি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডারে এলপিজি মজুদকরণ।

অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই ১২৫ কেজি পর্যন্ত এলপিজি সংরক্ষণ করতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা অনেক কিছুর ব্যত্যয় দেখি। কিন্তু আইনে তো তাকে ছাড় দেয়া আছে৷ ১২৫ কেজি এলপিজি সে নিজ জিম্মায় রাখতে পারবেন। আমি কোন আইনের বলে কোনো হোটেল মালিককে বলবো, আপনি দুই-তিনটা সিলিন্ডার একত্রে রাখবেন না। কিংবা কোনো ভবন বা সিলিন্ডারের দোকানিকে কিভাবে বলবো?

তবে বিষয়টি সম্পর্কে সতর্কতা আছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা৷ তিনি বলেন, সিলিণ্ডারে গ্যাস ঢুকানোর ক্ষেত্রে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়৷ এ বিষয়ে নজরদারিও আছে৷ কোনো সিলিন্ডার মেয়াদ না থাকলে বা ত্রুটি থাকলে তা ধরা পড়ে এবং সেটিকে বাতিল করা হয়৷ এছাড়া আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক সতর্কতামূলক প্রচারণাও চালাচ্ছি।

কারই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর