শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ঢাকা

গ্যাস সংকটে ইফতার-সেহরিতে চরম ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

গ্যাস সংকটে ইফতার-সেহরিতে চরম ভোগান্তি

রাজধানীর অনেক এলাকাতেই বছরের বেশিরভাগ সময় আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাস নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়। পবিত্র রমজান মাসে সেই গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। দিনের বেলা কোনোরকমে মিটিমিটি করে চুলা জ্বললেও বিকেল হতে না হতেই বন্ধ হয়ে যায় গ্যাসের চুলা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোজাদারদের ইফতার তৈরিতে। রাতে গ্যাস আসলেও চাপ থাকে খুবই কম। ফলে সেহরির রান্নাবান্নাতেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। রাজধানীর মুগদা, মান্ডা, মানিকনগর, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, মিরপুরসহ বেশকিছু এলাকায় এই অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবশ্য এসব এলাকার আবাসিক গ্রাহকরে এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

রমজানে প্রতিটি মুসলিম পরিবারে রান্নাবান্নার বিশেষ আয়োজন থাকে। পরিবর্তন আসে খাবারে মেনু ও সময়ের। বছরের অন্য সময় যাই হোক, রোজায় ইফতার ও সেহরি খেতে হয় নির্ধারিত সময় অনুযায়ী। এমন পরিস্থিতিতে আবাসিকের গ্রাহকদের বাধ্য হয়ে রান্নার গ্যাসের জন্য বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। বাসায় গ্যাসের লাইন থাকার পরও এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে গ্যাসের এই সংকট শিগগিরই কাটছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


বিজ্ঞাপন


রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, শীতকাল চলে যাওয়ার পর আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও সময়মতো রান্নার জন্য তা যথেষ্ট নয়। ঠিকমতো গ্যাস না পেলেও গ্রাহককে প্রতি মাসে নির্ধারিত বিল কিন্তু ঠিকমতোই পরিশোধ করতে হচ্ছে। গ্যাস না পাওয়ায় বিকল্প হিসেবে এলপিজি বা ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করায় গ্রাহকের রান্নার খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে এটি বাড়তি মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষের জন্য।

মান্ডা এলাকার একজন গৃহিণী বলেন, বিকেল ৫টা বাজে, ঘণ্টাখানেক পর ইফতার। এখনও চুলায় গ্যাস আসেনি। সারাদিন তো গ্যাস থাকেই না, ইফতারের সময়ও গ্যাস পাচ্ছি না।

রাশিদ নামে একজন বলেন, রোজার মাসে অন্তত গ্যাসটা দেন। না পারলে মাসে যে এক হাজার ৮০ টাকা বিল নেন, সেটা মওকুফ করেন। তাও যদি না পারেন তাহলে ইলেকট্রিক চুলা কিনে দেন এবং মাসে মাসে তার বিলটা দিয়ে দেন।

আরও পড়ুন

সিটি করপোরেশন এলাকায় থেকেও মাটির চুলাই ভরসা!
ইফতার-সেহরিতে গ্যাস সংকট আদাবর-মোহাম্মদপুর-শংকরে
পানির সংকটে এলাকা ছাড়ার উদ্যোগ!
শুধু রমজানেই কেন পানির সংকট?

গ্যাস সংকটের কথা স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, যেসব বাসাবাড়িতে গ্যাসের সংযোগ আছে, যেহেতু আমাদের একটি মাত্র এফএসআরইউ কাজ করছে, ৩০ মার্চের আগে আরেকটি এফএসআরইউ আসবে না। সুতরাং আমাদের যে আমদানি করা গ্যাস ছিল, ২০ শতাংশ আমরা আমদানি করতাম, তার মধ্যে ১০ শতাংশ কমে গেছে। আমাদের নিজেদের যে গ্যাস ছিল তা থেকেও আমাদের উত্তোলন কমে গেছে। এগুলো বিবেচনায় এনে বাসাবাড়ির গ্যাসের ব্যাপারে আমাদের বিকল্প একটি সমাধান তো আছেই, এলপিজি। সবাইকে অনুরোধ করব, যেসব এলাকায় গ্যাসের স্বল্পতা দেখা যাচ্ছে তারা যেন এলপিজি ব্যবহারের দিকে নজর দেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজস্ব গ্যাসের উৎপাদনও কিছুটা কমেছে। সব মিলিয়ে আমরা আশা করছি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারব। তবে রমজানে কিছু সময় বিদ্যুৎবিভ্রাট হতে পারে, যোগ করেন তিনি।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতিদিন ৩৪ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে ৩৫০ থেকে ৩৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় যা মোটেও সন্তোষজনক নয়। ফলে রমজানেও আবাসিকে গ্যাস সংকট থেকেই যাচ্ছে।

আবাসিকে গ্যাস সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, গ্রাহকের অভিযোগ আছে, অভিযোগ থাকবেই। যারা প্রথম দিকে লাইন নিয়েছেন তারা ঠিকমতো গ্যাস পাবেন, আর যারা শেষ দিকে লাইন নিয়েছেন তারা ঠিকভাবে পাবেন না। ওই লাইনে অতিরিক্ত গ্রাহক হলে তো তারা গ্যাস পাবেন না।

এদিকে বিদ্যমান এক চুলা ৯৯০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৭৯.৭০ টাকা, দুই চুলা ১০৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৯১.৯২ টাকা করতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ডিসেম্বরে একটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে বিইআরসি। পাশাপাশি বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম বাড়াতে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিল বলে জানা গেছে। তখন বিইআরসি জানায়, মূল্যায়ন কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস অনুসন্ধান না করে আমদানি নির্ভরতার কারণে গ্যাস সংকটে পড়তে হচ্ছে। এ বিষয়ে ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিতে। কিন্তু সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না। তারা আমদানির দিকেই বেশি ঝুঁকছে। ফলে এই ধরনের সংকট হবে, এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া গ্যাস চুরি এবং অবৈধ সংযোগের কারণে সংকট আরও বাড়ছে। যতদিন এই সমস্যাগুলো সমাধান না হবে ততদিন সংকট থাকবেই।

টিএই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর