শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ঢাকা

শুধু রমজানেই কেন পানির সংকট?

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

শুধু রমজানেই কেন পানির সংকট?

রমজানে এলেই এই এলাকায় পানির সংকট দেখা দেয়। এবারও রমজান শুরু দুদিন আগে যথেষ্ঠ পানি ছিল। কিন্তু রমজান শুরুর দিন থেকে সমস্যা শুরু। সমস্যা এতটাই প্রকট যে ওয়াসার পানির অভাবে এখন পানি কিনেই খেতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের। সকাল, দুপুর, বিকেলে পানি মিলে না। রাতে পানি এলেও তার জন্য দীর্ঘসময় বসে থাকতে হয়।

রাজধানীর পূর্ব কাজীপাড়ার মাদ্রাসা রোডের ৯ নম্বর গলির বাসিন্দা খালেকুজ্জামান তারা মিয়া বলেন, উত্তর কাজীপাড়া, ইটখোলা, মাদবর পুকুর ও কেয়ারিমুনের সামনেসহ ছয়টি পানির পাম্প রয়েছে। এত বড় একটি জোনে ছয়টি পাম্প থাকার পরও আমরা কেন পানি পাই না


বিজ্ঞাপন


তারা মিয়ার অভিযোগ, পানির পাম্পের দায়িত্বে থাকা চাবিওয়ালা ও রাজনৈতিক নেতারা এই কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। এসব সমস্যা নিয়ে মিরপুরের ওয়াসা অফিসে তারা বহুবার অভিযোগ দিলেও কাজ হয়নি। আমাদের কি পরিমাণ সমস্যা হয় তা বলে বোঝানো যাবে না।

পূর্ব কাজীপাড়ার ইটখোলা, মাদ্রাসা রোড, বিয়াম গলি, কদমতলাসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের একই অভিযোগ। কিন্তু এই এলাকার ওয়াসা কর্মকর্তার ভাষ্য, এসব এলাকায় পানির কোনো সমস্যাই নেই।

পূর্ব কাজীপাড়ার ৯নং গলির নতুন ভাড়াটিয়া তাবাস্মুম আকতার জানান, তারা গত মাসে ৯ নং রোডের গলির শেষ মাথায় থাকা ৯৮ নম্বর বাসায় উঠেছেন। রমজানে টানা চারদিন বাসায় কোনো পানি পাননি।

আরও পড়ুন

ইফতার-সেহরিতে গ্যাস সংকট আদাবর-মোহাম্মদপুর-শংকরে
সিটি করপোরেশন এলাকায় থেকেও মাটির চুলাই ভরসা!
গ্যাস সংকটে ইফতার-সেহরিতে চরম ভোগান্তি
পানির সংকটে এলাকা ছাড়ার উদ্যোগ!

অন্যদিকে কয়েকদিন আগে টানা এক সপ্তাহ পানি পাননি মাদ্রাসার গলির আব্দুল হাই। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ পানি পাইনি। এখন কিছুটা পানি পাচ্ছি। যখন পানি ছিল না তখন আমার বাসার সামনে দুটা পাম্প আছে তাদের কাছে পানি ভিক্ষা করে নিয়ে কাজ সারছি। এই এলাকার লোকজন ভয়ে দিনে গোসল করে না। রাতে পানি আসলেও সেই পানি অল্প সময়েই শেষ হয়ে যায়। এরপর পানি না আসা পর্যন্ত ভোগান্তি পোহাতে হয়। দিনে ও রাতে সমানতালে পানির কষ্ট হয়।

পূর্ব কাজীপাড়ার ২৬৫ নম্বর এলাকার ৯নং গলির বায়তুল মামুর জামে মসজিদের পাশে থাকেন জুলফিকার হায়দাল রিপন। তিনি বলেন, এক গাড়ি পানি কিনতে লাগে ৩০০ টাকা। এ জন্য সরবরাহকারীদের বকশিশও দিতে হয়। সবমিলে এক গাড়ি পানি কিনতে ১ হাজার টাকা চলে যায়। পানির জন্য কল করলে তা পেতে সপ্তাহ পার হয়ে যায়। প্রতি রমজানের দুই থেকে তিন দিন আগ থেকে এই সমস্যা শুরু হয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, আগে পুরো মিরপুর এলাকায় মাত্র একটি পাম্প দিয়েই পানির চাহিদা মেটাতেন তারা। কিন্তু এখন শুধুমাত্র পূর্ব কাজীপাড়ায় ছয়টি পানির পাম্প থাকার পরও কেন প্রতি রমজানে পানির সংকট বা ভোগান্তি হবে?

তারা আরও অভিযোগ করেন, এটা পানির সমস্যা নয়, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তাদেরকে পানি কিনতে বাধ্য করা হয়। এছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়তি টাকা আদায় এবং বকশিশের জন্যই ওয়াসার লোকজন এটি করে থাকে। শুধু তাই নয়, ঈদের পরদিন থেকেই পানির সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। বছরের ১১ মাস কোনো সমস্যা না থাকলেও রমজানে তাদের ভুগতে হয়।

মাদ্রাসা রোডের জব্বার আহমেদ বলেন, এলাকার কাউন্সিলরও তাদের কাছে অসহায়। তিনি ওয়াসার লোকজনকে কল করেন কিন্তু তারা বিষয়টি তেমন নজরে নেয় না। যেসব বাড়িওয়ালার টাকা-পয়সা আছে তারাই শুধু ওয়াসার লোকজনের কাছ থেকে সহজে পানি পান। অন্যরা অসহায়।

সাব-মার্সিবল পাম্প বসাচ্ছেন অনেকে

সালাম নামে এক স্কুলশিক্ষক বলছিলেন, তিনি যে ভবনে থাকেন সেটির মালিক সম্প্রতি সাব-মার্সিবল পাম্প বসানোর জন্য পাইপ ও যাবতীয় জিনিসপত্র কিনে এনেছেন। দুই একদিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে। তিনি জানান, পূর্ব কাজীপাড়ার মাদ্রাসা রোডের অনেক বাড়িওয়ালাই এখন ওয়াসার অপেক্ষায় না থেকে নিজ উদ্যোগে সাব-মার্সিবল পাম্প বসাতে শুরু করেছেন।

Gas_Water--Kayes--02--Inner

বাসা ছাড়ছেন অনেকে

পূর্ব কাজীপাড়ায় পানির এতটাই সমস্যা যে অনেক ভাড়াটিয়া বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। রোহান নামে ওই এলাকার এক ভাড়াটিয়া বলেন, সামনের মাসে আমিও চলে যাব। কারণ পানিই যদি না থাকে তাহলে গোসল করব কি দিয়ে, রান্নাইবা কি দিয়ে হবে?

একটি বাড়ির মালিক তানজিম জানান, তার বাসার তিনটি ফ্লাটের ভাড়াটিয়া গত মাসে পানির জন্য বাসা ছেড়েছেন।

একই অবস্থা শেওড়াপাড়ার বিন্দুবিত্ত গলি, পূর্ব শেওড়াপাড়ার জামতলা এলাকাতেও। সেখানেও সারাদিন পানি থাকে না। রাতে পানি আসলেও পরিমাণে কম।

পূর্ব শেওড়াপাড়ার জামতলা বাজারের ১১২৪/৩ নম্বর রোডের বাসিন্দা হাসান আল বান্না বলেন, আমরা সারাদিন কোনো পানি পাই না। পানি আসে রাত ১০টার পর, কখনো কখনো ১২টার পর।

এ বিষয়ে ওয়াসার মডস-১০ জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিক আহমেদ খান ঢাকা মেইলকে বলেন, এলাকাটি আমার মধ্যে, তবে পূর্ব কাজীপাড়ায় কোনো পানির সমস্যা নাই। এ বিষয়ে ওয়াসার জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

এমআইকে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর