শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ঢাকা

ওয়াসার দুই ট্যাপই ভরসা!

এস এম শাহাদাত হোসেন অনু
প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২১ পিএম

শেয়ার করুন:

ওয়াসার দুই ট্যাপই ভরসা!

ঢাকা মহানগরীর দুটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এলাকা ওয়ারী ও নারিন্দা। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এই দুটি এলাকার বাসিন্দাদের তীব্র পানির সংকটে ভুগতে হচ্ছে। ওয়াসার লাইন থেকে বাসায় প্রয়োজন মতো পানি মিলছে না। সংকটের এই সময়ে ওয়াসার দুটি ট্যাপই তাদের ভরসা।

আগে নারিন্দা কাঁচা বাজার মোড়, দক্ষিণ মৌসুন্ডি বাজার, ভুতের গলির প্রবেশ পথ, চিনিরদানা জামে মসজিদের নিকট ও রহমান গলিতে থাকা ৫টি ওয়াসার ট্যাপ থেকে কলসি বা বোতলে করে পানি সংগ্রহ করতো স্থানীয়রা।


বিজ্ঞাপন


কিন্তু বাড়ি বাড়ি পানি দেওয়ার কথা বলে সেসব ট্যাপের সংযোগ বন্ধ করে দেয় ওয়াসা। ফলে স্থানীয় অনেক বাসা-বাড়ি ছাড়াও প্রান্তিক কিছু মানুষ বিশুদ্ধ পানি পান নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন।

পরবর্তীতে এলাকাবাসীর দাবিতে ওয়াসার ৫টি ট্যাপের মধ্যে ২টি চালু করা হয়। এখন পানি সংগ্রহ করার একমাত্র উপায় এই ২টি ট্যাপ থেকে পানি নেওয়া। তবে ট্যাপ সংখ্যা কম হওয়ায় পানি সংগ্রহের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

অনেককে বাধ্য হচ্ছেন টাকা দিয়ে পানির জার কিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ সারতে হচ্ছে। এতে স্থানীয়দের রান্না, খাওয়া ও গোসলসহ নিত্য-প্রয়োজনীয় কাজের ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগে কোথাও কোথাও ময়লা হলেও পানি মিলত। সে পানি খাওয়া না গেলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা যেত। কিন্তু এখন সে পানিরও দেখা মিলছে না। ফলে চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন তারা। কবে নাগাদ এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে সে বিষয়ে ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে বারবার ধরনা দিয়েও মিলছে না জবাব।

রমজানে পানির অভাবে ইফতার, সেহরিসহ আনুষঙ্গিক কাজকর্ম সারতে ভোগান্তিতে পড়ছেন এলাকাবাসী। সারাদিন রোজা রেখে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ তারা।

সরেজমিনে পুরান ঢাকার নারিন্দা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ২টি ট্যাপ থেকে পানি সংগ্রহের দীর্ঘ লাইন। সেটিও মাঝে মাঝে বন্ধ থাকে। বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই দাঁড়িয়ে আছে পানির এই দীর্ঘ সারিতে।

কাবলিতলা এলাকার তুরান আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ৬-৭ মাসেরও বেশি সময় ধরে ওয়াসার পানি একদম ব্যবহার করা যায় না বললেই চলে। পাশের একটি জায়গা থেকে পানি কিনে ব্যবহার করতে হয়। ওয়াসার পানিতে এতই দুর্গন্ধ যে, ফোটানোর পরও কমে না। আগে ওয়াসার লাইনের পানি ফুটিয়ে খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহার করা যেত। তবে এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এ পানি নাকের কাছেই নেওয়া যায় না। খাওয়া বা রান্নার কাজে ব্যবহার তো দূরের কথা— এই পানি দিয়ে গোসলও করতে পারেন না এলাকার বাসিন্দারা।

রহমান গলির বাসিন্দা সালাম ঢাকা মেইলকে জানান, আগে টিউবওয়েল থেকে নিয়ে পানি খেতাম। ওয়াসার লাইন সংযুক্ত ছিলো। এখন ওয়াসার ওই লাইন নাই। পানির মধ্যে অনেক গন্ধ। খাওয়া যায় না, বিভিন্ন ধরনের ময়লা বের হয়ে আসে।

দক্ষিণ মৌসুন্ডি এলাকার মাছুম বিল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, এখন রমজান মাস সবার পানির একটা বাড়তি চাহিদা থাকে। বিশেষ করে সেহরি ও ইফতারের আগ মুহূর্তে পানির প্রয়োজন বেড়ে যায়। সুস্থভাবে রোজা রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন। কিন্তু এলাকায় বিশুদ্ধ পানির যথেষ্ট অভাব। যখনই পানি নিয়ে আসতে যাই, তখনই লম্বা ভিড় দেখা যায়। ভুতের গলির প্রবেশ পথে পানির কল থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এটাতে পানির সংযোগ নেই। ময়লা আসে। দূরে থেকে গিয়ে পানি আনতে হয়। মাঝে মাঝে পানির বোতল কিনে আনতে হয়। আর সময় না থাকলে লাইনের পানি খেয়েই পানির চাহিদা মেটাতে হয়।

Gas_Water--Anu_Narinda--Inner

নারিন্দা এলাকার একটি মেসের শিক্ষার্থী মাহতাব রহিম ঢাকা মেইলকে জানান, বেশ কয়েক মাস ধরে পানির সংকট চলছে। প্রায় প্রতিদিন সকালে পানি থাকে না, গোসল করার জন্য দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগে। মালিকের কাছে অভিযোগ জানালে বলে পানির সরবরাহ এখন কম, তাই পানি দেওয়া যাচ্ছে না।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সারোয়ার হোসেন আলো ঢাকা মেইলকে বলেন, পানির চাহিদা মেটাতে আমরা কাজ করছি। যেসব সমস্যা ওঠে আসছে সেটা নিয়ে কাজ করা হবে। কোনো ভোগান্তির বিষয় থাকলে অবশ্যই মিটানোর চেষ্টা করব।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর