শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

পদোন্নতি নিশ্চিতে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:১৪ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

চিকিৎসা শিক্ষার মানোন্নয়ন, ক্যাডার বৈষম্য নিরসন ও এমবিবিএস ডিগ্রির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অক্ষুণ্ন রাখতে দ্রুত সুপারনিউমারারি পদোন্নতির দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এ লক্ষ্যে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা। অন্যাথায় এ সময়ের পর থেকে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কলম বিরতির ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডিরেক্টর কনফারেন্স রুমে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।


বিজ্ঞাপন


সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরামের আহ্বায়ক ডা. মির্জা মো. শামসুল আরেফিন। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের নানা বিষয়ে কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাদের সবটুকু পরিশ্রম ও সভতা নিয়ে এদেশের মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। জুলাই-আগষ্টের গনহত্যায় তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পাহাড়সম দৃঢ়তায় চিকিৎসা সেবায় ঝাপিয়ে পড়েছে। কিন্তু বিগত ১৫ বছরের বেশী সময়ের ফ্যাসিস্ট শাসনে স্বাস্থ্য প্রশাসন স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষাকে ভঙ্গুর দশায় পরিণত করেছে। এই অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের ফলে ২৬টি ক্যাডারদের মাঝে স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত ও অবহেলা সহ্য করতে হয়েছে।

বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিসিএস স্বাস্থ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চাকুরির নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর পদোন্নতি দেওয়া হয় কাজের মান ও গতিশীলতা বৃদ্ধি করার জন্য। নিয়ম অনুযায়ী, বিভাগীয় পরীক্ষায় পাস এবং ফাউন্ডেশন ট্রেনিং সম্পন্ন করা থাকলে চাকরি স্থায়ী হয়। চাকরি স্থায়ী এবং চার বছর হলে সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা দেওয়া যায়। উত্তীর্ণরা পদোন্নতির যোগ্য হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য ক্যাডারের চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে এর সঙ্গে যুক্ত করতে হয় এফসিপিএস, এমডি ও ডিপ্লোমার মতো স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি। যা মোটেও কোনো সহজ সাধা ব্যাপার নয়। এর পরেও বিসিএস ব্যাচ ভিত্তিক পদোন্নতি না দিয়ে ‘পদ নাই পদোন্নতি নাই’ নীতি মেনে চলা হয়।

অবহেলা ও সংকটের চিত্র তুলে ধরে জানানো হয়, বর্তমানে সরকারি ৩৭টি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে এবং ডেন্টাল ইউনিটে সমন্বিত স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। প্রতি বছর পুরাতন ও নতুন মেডিকেল কলেজগুলোতে মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। পুরাতন গুলোতে ২৫০ জন এবং নতুন গুলোতে ৭৫ থেকে ১০০ জন শিক্ষার্থী প্রতি বছর ভর্তি হয়। তবে সে অনুপাতে পদ সৃষ্টি না হওয়াতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ব্যবধান অনেক বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় দেশের মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ডিগ্রির ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব মেডিকেল এডুকেশনের স্বীকৃতি ২০২৫ এর জানুয়ারিতে শেষ হয়ে গিয়েছে। যা বর্তমানে আবেদনের প্রেক্ষিতে আপাতত বহাল আছে।


বিজ্ঞাপন


আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের অভিযোগ করে বলা হয়, বিভিন্ন বিষযে পদোন্নতির সোপান বা ক্রমে অসামজ্যতা রয়েছে। কোনো সাবজেক্টে সরাসরি সহকারী অধ্যাপক আবার কোনো সাবজেক্টে আরপি বা আরএস, জুনিয়র কনসালটেন্ট ও সহকারী অধ্যাপক। এর ফলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য তৈরি হয়। কোনো সাবজেক্টে আবার ৬ষ্ঠ গ্রেডের তেমন পদই নেই। কিছু বিশেষ ক্যাডারের চাকরিতে নির্দিষ্ট সময়কাল পর ২য় ও ১ম গ্রেড প্রাপ্ত হয়, কিন্তু স্বাস্থ্য ক্যাডারকে কোনো কারণ ছাড়াই এটা থেকে বঞ্চিত করা হয়।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পদোন্নতির যোগ্য সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পদোন্নতি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরাম। অন্যথায় আগামী ৫ মার্চ থেকে, সারাদেশের সকল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রতিদিন ২ ঘণ্টা (সকাল ৯টা থেকে ১১টা) কলম বিরতি পালন করবেন। এরপর প্রয়োজনের বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। একইসঙ্গে তাদের কর্মসূচিতে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হলে এর দায় মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে বলেও সতর্ক করেন চিকিৎসকরা।

এমএইচ/ইএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন