সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ডেলটা হাসপাতালে জন্ডিসের চিকিৎসা নেওয়া নবজাতকের হাত ভাঙলো কে?

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১২ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

জন্ডিসের চিকিৎসা করতে গিয়ে নবজাতকের হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, গত ৩ এপ্রিল সাত দিনের নবজাতকের শারীরিক অসুস্থতার কারণের ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এ কে খাইরুল আনাম চৌধুরীর অধীনে ভর্তি করেন মিরপুরের বাসিন্দা নবজাতকের বাবা মো. নূরের সাফাহ্। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা চলার সময়ে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ নবজাতকের বাবার। বিষয়টি নিয়ে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


বিজ্ঞাপন


জানতে চাইলে নূরের সাফাহ্ ঢাকা মেইলকে বলেন, গত ৩ এপ্রিল সাত দিনের নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি থাকায় ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি ফটোথেরাপি দেওয়ার জন্য। ভর্তির পরপরই তারা জানায় যে, দীর্ঘসময় আনইন্টারাপ্টেডলি থেরাপি নেওয়ার জন্য তারা দুই থেকে তিনবার ব্রেস্ট ফিডিং করতে দেবে এবং বাকি সময় ব্রেস্ট পাম্প করে তাদের কাছে দিলে তারাই নিজ দায়িত্বে বাচ্চাকে খাইয়ে নেবে। ট্রিটমেন্ট চলাকালীন সময়ে কেউ বাচ্চার কাছে যেতে পারবে না এবং দেখতে পারবে না। রাত ১২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত মা ও বাচ্চার কাছে যেতে পারবে না। তাদের নিয়মানুযায়ী, আমার স্ত্রী বাচ্চাকে রাত ১২টায় স্বাভাবিকভাবে খাইয়ে দিয়ে আসে। সকাল ৭টায় তারা পুনরায় তাকে খাওয়ানোর জন্য ডেকে নিয়ে গেলে আমার স্ত্রী অনেক চেষ্টা করেও খাওয়াতে পারেনি, কারণ বাচ্চা ঘুমাচ্ছিল এবং কোনোভাবেই ঘুম থেকে উঠছে না। কর্তব্যরত নার্স জানায় যে, ঘুম থেকে উঠলে খাওয়ানোর জন্য ডেকে দেবে। তখন সে আবারও ব্রেস্ট পাম্প করে তাদের নিকট খাওয়ানোর জন্য দিয়ে আসে।

তিনি বলেন, পরের দিন সকাল ১০টায় ডিউটি চিকিৎসক জানায়, যে বাচ্চার বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এসেছে তাকে রিলিজ দিয়ে দেবে আমরা যেন বিল ক্লিয়ার করে আসি। ১১টার দিকে তারা বাচ্চাকে তার মায়ের কাছে দিয়ে যায় এবং জানায় যে বাচ্চার ডান হাতে ক্যানোলা পরানোর কারণে ব্যথা আছে তাই এই হাত যেন কম নাড়ানো হয়। এখানে জানিয়ে রাখা ভালো যে, তখনো বাচ্চা ঘুমাচ্ছিলো এবং ফুল বডি কাঁথা দিয়ে মোড়ানো ছিল। বাসায় নিয়ে আসার পর কাঁথা থেকে বের করে খাওয়ানোর চেষ্টা করার সময় দেখা যায় যে, বাচ্চার ডান হাত কনুই এর উপরে ভাঙা যেটা টাচ করলেই সে মারাত্মকভাবে কান্না করছে।

6

‘হাত ভাঙা থাকার ব্যাপারটি বুঝার সাথে সাথেই ১২টার সময় আমরা পুনরায় তাকে ডেলটা মেডিকেল কলেজ এর নেওনেটাল ওয়ার্ডে নিয়ে যাই যেখানে সে ভর্তি ছিল। তাদেরকে দেখানোর পর ডিউটি ডক্টর জানায় যে, সে নিজে চেক করে দিয়েছিলো ডিসচার্জ করার আগে এবং তাদের দাবি আমরা বাসায় নেয়ার পর টানাটানি করে হাত ভেঙে ফেলেছি। মনে হচ্ছিলো গুলিস্তান থেকে মোবাইল কেনার মত কেনো চেক করে বাচ্চা নেইনি সেটা আমাদের অপরাধ,’ যোগ করেন নবজাতকের বাবা মো. নূরের সাফাহ্।


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, ‘এ পর্যায়ে তারা একটি এক্সরে করার অ্যাডভাইস দিয়ে আমাদের শ্যামলীর পঙ্গু হাসপাতালে যেতে বলে কারণ তাদের ওখানে এক্সরে করার উপায় নাকি নেই। এ পর্যায়ে আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়ে চলে আসি কারণ বাচ্চার ট্রিটমেন্ট আমাদের কাছে জরুরি ছিল। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ট্রিটমেন্ট চলাকালীন বাচ্চা ঘুমিয়েই ছিল এবং কোনোভাবেই তাকে খাওয়ানো যায়নি। সন্ধ্যার পরপরই বাচ্চা স্বাভাবিক হওয়া শুরু করে এবং খাওয়া শুরু করে। যেহেতু রাত ১২টায় ও বাচ্চা স্বাভাবিক ছিল এবং খাওয়াতে পেরেছে কিন্তু সকাল ৭টায় পুনরায় দেখার পর থেকে সে ঘুমিয়েই কাটিয়েছে তাতে আমাদের ধারণা রাতের কোনো এক সময়ে হাত ভেঙেছে এবং সেটা স্বাভাবিক দেখানোর জন্য তাকে কোনো ধরনের সিডেটিভ ব্যবহার করে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল যেন আমরা না বুঝতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই তাদের দ্বারা এই ঘটনা ঘটেছে তা স্বীকার করতে রাজি না এবং তদন্ত করে আমাকে জানাবে বলে আশ্বাস দেয়। আমি নিওনেটাল ওয়ার্ডের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে তারা জানায় যে, তাদের সেই ওয়ার্ডে নাকি সিসিটিভি নেই অথচ তাদের পুরো হাসপাতালে শতশত সিসিটিভি। এমন একটি সেন্সিটিভ ডিপার্টমেন্ট যেখানে আমি, বাচ্চার মা কেউ যেতে পারছি না, সেখানে নার্স বা চিকিৎসক কিভাবে নার্সিং করছে বা আদৌ করছে কিনা এবং তাদের কাজ আপনারা কিভাবে মনিটরিং করেন সিসিটিভি ছাড়া তা জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর পাইনি। তারা আশ্বাস দিলেও তাদের তদন্তে সঠিক কোনো কিছু উঠে আসবে না সেটা বুঝার বাকি নেই।’

জানতে চাইলে নূরের সাফাহ্ বলেন, ‘আমি আমার বাচ্চার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিচার চাই। আর কোনো বাচ্চার সাথে যেন এমন ঘটনা না ঘটে। সেইসঙ্গে এই হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করা হোক। কেননা, তাদের সেবা দেওয়ার যোগ্যতা নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাচ্চাকে যার অধীনে ভর্তি করেছি, তিনি সেবা দেননি। দিয়েছে অন্য চিকিৎসকরা। এটাও এক ধরনের প্রতারণা রোগীদের সঙ্গে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঠিক বিচার না করলে আমি আইনের আশ্রয় গ্রহণ করবো।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ডা. এ কে খাইরুল আনাম চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ডেলটা হাসপাতাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা মেইলকে জানান, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালের কারো গাফিলতি থাকলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসানকে ফোন করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

এসএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন