বুধবার, ২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ঈদে গ্রাম-গঞ্জের সড়কে বাড়ে দুর্ঘটনা, প্রস্তুত ঢাকার হাসপাতালগুলো

সাখাওয়াত হোসাইন
প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৫, ১০:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
  • ঈদে গ্রাম-গঞ্জে দুর্ঘটনা দুই-তিনগুণ বাড়ে
  • সক্ষমতা অনুযায়ী সেবা দিবে বড় বড় হাসপাতাল
  • এ বছর সেবা বেশি থাকবে নিটোরে

ঈদ করতে গ্রামে স্বজনদের কাছে যান রাজধানীবাসী। এসময় অতিরিক্ত গাড়ির পাশাপাশি বাড়ে অভিজ্ঞ-অনভিজ্ঞ চালকের সংখ্যা। আবার অনেকটা ফাঁকা সড়কে বেপরোয়া হয়ে ওঠে মোটরসাইকেল চালকরা। একদিকে ঈদের আনন্দ, অন্যদিকে ঈদ এলে বেড়ে যায় সড়ক দুর্ঘটনা।  ফলে প্রতি বছরই ঈদে ঘটে দুর্ঘটনা, দুর্ঘটনাস্থলেই মারা যান অনেকে। উপজেলা ও জেলা শহরে দুর্ঘটনায় গুরুত্বর আহত রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। ফলে নিরুপায় হয়ে সারাদেশ থেকে রোগীদের আসতে হয় রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে। ইতোমধ্যে দেশের মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দিতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ঢাকার বড় বড় হাসপাতালগুলো। এছাড়া বিভিন্ন রোগের রোগীদের চাপও সামলাতে হয় ঢাকার হাসপাতালকে। ইতোমধ্যে রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।


বিজ্ঞাপন


রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট দুর্ঘটনার ৪৪ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এছাড়া দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে বাস, ট্রাক-মাইক্রোবাস। আর ঈদ এলে তা অন্যান্য সময়ের তুলনায় গ্রাম-গঞ্জের সড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে দুই থেকে তিনগুণ।

এ বছর সেবা বেশি থাকবে নিটোরে

এদিকে রোগীদের সেবা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দেশের বিশেষায়িত একমাত্র হাসপাতাল জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)। ঈদের সরকারি ছুটিতেও রোস্টার অনুযায়ী হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করবেন চিকিৎসকরা।

জানতে চাইলে নিটোরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আবুল কেনান ঢাকা মেইলকে বলেন, ঈদের ছুটিতে আসা রোগীদের সেবায় কোনো ধরনের ব্যাঘাত যেন না ঘটে সেদিকে সর্বোচ্চ নজর দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে রোস্টার অনুযায়ী টিম গঠন করা দেওয়া হয়েছে। ১০০ চিকিৎসক ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন। হাসপাতালের সক্ষমতা অনুযায়ী রোগীরা সেবা পাবেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর চিকিৎসকসহ বিভিন্ন সেবা বেশি রাখা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


nitor

এই চিকিৎসক বলেন, নিয়মিত ওটি ২৮টি, জরুরি বিভাগে ওটি ৮টি খোলা থাকবে। সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে আটটি ওটি। এছাড়া প্রয়োজনে অন্যান্য সহযোগিতা নেওয়া হয়। রোগী সংখ্যা বেশি আসলে তা যেন সামাল দেওয়া যায়, কেননা সবাই প্রত্যাশা নিয়ে সেবা নিতে আসেন। তবে সবাইকে অনুরোধ চলাচলে সাবধান থাকার জন্য। তাতে রোগী সংখ্যা কমবে। ঈদের গাড়িগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাফেরা করে, এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকা প্রয়োজন।

ছুটিতেও সেবা চলমান ঢাকার বড় বড় হাসপাতালে

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে রোগীদের সার্বক্ষণিক সেবায় প্রায় দেড় হাজার চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারী দায়িত্ব পালন করবেন ঢাকা মেডিকেলে। জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে এবং পাশাপাশি ৮টি অপারেশন থিয়েটার সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে। এছাড়া ইনডোরে ১০০ এর অধিক চিকিৎসক সেবা দেবেন ঢাকা মেডিকেলে। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালগুলো চিত্রও এমনই।

জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. আসাদুজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, ঈদের সময় যে ধরনের রোগী (সড়ক দুর্ঘটনা) বেশি আসে, তাদের জন্য হাসপাতালের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া যাতে আমরা সকল রোগীকে নির্বিঘ্নে সেবা দিতে পারি, সে ধরনের প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের ওষুধ-পত্রের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা

ঈদে সারাদেশের হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। হাসপাতালগুলোকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, প্রতিটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত থাকবে। জরুরি বিভাগ ও লেবার রুম, ইমারজেন্সি ওটি সার্বক্ষণিক চালু থাকবে। অন্তঃবিভাগে ইউনিট প্রধানরা প্রতিদিন কাজের তদারকি করবেন। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো জরুরি ল্যাব, এক্স-রে সেবা সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে। ছুটি শুরু হওয়ার পূর্বেই ছুটির সময়ের জন্য পর্যাপ্ত ঔষধ, আই ভি ফ্লুয়িড কেমিক্যাল রি-এজেন্ট, সার্জিক্যাল সামগ্রী মজুত ও তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে স্টোর কিপার অথবা ছুটিকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফ অবশ্যই নিজ জেলা ও উপজেলার অবস্থান করবেন। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সার্বক্ষণিক চালু থাকবে।

dmc

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ছুটিকালীন কর্মস্থলে পর্যাপ্ত জনবল ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য ঈদের আগে ও পরে সমন্বয় করে জনবলকে পর্যায়ক্রমে ছুটি দেওয়া যাবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান নিরবচ্ছিন্ন জরুরি চিকিৎসা কার্যক্রম ও জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ছুটি প্রদান করবেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠান সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালককে অবহিত করে শুধু ঈদের ছুটির সময়ে নিজ জেলার মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় জনবল সমন্বয় করতে পারবেন।

অধিদফতর জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা ছুটিকালীন সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করবেন এবং ঈদের দিন কুশল বিনিময় করবেন। প্রতিষ্ঠান প্রধান ছুটি নিলে অবশ্যই বিধি মোতাবেক কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাবেন এবং দায়িত্ব গ্রহণকারী কর্মকর্তা সব দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম ও মোবাইল নম্বর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান ঈদের দিন রোগীদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন তদারকি করবেন এবং রোগীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান ঢাকা মেইলকে বলেন, হাসপাতালগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা যেন পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। হাসপাতালগুলো সক্ষমতা অনুযায়ী রোগীদের সেবা দেবে।

এসএইচ/এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এই ক্যাটাগরির আরও খবর

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর