যুগের পর যুগ ধরে অযত্ন আর অবহেলায় জয়পুরহাটে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে জব্দ হওয়া আদালতের বিভিন্ন মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত। অন্যদিকে প্রায় তিন দশক ধরে আইনি জটিলতায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। রাষ্ট্রের পক্ষের আইনজীবী বলছেন, এগুলো ভালোমতো সংরক্ষণ না করলে বিঘ্ন ঘটতে পারে ন্যায় বিচারে। এদিকে আলামতগুলো সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
জানা গেছে, সীমান্তবর্তী জয়পুরহাট জেলায় বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মাদকসহ নানা অপরাধের ঘটনায় বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়। পাশাপাশি কাগজপত্রবিহীন আটক করা বিভিন্ন যানবাহনের সংখ্যাও কম নয়। প্রায় তিন দশক ধরে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসন ভবনের পাশে ও ট্রেজারি অফিসের সামনে মালখানা হিসেবে কয়েকটি রুমে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা জজ আদালতের বিভিন্ন মামলার আলামত সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু মালখানার রুমে জায়গা সংকটের কারণে বর্তমান অতিরিক্ত মালামাল বারান্দা ও খোলা আকাশের নিচে যত্রতত্র ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে এখানে রয়েছে প্রাইভেটকার, অটোরিকশা, ভ্যান, সাইকেল, চোলাইমদ, মাদকদ্রব্য, দেশীয় অস্ত্রসহ জব্দ করা বিভিন্ন মালামাল। খোলা আকাশের নিচে ধুলোর আস্তরণে বোঝার উপায় নেই কোনটা সচল আর কোনটা অচল। বছরের পর বছর অযত্ন অবহেলায় বেশ কিছু যানবাহনের কাঠামো বা চেসিস ছাড়া অবশিষ্ট কিছুই নেই। অন্যান্য আলামতগুলোর একই অবস্থা। ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে গাড়িগুলোর পার্সসহ বিভিন্ন মালামাল। কয়েকবছর আগে জেলা জজ আদালতের সামনে দৃষ্টিনন্দন চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বহুতল ভবন নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু অরক্ষিত মামলার আলামতগুলো সংরক্ষণের জন্য স্থানান্তর করা হয়নি। ন্যায় বিচারের স্বার্থে এগুলো চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কোনো রুমে স্থানান্তরের দাবি সচেতন মহলের।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সালাম সরদার বলেন, মামলার আলামতগুলো বিচারের স্বার্থে সুবিধা হওয়ার জন্য এখানে রাখা হয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর রোদ-বৃষ্টি ও ঝড়ে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যা আগামীতে মামলার জন্য অসুবিধা হতে পারে। আদালতকে অনুরোধ করবো এগুলো নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
জয়পুরহাট ট্রেজারি শাখার প্রধান সহকারী এসএম মোরশেদ বলেন, ‘আমাদের অফিসের সামনে দীর্ঘদিন থেকে রিকশা-ভ্যান ও অন্যান্য যানবাহনসহ বিভিন্ন মালামাল জমা হয়ে আছে। এ কারণে এখানে সাপ-পোকামাকড়ের বসতি গড়ার সুযোগ হয়ে গেছে। কোর্টের মালখানা না থাকায় আলামতগুলো এখানে রাখা হয়েছে। আমাদের ভবনটি কোর্টের মালখানা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আলামতগুলো অন্যত্র স্থানান্তর হলে জায়গার পরিবেশ ভালো হতো। আমরা এখানে ফুলের বাগান করতে পারতাম।
অফিস সহকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, এখানে কোর্টের আলামত বছরের পর বছর ধরে রাখা হয়েছে। আকাশের নিচে পড়ে থাকার কারণে বৃষ্টিসহ বিভিন্ন আবহাওয়ার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই এগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা দরকার। আমাদের অফিসের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এজন্য এগুলো অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করছি।
বিজ্ঞাপন
জয়পুরহাট জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শাহনূর রহমান শাহীন বলেন, একটা মামলার জন্য আলামত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ন্যায় বিচার পেতে গেলে অবশ্যই আলামত আদালতে উপস্থাপন করতে হবে। এগুলো অরক্ষিতভাবে সেখানে রয়েছে। আমরা অনেক সময় আলামত চেয়ে পাঠালে পাওয়া যায় না, তারা বলেন খুঁজে পাচ্ছেন না। যার কারণে মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিশাল ভবনের অনেক রুম ফাঁকা আছে। জেলা জজ বা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে আলামতগুলো যেখানে সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। তাহলে আলামতগুলো সঠিকভাবে আদালতে উপস্থান করে বিচারপ্রার্থীদের সুবিধা হবে ও ন্যায়বিচার পাবে।
এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার চৌধুরী বলেন, মালখানা ও বাইরের খোলা আকাশের নিচের মালামালগুলোর বিধিসম্মত ব্যবস্থার জন্য জেলা জজ মহোদয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি মালখানা পরিদর্শন করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। আশা করছি দ্রুত এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
প্রতিনিধি/এসএস