উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে বান্দরবানে অবৈধভাবে চলছে ২৮টি ইটভাটা। এরমধ্যে ১৮টি রয়েছে লামা ফাইতং ও আজিজ নগরে। যার কোনটির নেই বৈধ লাইসেন্স। এইসব ইটভাটায় দিনরাত উঠছে ধোঁয়া। পুড়ছে বনের কাঠ। ধ্বংস হচ্ছে পাহাড় ও ফসলি জমি। লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করা হলেও স্থায়ীভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না একটা ইটভাটাও।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, জেলায় সবচেয়ে বেশি ইটভাটা লামা উপজেলায়। এই উপজেলায় রয়েছে ১৮টি, নাইক্ষ্যংছড়িতে ৬টি, আলীকদম ২টি, থানচি একটি ও রুমায় রয়েছে একটি। উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা ও চুল্লিতে পানি দিয়ে আগুন নিভিয়ে দিয়ে বন্ধ করে দিয়ে থাকেন। অভিযান শেষ হলে পুনরায় চুল্লি জ্বালিয়ে সব কার্যক্রম চলমান রেখেছে ইটভাটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।এই পর্যন্ত স্থায়ীভাবে একটি ইটভাটাও বন্ধ করতে পারেননি প্রশাসন। ইটভাটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব অবৈধ ইট ভাটা পরিচালনা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।
বিজ্ঞাপন
২০১০ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও ২০১৩ সালের ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে বলা হয়েছে, বসতি এলাকা, পাহাড়, বন ও জলাভূমির এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা করা যাবে না। কৃষিজমিতেও ইটভাটা অবৈধ। অথচ বান্দরবানে সব ইটভাটায় পাহাড়ের পাদদেশে। পাহাড় কেটে ধ্বংস করছে। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন মানছেন না ইটভাটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ সারা দেশের সব অবৈধ ইটভাটা চার সপ্তাহের মধ্যে গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সব বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করে গত ১৭ মার্চ প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং পাঁচজন বিভাগীয় কমিশনারকে গত ১৭ মার্চ সশরীর হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে তৎপরতা দেখা যায়নি।
বিজ্ঞাপন
বান্দরবান জেলা ইটভাটার বিষয়ে হাইকোর্টে দেওয়া (২৪ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে বান্দরবান জেলার ২৬টি ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, রুমা ABM ইটভাটা সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ইটভাটায় চলতি বছর কোনো ধরনের কার্যক্রম চলেনি। এটাকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি যেসব ইটভাটা কার্যক্রম চলমান রয়েছে, সেসব ইটভাটাগুলোকে জরিমানা ও পানি ঢেলে আগুন নিভিয়ে কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তবে এসব ইটভাটার সব কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মুক্তার আহমেদ প্রকাশ মুক্তার মেম্বার বলেন, বিগত সরকার থাকতে প্রতিবছর সবাইকে ম্যানেজ করে ইটভাটা করে এসেছি। এখন যেসব ইটভাটা করা হয়েছে তা এক ধরনের বাধ্য হয়ে করা লাগতেছে। শ্রমিকদের অগ্রিম টাকা দিয়ে দেওয়ায় না করেও উপায় নেই বলে জানান তিনি । শিবাতলী পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গ্রামের লোকজনের ব্যবহৃত ঝিরি পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে ইটভাটা করার বিষয়ে জানতে চাইলে ইটভাটা মালিক মুক্তার আহমেদ সময়মতো দেখা করার কথা বলে ফোন কেটে দেন।
বান্দরবান পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী-পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, এই পর্যন্ত জেলার ২৭টি অবৈধ ইট ভাটায় ৩৩বার অভিযান পরিচালনা করে ৫৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বান্দরবানে যে কয়টি ইটভাটা আছে সবগুলো অবৈধ, কোনোটাই লাইসেন্স নেই। । অবৈধ এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আইন মেনে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এটা চলমান থাকবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। জেলা প্রশাসন অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযানের ক্ষেত্রে জিরোটলারেন্স নীতি অবলম্বন করছেন বলেও জানান তিনি।
প্রতিনিধি/এসএস