শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

সাত মাসেও ধরাছোঁয়ার বাইরে মানবাধিকার কর্মীর ওপর হামলাকারীরা

জেলা প্রতিনিধি, কুমিল্লা
প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৭ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

কুমিল্লার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও মানবাধিকার কর্মী মওদুদ আবদুল্লাহ শুভ্রের ওপর হামলাকারীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

দীর্ঘ সাত মাসে পুলিশ এজহারনামীয় মাত্র একজন জন আসামিকে গ্রেফতার করতে পেরেছে। বাকি আসামিরা এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এতে প্রাণনাশের শঙ্কা নিয়ে প্রতিনিয়ত চলাফেরা করছেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


মওদুদ শুভ্র জানান, আমার স্ত্রী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। তাকে সন্ত্রাসীরা কলেজে যাওয়ার সময় এসিড মারার হুমকি দেয়। যার কারণে আমার স্ত্রীর কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এজন্য তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে মওদুদ শুভ্র বলেন, বিগত  আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সাবেক ক্ষমতাসীন নেতার অনুসারী সন্ত্রাসীরা আমার বাসার সামনে পুরাতন চোধুরী পাড়ার ডেলুনি বাড়ি গলিতে কালিবাড়ীর পুকুর পাড়ে দু’টি মোটরসাইকেলে এসে অস্ত্র দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যায়। এসময় তারা ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং আমাকে মামলা প্রত্যাহার করতে আল্টিমেটাম দেয়। মামলা প্রত্যাহার না করলে উলটো তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে ফাঁসাবে বলে আল্টিমেটাম দিয়ে যায়। আমাকে তারা উঠিয়ে নিয়ে যাবে এবং জানে মেরে ফেলবে। সেই সঙ্গে লাশ গুম করে ফেলবে বলেও হুমকি দিয়ে যায়। আমি কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় পুরো ঘটনা জানিয়ে তাদের নাম উল্লেখ করে জিডি করি। 

আমাকে অস্ত্র দিয়ে জখম, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের দরুন কোতোয়ালি মডেল থানায় ১৪ নভেম্বর আমি ৮ জনের নামসহ অজ্ঞাত ৪ থেকে ৫ জনের নামে মামলা দায়ের করি।

মামলার আসামিরা হলেন, আমড়াতলী ৪ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের মৃত বাবুল সর্দারের ছেলে মহিউদ্দিন (৩৮), আদালত পাড়ার টাউট মতিন (৩৮), সুবর্নপুর পাচথুবী ইউনিয়নের তারেক (৪২), ঢাকার ধানমন্ডির মৃত ওয়াকিলুর রহমানের ছেলে ফয়সল রহমান  (৩৮), সদর দক্ষিণ গলিয়ারা ইউনিয়নের হাবিবের ছেলে মো. মতিন (৪০), ডুমুরিয়া চানপুরের আরাফাত (৩৬), ফৌজদারি সংলগ্ন আল আমিন (৩৫), আদালতের পশ্চিম গেটের সোনিয়া (৩২), এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪ থেকে ৫ জন।


বিজ্ঞাপন


এজহার নামীয় আসামিদের ভেতরে পাচথুবি ইউনিয়নের ৫ নাম্বার ইউনিয়নের সুবর্ণপুর গ্রামের মৃত বাবুল সরদারের ছেলে মহিউদ্দিন (যুবলীগ ক্যাডার), তার নামে উক্ত মামলাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র জনতার ওপর আঘাত করে আহত করার মামলাসহ একাধিক বড় মাদক চালানের মামলা রয়েছে।

মওদুদ আবদুল্লাহ শুভ্র কুমিল্লা জেলা প্রশাসক বরাবর, জেলা পুলিশ সুপার বরাবর, কুমিল্লা র‍্যাব ১১ কোম্পানি কমান্ডার বরাবর জেলা ডিজিএফআই এবং এনএসআই কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগে বলা হয়- আমি টিক্কচর ব্রিজ অতিক্রম করে শহরের দিকে আসছিলাম। এসময় বিগত আওয়ামী লীগের  ১৩/১৪ জন  সন্ত্রাসী ৪ থেকে ৫টি মোটরসাইকেল ও একটি সিএনজিতে এসে আমার সিএনজির গতিরোধ করে। এসময় সন্ত্রাসীরা আমার কাছে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমার সঙ্গে থাকা মোবাইল ও টাকা পয়সা এবং সাংবাদিকতার কাজে ব্যবহৃত ক্যামেরা, নগদ টাকা, মোবাইল ফোন সিমসহ ছিনিয়ে নেয়। তখন আমি তাদেরকে বলি দশ লাখ টাকা চাঁদা কেন দিতে হবে? তখন তাদের মধ্যে কয়েকজন বলে, কুমিল্লার এই শহরে কাজ করলে আমাদেরকে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি করলে তারা আমাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। আমি সিএনজি চালকের সাহায্যে আমার বন্ধু কুমিল্লা জজকোর্টের আইন পেশায় নিয়োজিত মোহাম্মদ জিল্লুরসহ অন্যান্য বন্ধুদের ফোন করি।

আরও পড়ুন

বোরকা পরে পালানোর সময় ধর্ষক আটক, গণধোলাই

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মধ্যে পতনের দু’দিন আগে ৩ আগস্ট থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকার কারণে গত বছরের ১৯ আগস্ট দ্রুত বিচার আইনে অজ্ঞাতনামা ৩ জন পুরুষ ও একজন মহিলাকে আসামি করে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরসহ মামলা দায়ের করা করি। যা কুমিল্লা জেলা পিবিআইয়ের তদন্তনাধীন রয়েছে। মামলার ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় কুমিল্লা জেলা পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর মোসলেহ উদ্দিন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে দাখিলের পর্যায়ে রয়েছে।

মামলা দিয়ে তুলে নিয়ে সরাসরি গুম করে ইট ভাটায় লাশ পুড়িয়ে ফেলবে বলে হুমকি দেয়।  কিছুদিন ধরে অপরিচিত বিভিন্ন অজ্ঞাত পরিচয় হেলমেট পরা লোকজন প্রতিনিয়ত ভিক্টিম মওদুদ শুভ্রের চারপাশে ঘোরাফেরা করছে। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।

এ ব্যাপারে তার ও পরিবারের নিরাপত্তা বিষয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি অফিসার ইনচার্জসহ তদন্তের আইও, কুমিল্লা জেলা ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ সেনাবাহিনী কুমিল্লার ক্যাম্প কমান্ডারসহ সবাইকে সন্ত্রাসীদের অপরাধের কার্যকলাপ লিখিতভাবে  জান-মালের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে অবগত করে দ্রুত অপরাধীদের আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার লিখিত অভিযোগ  করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আমাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দেয়ার কারণে দ্রুত বিচার আইন আদালতে ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট মামলা করি।

কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানায় চাঁদাবাজি, চুরি ও ছিনতাইয়ের কারণে মামলা করা হয় ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর ।

এ বিষয়ে  কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মহিনুল ইসলাম বলেন, পুলিশ এই মামলাটির আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। তিনি জানান, অতি দ্রুত আসামিদেরকে গ্রেফতারসহ তথ্যসূত্রে মূল আসামিদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে অপরাধীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

ভুক্তভোগী মওদুদ আবদুল্লাহ শুভ্র জানিয়েছেন, তাকে মোটরসাইকেলে এসে অস্ত্র দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমার নলেজে আসার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ফোর্স পাঠিয়েছি তার নিরাপত্তার জন্য। তারা চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী তাই ভুক্তভোগীর কাছে  প্রশাসনের নাম ভাঙ্গায়।

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজির আহমেদ খাঁন বলেন, আমি মওদুদ আবদুল্লাহ শুভ্রকে বলেছি, কোনো সমস্য হলে যেকোনো সময় আমাকে ফোন দিবেন আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই ও মামলার আইও খাজু মিয়া জানান, এজহার নামীয় অভিযুক্ত অপরাধীসহ তাদের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী গ্রেফতারের ব্যবস্থা ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন