সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

সেরা তিনসহ এমবিবিএস থার্ড প্রফে ডিএমসির ৮ শিক্ষার্থীর শীর্ষস্থান অর্জন

সাখাওয়াত হোসাইন
প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

সেরা তিনসহ এমবিবিএস থার্ড প্রফে ডিএমসির ৮ শিক্ষার্থী
আল ইশরাত জাহান ঈশিতা, আবু সাদিক ও ফারিহা রহমান । (বাঁ থেকে)

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত ৫৪টি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস থার্ড প্রফেশনাল পরীক্ষার ফলাফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ডিএমসি) ৭৮তম ব্যাচ থেকে সেরা তিনসহ ৮ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্লেস অর্জন করেছেন। ‍মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে থার্ড প্রফের প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, ডিএমসির ৭৮তম ব্যাচ থেকে থার্ড প্রফেশনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন ২৫২ জন শিক্ষার্থী, এরমধ্যে অকৃতকার্য সংখ্যা ২০ জন। অনার্স মার্ক পেয়েছেন ১৬৫ জন শিক্ষার্থী। ফার্মাকোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, প্যাথলজি— সব বিষয়ে অনার্স মার্ক পেয়েছেন ২৫ জন শিক্ষার্থী। আর দুই বিষয়ে অনার্স মার্ক পেয়েছেন ২৬ জন শিক্ষার্থী।  এরমধ্যে ঢাবির থার্ড প্রফে প্লেস অর্জনকারী ১২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮ জনই ডিএমসির।


বিজ্ঞাপন


প্লেস অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন ফারিহা রহমান, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন আবু সাদিক ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন আল ইশরাত জাহান ইশিতা। এছাড়া পঞ্চম স্থান মনিরাতুল ইসলাম, সপ্তম জয়িতা বীর, অষ্টম সাফিয়া তাসনীম সেমন্তি, নবম সাদিয়া আফরিন ও সুমাইয়া সুলতানা আঁখি দশম স্থান অর্জন করেছেন।

প্রথম স্থান অর্জনকারী ফারিহা রহমানের পরিচয়

ফারিহা রহমানের জন্ম ঢাকার মিরপুরে। গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়। বেড়ে উঠা মিরপুরেই। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তিনি। তার বাবা একজন ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিণী। ২০১৮ সালে মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০২০ সালে হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ফারিহা। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ৩৬তম স্থান অর্জন করেছিলেন তিনি।

জানতে চাইলে ফারিহা রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, সত্যি কথা বলতে এই অর্জন আমার প্রত্যাশার অনেক বাইরে ছিল। আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহ তাআলা আমাকে আমার চাওয়ার থেকেও অনেক বেশি কিছু দিয়েছেন। রেজাল্ট  প্রকাশ পাওয়ার খবরটা প্রথমে আমার মা জানতে পারে আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে। ঘুম থেকে তড়িঘড়ি করে উঠে যখন শুনি মা বলছে, তুমি প্রথম হয়েছো ঠিক সেই মুহূর্তে মা-বাবার মুখের হাসির সেই অনুভূতির কথা বলে বোঝানোর মতো না।


বিজ্ঞাপন


অনুপ্রেরণা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেডিকেলে ভর্তি হবার আগে থেকেই আমার খুবই আগ্রহের বিষয় ছিল মেডিকেল সাইন্স। সেই আগ্রহের পথ ধরে আল্লাহর রহমতে ভর্তির সু্যোগ পেলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজে যা আমার জানার আগ্রহকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে গেল। প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষের এই যাত্রায় অনেক সময়ই এমন হয়েছে যে, পরীক্ষার আগ মুহূর্তে এত বেশি প্রেসারে মনে হতো হাল ছেড়ে দেই, মনে হয় পারব না। আর প্রতিবারই মাকে যখন বলতাম এই কথা, মা বলতো, ‘তুমি পারবে, ইনশাআল্লাহ ’। আর তখনই সবকিছু গুছিয়ে পড়তে বসতাম। আমার এই যাত্রাপথে মা-বাবা, পরিবাবের পাশাপাশি আরও দুজন শ্রদ্ধেয় মানুষ  আমার অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন। তারা হলেন ঢাকা মেডিকেলের ডা. তানভীর ফয়সাল স্যার এবং ডা. দেবশ্রী সাহা ম্যাডাম। মেডিকেল লাইফে তারা সবসময় আমার আদর্শ হয়ে থাকবেন। একজন ভালো ডাক্তার হওয়ার এখনও অনেক পথ বাকি আছে। আল্লাহর কাছে একটি জিনিসই চাই আমার সাধ্যের মধ্যে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করতে পারি; সেটাকে অবলম্বন করে যাতে সেবা দিয়ে মানুষের কষ্ট দূর করতে পারি।

ফারিহা রহমান বলেন, মেডিকেলের একদম শুরুতে প্রথমবর্ষের পড়ার সাথে খাপ খাওয়ানো কিছুটা চ্যালেঞ্জিং ছিলো। তাছাড়া সবাই বলতো মেডিকেলে অনেক পড়া, সারাদিন পড়তে হয়। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে এ পড়ার কোনো শেষ নেই। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় মেডিকেল সায়েন্স অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং, শেখার আছে এখানে অনেক কিছু এবং পুরো শারীরবিজ্ঞান যেন অনেকটা অংকের মতো। চতুর্থ বর্ষের বিষয়গুলোর জন্য টিচারদের লেকচারের পাশাপাশি আমার জন্য অনেক হেল্পফুল ছিল ডা. নাজিব স্যারের লেকচারগুলো। এছাড়া এখন অনেক ফ্রি রিসোর্স অ্যাভেইলেবল আছে; যেগুলো আমার কনসেপসন ক্লিয়ার করতে অনেক সাহায্য করেছে। আমার একটা লক্ষ্য থাকতো যে প্রথম ফেজ থেকে চতুর্থ  ফেজে প্রতিটি বিষয় যেহেতু বেসিক, সেহেতু পরবর্তীতে ভালো ক্লিনিশিয়ান হাওয়ার জন্য এমনভাবে শিখতে হবে, যাতে কখনও কোনো ক্ষেত্রে আটকে না যাই। মেডিকেলে যেহেতু রেগুলার ক্লাস, রেগুলার আইটেম, আইটেমের টপিক ছোট হওয়ায় তখনই পুরোটা ভালো করে পড়ে ফেলতাম যাতে টার্মে  বা প্রফে বেশি প্রেসার না পরে।

দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী আবু সাদিকের পরিচয়

আবু সাদিকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার শিলন্দিয়া গ্রামে। বাবা-মায়ের সঙ্গেই শৈশব কাটে তার। ২০১৮ সালে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি  স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০২০ সালে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। দুই ভাইবোনের মধ্যে ছোট তিনি। তিনি একজন সহানুভূতিশীল চিকিৎসক হতে চান।

আবু সাদিক ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার ফলাফলে আমি সত্যিই অবাক হয়েছি। আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। তার করুণার জন্য আমার গভীর কৃতজ্ঞতা। আমি আমাদের চমৎকার শিক্ষকদের তাদের নিরলস প্রচেষ্টা এবং নিষ্ঠার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। ব্যাচ শিক্ষকদের ছাড়া এটি সম্ভব হত না। আমি আমার শিক্ষক, পরিবার এবং বন্ধুদের অটল সমর্থনের জন্য সত্যিই কৃতজ্ঞ।

তিনি আরও বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি মানুষকে সাহায্য করতে চাইতাম। শুধু ডাক্তার হতে চাইতাম না, মানবিক কাজও করতে চাইতাম। আমি আমার রোগীদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকতে চাই এবং তাদের কষ্ট অনুভব করতে চাই।

তৃতীয় স্থান অর্জনকারী আল ইশরাত জাহান ইশিতার পরিচয়

আল ইশরাত জাহান ঈশিতার জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামে। শৈশব গ্রামে কাটলেও বাবার চাকরিসূত্রে পড়াশোনা করেন ঢাকায়। ২০১৮ সালে রাজধানীর কদমতলা পূর্ব বাসাবো স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি  এবং ২০২০ সালে হলি ক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ঈশিতা। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় ঈশিতা। তিনি ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ১৬১তম স্থান অর্জন করেন।

ইসরাত জাহান ঈশিতা ঢাকা মেইলকে বলেন, সর্ব অবস্থায় আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। জীবনের যেকোনো অর্জন কিংবা সাফল্য অবশ্যই সবসময় আনন্দঘন আর হৃদয়ের জন্য পরিতৃপ্তিময়, আলহামদুলিল্লাহ। যখন রেজাল্ট জানতে পারি, তখন প্রথমেই স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। সেইসঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানাই বাবা-মা আর শিক্ষকদের প্রতি। তাদের সহযোগিতায় আমার পথ অনেকটা সহজ হয়েছে। রেজাল্ট পাওয়ার মুহূর্তটা সত্যি অসাধারণ আর আবেগময় ছিল। সবসময়ের মতো মা-বাবা স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারা আমাকে সুন্দর একটা হাসি দিয়ে এত দিনের জার্নিটার কথা মনে করে দিয়েছেন। সামনের সুদীর্ঘ পথ যা বাকি আছে, সেটার জন্য স্রষ্টার কাছে সাহায্য চাই।

তিনি আরও বলেন, ছোটবেলা থেকেই পরিবারের ইচ্ছে ছিল আমি যেন ডাক্তার হই। স্কুল কলেজের শিক্ষক ও বন্ধুরাও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নটাকে ছোটবেলা থেকেই নিজের মধ্যে লালন করতে থাকি। যত বড় হতে থাকি স্বপ্নের পরিধিটাও বিস্তৃত হতে থাকে। সাদা এপ্রোন পড়ে কাঁধে স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে মুমূর্ষু রোগীর সামনে আশার আলো হয়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছেটাকে পূরণের জন্যই কঠোর পরিশ্রম করতে থাকি। স্রষ্টার রহমতে যখন ঢাকা মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাই, এরপর থেকে যতদিন যেতে থাকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ক্লাস করার সময় রোগীদের অসুস্থতার কষ্ট দেখে মনে মনে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করতাম, স্রষ্টা আমাকে যে সুযোগ দিয়েছেন, মানুষের পাশে আশার আলো হয়ে দাঁড়ানোর সেই দায়িত্বে যাতে বিন্দুমাত্র চেষ্টার কমতি না রাখি। সেই অনুপ্রেরণা থেকেই শেখার প্রতি আগ্রহ আর চেষ্টা করার মনোবল কাজ করতো।

যা বলছেন ডিএমসি অধ্যক্ষ

জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, তৃতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় ঢাকা মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা খুবই ভালো ফলাফল করেছে। শিক্ষক হিসেবে আমরা খুবই খুশি। দেড়বছরের অধ্যবসায়ের প্রতিদান তারা পেয়েছে, তাদের ভবিষ্যতে আরও সাফল্য কামনা করছি।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা মেডিকেলে দেশসেরা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়, তাদের কাছে সবাই ভালো ফলাফল প্রত্যাশা করে। তাদের জীবন সুন্দর হোক। এখন শিক্ষার্থীদেরকে রোগীদের কাছে বেশি বেশি যেতে হবে। তাতে ভবিষ্যতে আরও ভালো ফলাফল করতে পারবে শিক্ষার্থীরা।

এসএইচ/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর