সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

নেতিবাচক প্রবাহ কাটছে না সঞ্চয়পত্রে

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১১:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

নেতিবাচক প্রবাহ কাটছে না সঞ্চয়পত্রে

*চলতি অর্থ বছরের প্রথম সাত মাসে ৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা ঋণাত্মক
*গত অর্থ বছরের একই সময়ে ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা ঋণাত্মক ছিল
*গত জানুয়ারি শেষে সঞ্চয়পত্র বিক্রির স্থিতি ৩ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা

দেশে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি ইতিবাচক ধারায় ছিল। তবে গত নভেম্বরে এসে হঠাৎ এ খাতে বিনিয়োগ কমিয়েছেন সাধারণ মানুষ। ক্রয় বা নবায়নের চেয়ে বেশি অঙ্কে ভাঙা হয়েছে সঞ্চয়পত্র। ফলে এ খাত থেকে ঋণ পাওয়ার বদলে উল্টো আগের ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে নিট বিক্রি ৪ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা ঋণাত্মক হয়েছে। যেখানে ডিসেম্বরে নিট বিক্রি ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ঋণাত্মক ছিল। অর্থাৎ ওই মাসে কেনার চেয়ে ভাঙানোর চাপ বেশি ছিল। ফলে নিট বিক্রি বড় অঙ্কে ঋণাত্মক হয়ে যায়। সাধারণত ভাঙানোর চেয়ে কেনার পরিমাণ বেশি হলে তাকে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ বিবেচনা করা হয়। আর কেনার চেয়ে ভাঙানো বেড়ে গেলে সরকারের ঋণ পরিশোধ হয়। এটাকে নিট বিক্রি ঋণাত্মক বলা হয়। তার আগের মাসে অর্থাৎ নভেম্বরেও নিট বিক্রি ৩ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা ঋণাত্মক ছিল। ওই মাসেও কেনার চেয়ে ভাঙানোর চাপ বেশি ছিল।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গত নভেম্বরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণে চাহিদা অনুযায়ী সঞ্চয় করতে পারেনি। আবার গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ধনী গোষ্ঠীর অনেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন। এছাড়া ব্যাংক আমানত ও সরকারের বিল-বন্ডের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগের একটি বড় অংশ ব্যাংক ও বিল-বন্ডে স্থানান্তর হয়েছে। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে সুদহার বাড়ানোর কারণে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি আগামীতে আরও বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সঞ্চয়পত্রের নিট বা প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা ঋণাত্মক। অর্থাৎ এই সাত মাসে যতো টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তার চেয়ে ৭ হাজার ১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা বেশি আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করেছে সরকার। এই অর্থ সরকারের কোষাগার থেকে অথবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করা হয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের একই সময়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৩৫০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণাত্মক।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা, দ্বিতীয় মাস আগস্টে ২ হাজার ৩৬ কোটি এবং তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ৪ হাজার ১০৯ কোটি টাকা নিট বিক্রি ইতিবাচক ছিল। তবে নভেম্বরে থেকে তা নেতিবাচক হতে শুরু করে। নভেম্বরে ঋণাত্মক দাঁড়ায় ৩ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা ও সর্বশেষ ডিসেম্বরে ঋণাত্মক বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা।


বিজ্ঞাপন


এছাড়া চলতি বছর জানুয়ারি শেষে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মোট স্থিতি ছিল ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের একই সময়ে ছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৩ কোটি টাকা।
অন্যদিকে এতদিনে সঞ্চয়পত্র কেনায় নানা শর্তারোপ করা হলে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার মুনাফা বাড়িয়েছে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে, যা চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে কার্যকর হচ্ছে। এতে আশার দিক খুঁজে পেয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। খাতসংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, মুনাফার হার বাড়ানোর ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে গতি আসবে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকার ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকার নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি (বিনিয়োগ) সরকারের ঋণ হিসেবে গণ্য হয়, যা বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গত অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা।

সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ড ও আমানতের সুদ বাড়ার কারণে গত জানুয়ারি থেকে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। পরিবার সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ থাকলেও এখন এই সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফা মিলবে সাড়ে ১২ শতাংশ। আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা আসবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এই সঞ্চয়পত্র কিনলে এতোদিনে মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার ছিল ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ পূর্তির আগে মুনাফা ছিল ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। জানুয়ারি থেকে এই সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদপূর্তিতে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

আর তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ পূর্তির বছরে মুনাফা ছিল ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। জানুয়ারি থেকে এই সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা হবে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফা আসবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ।

টিএই/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর