বরিশালে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৮ প্রভাবশালী নেতাকর্মীর সাংগঠনিক এবং প্রাথমিক পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে কেন্দ্র। বালুমহালের দরপত্র দখল করতে এক সেনাসদস্যকে অপহরণ করে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার পর এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। পদ স্থগিতের তালিকায় রয়েছেন হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দেওয়ান মনির হোসেন, বরিশাল নগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাসুদ রাঢ়ী, মহানগর মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদা বেগমসহ মোট ৮ নেতাকর্মী।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) বিএনপির কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার। তিনি জানান, ‘দলের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আমাদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
বিএনপির চিঠিতে বলা হয়, বরিশালে বালু মহলের দরপত্র জমাদানকে কেন্দ্র করে একজন সেনা সদস্যকে অপহরণ, মারধর এবং মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তাদের সাংগঠনিক পদ ও দলের প্রাথমিক সদস্য পদ আগামী তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হলো। স্থগিত হওয়া ৮ নেতাকর্মী হলেন— হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দেওয়ান মনির হোসেন, বরিশাল মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাসুদ রাঢ়ী, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি নূর হোসেন, হিজলা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ইমরান খন্দকার, মহানগর মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদা বেগম, বিএনপি কর্মী মো. রুবেল, মো. বেলায়েত হোসেন ও মো. জাহিদ।
পদ স্থগিত হওয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দেওয়ান মনির হোসেন, বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমানে যুবদল কর্মী নূর হোসেন এবং হিজলা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ইমরান খন্দকার গত সোমবার সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন। আটক হওয়ার পর এ ঘটনায় ভূক্তভোগী আবদুল মতিন কাজীর দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। বর্তমানে এই তিনজন নেতাকর্মী কারাগারে আছেন।
ভূক্তভোগীদের দেওয়া অভিযোগ ও তথ্য মতে, বরিশালের হিজলা উপজেলা সংলগ্ন মেঘনা নদীর ১৩ কোটি টাকা মূল্যমানের বালুমহাল ইজারার দরপত্র জমাদানের শেষ দিন ছিল গত সোমবার। ওইদিন দুপুর ১টার দিকে বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দরপত্র জমা দিতে সেখানে আসেন ভূক্তভোগী চাঁদপুরের উত্তর মতলব থানার আবদুল মতিন কাজী। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ভাতিজা সেনা সদস্য মো. জাফরসহ সহযোগী বরিশাল নগরের বিমানবন্দর থানার গগনপাড়া এলাকার আবদুল বাছেদ। দরপত্র জমা দিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এলে বেশ কয়েকজন তাদের ঘিরে ধরেন। এ সময় কেন দরপত্র জমা দিয়েছেন, তা জানতে চেয়ে অভিযুক্তরা মতিন, বাছেদ ও জাফরকে মারধর শুরু করে। তখন দুজন দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারলেও সেনাসদস্য জাফরকে অপহরণ করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। সেনাসদস্য জাফরকে ধরে নিয়ে নগরীর নদীবন্দর এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে আটকে রাখা হয়। এ সময় আটক সেনাসদস্য নিজেকে ল্যান্স করপোরাল হিসেবে পরিচয় দিলে অপহরণকারীরা নিজেদেরও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেয়। এরপর সেনাসদস্য জাফরের হাত ও পা বেঁধে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। এ সময় জাফরের সঙ্গে থাকা সেনাবাহিনীর পরিচয়পত্রটি ভেঙে ফেলা হয়। পরে তার কাছ থেকে স্বর্ণের চেইন, একটি আইফোন, ১৫ হাজার টাকা, জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
জাফরকে রেখে অপহরণকারীরা বাইরে গেলে, জাফর সেখান থেকে বের হন। এরপর আবদুল মতিন বিষয়টি বরিশাল সেনা ক্যাম্পে জানালে, সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে দেওয়ান মনির হোসেন, নূর হোসেন ও ইমরান খন্দকারকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় আবদুল মতিন কাজী বাদী হয়ে বিএনপির ১২ জনকে আসামি করে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়।
বিজ্ঞাপন
প্রতিনিধি/একেবি