ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসাপড়ুয়া ৭৫ হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবককে খোলা চিঠি দিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে এই চিঠি দেওয়া হচ্ছে যেন তাঁরা তাঁদের সন্তানকে কেবল পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর দিয়ে মূল্যায়ন না করেন।
গতকাল মঙ্গলবার থেকে এই খোলাচিঠি বিতরণ শুরু হয়।
বিজ্ঞাপন
খোলাচিঠিতে ইউএনও উল্লেখ করেন, ‘ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আপনার সন্তানের বার্ষিক পরীক্ষা। সব বাবা-মায়েরই স্বপ্ন থাকে যে তাঁদের সন্তান খুব ভালো রেজাল্ট করবে, ক্লাসের ‘টপার’ হবে। আপনার সন্তান যদি পরীক্ষায় খুব ভালো নম্বর পায়, তবে সেটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত আনন্দের। কিন্তু যদি না পায়, তাহলে অনুরোধ থাকবে, তাদের ওপর নিজের বিশ্বাসটুকু হারাবেন না। সন্তানকে আশ্বস্ত করুন, তার নিজের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার ওপর আস্থা রাখতে বলুন। সে চাইলেই সামনে আরও ভালো করতে পারবে, একটুকু আত্মবিশ্বাস তাকে দিন। তাকে বুঝিয়ে বলুন, পরীক্ষার নম্বর নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই, এটি কেবল একটি ক্লাস পরীক্ষা। জীবনের আরও বহু পথ পাড়ি দিয়ে তাকে আরও বহু পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। ক্লাসের এই পরীক্ষাগুলো কেবল তাকে ধাপে ধাপে প্রস্তুত করছে।’
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘কেবল পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর দিয়ে সন্তানকে বিচার করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার সন্তান নিঃসন্দেহে বহু সুপ্ত প্রতিভার অধিকারী। তার সুপ্ত গুণাবলি বিকাশের সুযোগ করে দিন। তার হাত ধরে তাকে সুন্দর আগামীর পথে আপনি এগিয়ে নিয়ে চলুন।’
ইউএনওর দফতর থেকে জানানো হয়, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দফতর থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসংখ্যা যুক্ত করে চিঠি প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী অভিভাবকদের উদ্দেশে লেখা চিঠিগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে তাদের অভিভাবকদের কাছে চিঠিগুলো পৌঁছে দেবে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ অভিভাবকদের সন্তানদের পরীক্ষার রেজাল্টের ওপর প্রত্যাশা থাকে অনেক বেশি। ক্লাসে সবাই ফার্স্ট হবে না, এটি স্বাভাবিক। কেবল পরীক্ষার রেজাল্টই জীবনে সফলতার একমাত্র সংজ্ঞা নয়। আমাদের প্রতিটি বাচ্চাই প্রতিভাবান, প্রতিটি বাচ্চাই কোনো না কোনো গুণের অধিকারী। তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি সেই প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া প্রতিটি অভিভাবকের কর্তব্য।’
বিজ্ঞাপন
এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইউএনও বলেন, ‘আমাদের অভিভাবকরা যেন তাঁদের সন্তানকে কেবল পরীক্ষার নম্বর দিয়ে বিচার না করেন। এই পৃথিবীর আলো বাতাসে তাদেরকে যেন দুই হাত ভরে নিশ্বাস নিয়ে বেড়ে উঠতে সহযোগিতা করেন। প্রতিটি সন্তানের ওপর অভিভাবকের এই অকুণ্ঠ সমর্থন নিশ্চয়ই তাদেরকে কোন না কোনভাবে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেবে, এই বিশ্বাস আমি রাখি। কেবল ভালো রেজাল্টের প্রত্যাশার চাপে নয়, পড়াশোনার পাশাপাশি সন্তান যেন তার নিজস্ব প্রতিভার সবটুকু বিকাশের ডানা মেলে বেড়ে উঠতে পারে।’
প্রতিনিধি/একেবি
