কিশোরগঞ্জের কয়ারখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকের গাফিলতির কারণে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না ১০ শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমের ভুলের কারণে ১০ শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্র পাওয়া যায়নি, যার ফলে তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না।
আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা, যেখানে দেশের সকল শিক্ষার্থী তাদের ১০ বছরের পড়াশোনার পরিসমাপ্তি হিসেবে পরীক্ষা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বিন্নাটি ইউনিয়নের এই ১০ শিক্ষার্থী, যাদের পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্র পর্যন্ত আসেনি, তারা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করেও কোনো ফল পাননি। প্রবেশপত্র সংগ্রহের জন্য তারা স্কুলের শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার প্রশ্ন করলেও কোনো সদুত্তর মেলেনি।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বিন্নাটি ইউনিয়নের কয়ারখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তারের মা মোছা. আসমা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে তিনি জানান, প্রধান শিক্ষক শামীমসহ অন্যান্য শিক্ষকরা তাদের সন্তানদের প্রবেশপত্র নিয়ে গাফিলতি করেছেন, যার ফলে তারা পরীক্ষা দিতে পারছেন না। এ সম্পর্কে কোনো সঠিক তথ্য না দিয়ে ওই শিক্ষক উল্টো হুমকি-ধামকি দিয়েছেন।
অভিভাবকদের অভিযোগ, কয়ারখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম, সহকারী শিক্ষক মাজাহারুল, মুজাম্মেল ও সাকাওয়াতের গাফিলতির কারণে ১০ জন শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র আসেনি। কয়েকদিন আগে, যখন অভিভাবকরা প্রবেশপত্রের বিষয়ে জানতে চান, তখন তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে প্রবেশপত্র খুব শিগগিরই আসবে। অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে ভর্তি ফি নিয়েছিলেন। কিছু অভিভাবক অভিযোগ করেছেন যে, তাদের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা এবং এমনকি ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। তবে, পরীক্ষার আগের দিন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র পায়নি।
অপরদিকে, কয়ারখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গাফফারুল ইসলাম শামীমের সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ওয়েবসাইটের সমস্যার কারণে প্রবেশপত্র আসেনি এবং তিনি বিষয়টি সমাধান করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। ঘটনাটি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘স্কুলের রেজিস্ট্রেশন না থাকার কারণে আমি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। তবে যাদের একাধিক সাবজেক্টে অকৃতকার্য হওয়ার কারণে তারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারেনি, তাই তাদের প্রবেশপত্র আসেনি। আমি যেভাবে চেষ্টা করেছি, তাতে ফলপ্রসূ হয়নি।’
এদিকে, কিশোরগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুন নাহার মাকছুদা বলেন, ‘এই বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করেছে। তারা যে সমস্যার কথা বলছে, তা আসলে গাফিলতির ফল। আমি বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ ১০ বছরের পরিশ্রম শেষে যেই পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল, সেই পরীক্ষাটি থেকে আরো এক বছর পিছিয়ে যেতে হলো এই ১০ শিক্ষার্থীকে। তাদের অভিভাবকদের দাবি, এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হোক।
প্রতিনিধি/একেবি

