বাইছা লন, দেইখ্যা লন যা লইবেন ৫০ টাকা—এমন ছন্দের তালে তালে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাক-ডাক দিয়েই চলেছেন বিক্রেতারা। হাক-ডাক শুনে ক্রেতারা ফুটপাতের পুরাতন কাপুড়ের দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।
এদিকে, শুরু হয়েছে শীতের প্রকোপ। ঘন কুয়াশার আর ঠান্ডা বাতাসে জনজীবনে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। শীত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে নাটোরের পুরাতন গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে বাড়ছে ভিড়। সেই সঙ্গে বেড়েছে বেচাকেনাও। বিক্রি ভালো হওয়ায় খুশি বিক্রেতারা।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার(২২ ডিসেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নাটোর শহরের মসজিদ মাকেটের সামনে ফুটপাতের পুরাতন কাপুড়ের দোকান গুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাক-ডাকে মুখরিত হয়ে উঠেছে। কমদামে এসব পুরাতন গরম কাপড় কিনতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন নারী-পুরুষ। তবে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকে স্বার্ধের মধ্যেই কিনতে পারছেন শীতের কাপুড়। অনেকে আবার স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। কম দামে কাপুড় কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারাও।
এসব শীতের কাপড় ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। জ্যাকেট ৩০০-৫০০ কোট ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়, সুয়েটার ও জাম্পার ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়, গেঞ্জি-প্যান্ট ৩০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব কাপুড় দরদাম করে কিনছেন ক্রেতারা।
পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী সৌরভ হোসেন বলেন, প্রচণ্ড শীতে উপর বেচাকেনা নির্ভর করে। শীত যত বাড়ে, কাপড় বিক্রি তত বেড়ে যায়। আমরা ১ মাস এখানে শীতের কাপুড় বিক্রি করবো। তবে এ বছর পুরাতন কাপড়ের দাম কিছুটা বেড়েছে। সেজন্য বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
আতাউর রহমান নামে এক কাপুড় ব্যবসায়ী বলেন, ঢাকা থেকে কাপুড় কিনে নাটোরে নিয়ে আসতে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ফলে দামও কিছুটা বেড়েছে। শীতের কাপুড় বেচাকেনা শুরু হয়েছে। আশা করছি, এক থেকে দেড় মাস আমরা কাপুড় বিক্রি করবো। ক্রেতা সংখ্যাও বেড়েছে। এমন বেচাকেনা থাকলে আমরা লাভবান হবো।
বিজ্ঞাপন
পুরাতন কাপড় কিনতে আসা হুসনে আরা বেগম বলেন, শীতে কিছু পুরাতন কাপুড় নিতে এসেছি। ফুটপাতের দোকানে বাহিরের উন্নত মানের গরম কাপুড় পাওয়া যায়। যা মার্কেটে পাওয়া যায় না। সেজন্য ফুটপাত থেকে কিনতে আসা। কম দামে কাপুড়ের মানও বেশ ভালো।
অটোরিকশা চালক আব্দুল খালেক বলেন, নতুন গরমের কাপুড় কেনা আমাদের পক্ষ সম্ভব না, অনেক দাম। তাই ৫০-১০০ টাকা দিয়ে পুরাতন গরম কাপুড় নিতে এসেছি। এ টাকা দিয়ে মার্কেটে মাফলারও কেনা যায় না। তাই পুরাতন দোকান থেকে প্রতি বছর কাপুড় কিনে নিয়ে যাই।
আরেক অটোরিকশা চালক মনিরুল ইসলাম বলেন,নতুন কাপড় কেনার এত সামর্থ্য নেই। অটো চালিয়ে চাল কিনবো না কাপুড় কিনবো। তার চেয়ে পুরাতন দোকানে কম দামে ভাল কাপুড় কেনা যায়। ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় শীতের পুরাতন কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। সন্তানের জন্য একটা কাপুড় নিলাম এবং আমার জন্য রিকশা চালানোর জন্য জ্যাকেট কিনলাম।
আবু কাশেম নামে এক ক্রেতা বলেন, অনেক কম দামে বিদেশি কাপুড় কিনছি। এসব কাপুড় বিদেশি ব্যবহার করলেও অনেক মান ভাল এবং কম দাম। গরীব মানুষ আমাদের পক্ষে তো দুই হাজার টাকা দিয়ে নতুন কাপুড় কেনা সম্ভব না। তাই ফুটপাতের দোকান থেকে নিতে এসেছি। বেছে দেখে নিলে অনেক ভাল কাপুড় পাওয়া যায়। ৩০০ টাকার জ্যাকেট নিয়েছি, যে পোষাক মার্কেটে কিনতে গেলে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ হাজার টাকা দাম। কিছুদিন ব্যবহারের হলেও দাম অনেক কমে পাওয়া যায়।
প্রতিনিধি/একেবি