সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

Earthquake

ভূমিকম্প কেন হয়

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০১ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

পৃথিবীতে যতগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় তার মধ্যে ভূমিকম্প অন্যতম। এই দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির পরিমানও ব্যাপক। ভূমিকম্প কেন হয় তা অনেকেরই ধারণা নেই। এর পেছনের রয়েছে বৈজ্ঞানিক কারণ। 

অনেকেই জানতে চান কেন ও কীভাবে একটি জায়গার মাটি হঠাৎ করে কেঁপে ওঠে ? যাকে আমরা ভূমিকম্প বলে জানি ৷ সেই নিয়েই গবেষণা চলছে বিস্তর। 


বিজ্ঞাপন


ভূমিকম্প কাকে বলে?

ভূ -অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্যে যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সে শক্তি হঠাৎ মুক্তি পেলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়; এইরূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে। সাধারণত কম্পন-তরঙ্গ থেকে যেই শক্তির সৃষ্টি হয়, তা ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

পৃথিবীর অভ্যন্তরে ভূ-আন্দোলনের ফলে উৎপন্ন আকস্মিক শক্তি গুলির মধ্যে অন্যতম হল ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের ফলে ভূমিরূপের পরিবর্তন সাধিত হয়, সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয় ও মানুষের প্রানহানী ঘটে। সারা পৃথিবীব্যাপী প্রতিদিনই প্রায় অসংখ্য ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে থাকে। যার মধ্যে আমরা সামান্য কিছু অনুধাবন করতে সক্ষম হয়। এখানে ভূমিকম্প সম্পর্কীত যাবতীয় তথ্য সহজ সরল ভাবে তুলে ধরা হল। 

earth2


বিজ্ঞাপন


ভূ-অভ্যন্তরে সৃষ্ট কোন কারণ বশত ভূপৃষ্ঠের কোন স্থান যদি ক্ষনিকের জন্য কেঁপে ওঠে, তখন তাকে ভূমিকম্প বলা হয়। অধ্যাপক স্ট্রেলারের মতে, ভূত্বকের উপরে বা নিচে শিলাস্তরের স্থিতিশীলতার বা অভিকর্ষীয় ভারসাম্যের বিঘ্ন ঘটার ফলে ভূপৃষ্ঠে সৃষ্ট আন্দোলনকে ভূমিকম্প বলে। 

ভূমিকম্পের কেন্দ্র কাকে বলে

ভূ-অভ্যন্তরে যেখানে প্রথম ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়, তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলে। এই কেন্দ্র থেকে ভূমিকম্পের স্পন্দন তরঙ্গের আকারে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে পৃথিবীর অধিকাংশ ভূমিকম্প কেন্দ্রের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূমিকম্প কেন্দ্রের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিনভাগে ভাগ করা হয়।  

১. অগভীর কেন্দ্র বিশিষ্ট ভূমিকম্প - এই প্রকার ভূমিকম্পের কেন্দ্র ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করে। 

২. মাঝারি কেন্দ্র বিশিষ্ট ভূমিকম্প - এই ধরণের ভূমিকম্প কেন্দ্রের গভীরতা ৭০ কিমি থেকে ৩০০ কিমি পর্যন্ত হয়।

৩. গভীর কেন্দ্র বিশিষ্ট ভূমিকম্প - ৩০০ থেকে ৭০০ কিমি গভীরতা বিশিষ্ট ভূমিকম্প। 

ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র কাকে বলে

ভূমিকম্প কেন্দ্রের ঠিক সোজাসুজি উপরে ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত স্থানটি যেখানে সর্বপ্রথম ভূ-কম্পন অনুভূত হয়, তাকে  ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র বলে। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ভূমিকম্প কেন্দ্রের সবচেয়ে নিকটে অবস্থিত হওয়ায়, এখানে ভূমিকম্পের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি হয় এবং উপকেন্দ্র থেকে যত দূরে যাওয়া যায় তীব্রতা তত হ্রাস পেতে থাকে। 

eath

সমভূকম্পন রেখা কাকে বলে

ভূপৃষ্ঠের উপরে অবস্থিত ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রের চারিদিকে সমান ভূমিকম্প তীব্রতা যুক্ত স্থান গুলিকে যুক্ত করলে যে রেখা পাওয়া যায় তাকে সমভূকম্পন রেখা বলে। 

সমকম্পনকাল রেখা কাকে বলে

ভূপৃষ্ঠের যে সব স্থানে একই সময়ে ভূমিকম্প অনুভূত হয়, সেই সব স্থান গুলোকে যুক্ত করলে যে রেখা পাওয়া যায়, তাকে হোমোসিসমাল লাইন বা সমকম্পনকাল রেখা বলে। 

ভূমিকম্পের তীব্রতা পরিমাপক স্কেল 

১৯৩৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চার্লস রিক্টার ভূকম্পন মাপার জন্য একটি স্কেল আবিষ্কার করেন, যাকে রিক্টার স্কেল বলা হয়। ভূমিকম্পের তীব্রতা অনুসারে রিক্টার স্কেলে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত ভাগ থাকে। রিক্টার স্কেলে মান গুলি লগারিদম বা সংখ্যাবর্গমান হওয়ায় রিক্টার স্কেলে মান ১ একক বৃদ্ধি পেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা পূর্বের তুলনায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পায়।  

ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বা ভূকম্পের মাত্রা পরিমাপক স্কেল 

ভূমিকম্পের মাত্রা বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমান পরিমাপের জন্য ইতালির ভূকম্প বিশরদ গিউসেপ মার্সেলি একটি স্কেল আবিষ্কার করেন, যাকে মার্সেলি স্কেল বলা হয়। মার্সেলি স্কেলের মান ১ থেকে ১২ পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

ভূমিকম্পলেখ যন্ত্র - যে যন্ত্রের সাহায্যে ভূকম্পের তীব্রতা, স্থায়িত্ব, ভূমিকম্পের সময় ও ভূমিকম্পের কেন্দ্র ও উপকেন্দ্র সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়, তাকে ভূমিকম্পলেখ যন্ত্র  বা সিসমোগ্রাফ বলে। 

ভূমিকম্পের কারণ কী?

বিভিন্ন কারণে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে থাকে। ভূমিকম্পের কারণগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা - প্রাকৃতিক কারণ ও কৃত্রিম কারণ। 

vhumi

ভূমিকম্পের প্রাকৃতিক কারণ

১. পাতের  চলন জনিত ভূমিকম্প - পৃথিবীর ভূত্বক কতগুলো ছোটো বড় চলনশীল পাতের সমন্বয়ে  গঠিত। এই রকম দুটি পাতের পরস্পরের দিকে বা পরস্পরের বিপরীত দিকে চলনের ফলে পাত সীমান্ত বরাবর ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এই পাত চলন জনিত কারণেই সারা পৃথিবী ব্যাপী ভূমিকম্পের প্রধান কারণ। যেমন - প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা বরাবর, আল্পস - হিমালয় ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে, মধ্য মহাসাগরীয় শৈলশিরা প্রভৃতি অংশে প্রবল ভূমিকম্পের প্রধান কারণ হল পাতের চলন। 

২. স্থিতিস্থাপক প্রত্যাঘাত মতবাদ - পৃথিবীর ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পগুলোর কারণ হিসাবে H. F. Ried স্থিতিস্থাপক প্রত্যাঘাত মতবাদ প্রকাশ করেন। তার মতে ভূ- আন্দোলনের ফলে শিলাস্তরে প্রবল পীড়নের ফলে চ্যুতিতল বরাবর শিলার ভাঙন ও স্খলন ঘটলে আকস্মিক ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। 

৩. অগ্ন্যুৎপাত জনিত ভূমিকম্প - আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সময় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সাধারণত যে সব আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ সহকারে অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়, তার আশেপাশের অঞ্চল গুলিতে প্রবল ভূমিকম্প অনুভূত হয়। 

৪. ভূগর্ভস্থ বাষ্পরাশির চাপ - ভূগর্ভের মধ্যে সঞ্চিত বাষ্পপুঞ্জের পরিমান যখন অত্যাধিক হয়ে যায়, তখন তা প্রবল বেগে শিলাস্তরে ধাক্কা দেয়। এর ফলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের সন্নিহিত অংশে প্রচুর ফাটল থাকায় অভ্যন্তরীণ বাষ্প জনিত ভূমিকম্প প্রায়ই দেখা যায়। 

৫. তাপীয় সংকোচন জনিত ভূমিকম্প - সৃষ্টির পর থেকে উত্তপ্ত পৃথিবী ক্রমশ তাপ বিকিরনের মাধ্যমে শীতল হচ্ছে। পৃথিবীর উপরিভাগ শীতল ও কঠিন হলেও অভ্যন্তরভাগ এখনো অত্যধিক উত্তপ্ত রয়েছে। ফলে উপরের ও নিচের স্তরের মধ্যে আয়তনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, তাই ভারসাম্য রক্ষার জন্য ভূপৃষ্ঠের কিছু অংশ অবনমিত হয়ে ভাঁজের সৃষ্টি করে। এরূপ পুনর্বিন্যাসের সময় মাঝে মাঝে ভূমিকম্প হতে পারে। 

আরও পড়ুন: ফোনে ভূমিকম্পের অ্যালার্ট চালু করার উপায়

৬. ধ্বস - ভূপৃষ্ঠের উপরভাগে, বিশেষত পার্বত্য অঞ্চলে যখন ধ্বস নামে এবং তার ফলে খাড়া ঢাল বরাবর বিশাল পাথরের স্তূপ প্রবলবেগে নিচে পতিত হয়, তখন তার প্রভাবে ভূকম্পন অনুভূত হয়। 

৭. হিমানি সম্প্রপাত - সুউচ্চ পর্বতমালার বরফাচ্ছন্ন শিখর থেকে বিশাল বরফের স্তূপ বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রবল বেগে নিচে পতিত হয়, যাকে হিমানি সম্প্রপাত বলে। এর ফলে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। 

ভূমিকম্পের মনুষ্য সৃষ্ট কারণ 

১. ভূগর্ভে বিস্ফোরণ - বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশগুলো প্রায় ভূগর্ভে পারমানবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে থাকে। যার ফলে সেই বিস্ফোরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে তীব্র ভূকম্পন অনুভূত হয়। 

২. কৃত্রিম জলাধার - নদীতে বাঁধ দিয়ে কৃত্রিম জলাধার নির্মান করলে জলাধারে সঞ্চিত পানির প্রচন্ড চাপে এবং সেই স্থানের ভূ গঠন সুস্থিত না হলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হতে পারে।

এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub