আল্লাহ তাআলা বান্দাদের বেশি বেশি ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার তাগিদ দিয়েছেন। কারণ বিশেষ বান্দারা ছাড়া সবাই গুনাহগার, আর এরমধ্যে তারাই উত্তম যারা আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চেয়ে নেয়। মহান আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত ইস্তেগফার করা ছাড়া আমাদের মুক্তির কোনো পথও নেই। যারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে না, তাদের তিনি পছন্দ করেন না। অন্যদিকে ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের জন্য তিনি পরম ক্ষমাশীল। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা: ১৯৯)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও।’ (সুরা হুদ: ৩)
কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করার নামই ইস্তেগফার। ইস্তেগফার করার নিয়ম হলো— প্রথমত অতীত গুনাহের ব্যাপারে স্বীকারোক্তি প্রদানপূর্বক আল্লাহর কাছে লজ্জিত হতে হবে। দ্বিতীয়ত ভবিষ্যতে ওই গুনাহ না করার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। তৃতীয়ত নিজের কৃত অপরাধের জন্য কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং সর্বশেষ হৃদয় থেকে ওই পাপকর্মকে ঘৃণা করতে হবে। আর কৃত অপরাধের সঙ্গে যদি কোনো বান্দার হক জড়িত থাকে, তাহলে তা আদায় করে দিতে হবে।
বিজ্ঞাপন
ইস্তেগফার অনেক দোয়ার মাধ্যমে করা যায়। সবচেয়ে ছোট ইস্তেগফার أَستَغْفِرُ اللهَ উচ্চারণ: ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ অনুবাদ: ‘আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’ প্রতি ওয়াক্তের ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর রাসুলুল্লাহ (স.) এই দোয়া ৩ বার পড়তেন। (মেশকাত: ৯৬১)
আবার এই দোয়াটিও ইস্তেগফার— أسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذي لا إلهَ إِلاَّ هُوَ الحَيَّ القَيُّومَ وأتُوبُ إلَيْهِ উচ্চারণ: ‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাজি লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়া হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলাইহি।’ অনুবাদ: ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তাওবা করি।’ (আবু দাউদ: ১৫১৭)।
এই দোয়াটিও ইস্তেগফারের দোয়া— رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ উচ্চারণ: ‘রব্বিগফিরলী ওয়াতুব ‘আলাইয়া ইন্নাকা আনতাত্ তাওয়াবুর রহিম।’ অর্থাৎ ‘হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করুন। আমার তাওবা গ্রহণ করুন। নিশ্চয় আপনি তাওবা গ্রহণকারী, অতি দয়ালু।’ (আবু দাউদ: ১৫১৬)
মূলত কোরআন হাদিসে বর্ণিত গুনাহ মাফের সব দোয়াই ইস্তেগফারের দোয়া। সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো শ্রেষ্ঠ ইস্তিগফার এবং এটি সকাল সন্ধ্যার জিকির।
বিজ্ঞাপন
সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো— اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বি লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আ'বদুকা ওয়া আনা আ'লা আহ্দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আ'উযুবিকা মিন শার্রি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি'মাতিকা আ'লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আনতা।’ অনুবাদ: হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের ওপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারণ তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।’ (বুখারি: ৬৩০৬)
সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সকালে দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইস্তেগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হওয়ার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে পড়ে সকালের আগে মারা যাবে, সে জান্নাতি হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৩০৬)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বেশি বেশি ইস্তেগফার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।