বুধবার, ২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ঈদের নামাজের নিয়ম

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৯ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

পবিত্র রমজান শেষ হতে চলেছে। ঈদুল ফিতরের মধ্য দিয়ে রমজান শেষ হবে। ঈদুল ফিতর মানে রোজা শেষ হওয়ার উৎসব। দু’রাকাত নামাজের মধ্য দিয়ে এই উৎসবের দিনের মূল আয়োজন শুরু হয়। কিন্তু ঈদের নামাজ কীভাবে পড়তে হয়, এ বিষয়ে অনেকের অজ্ঞতা রয়েছে। নিচে ঈদের নামাজের নিয়ম কানুন তুলে ধরা হলো।

ঈদের নামাজ 
ঈদের দুই রাকাত নামাজ ওয়াজিব। এতে আজান-ইকামত নেই। যাদের ওপর জুমার নামাজ ওয়াজিব, তাদের ওপর ঈদের নামাজও ওয়াজিব। ঈদের নামাজ খোলা ময়দানে পড়া উত্তম। তবে মক্কাবাসীর জন্য মসজিদে হারামে উত্তম। শহরের মসজিদগুলোতেও ঈদের নামাজ জায়েজ আছে। (বুখারি: ১/১৩১, ফতোয়ায়ে শামি: ১/৫৫৫, ১/৫৫৭, আল মুহাজ্জাব: ১/৩৮৮)


বিজ্ঞাপন


ঈদের নামাজের সময়
সূর্য উদিত হয়ে এক বর্শা (অর্ধহাত) পরিমাণ উঁচু হওয়ার পর থেকে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত। তবে ঈদুল ফিতরের নামাজ একটু দেরিতে পড়া সুন্নত, যেন নামাজের আগেই বেশি থেকে বেশি সদকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যায়। (ফাতহুল কাদির: ২/৭৩, আল মুগনি: ২/১১৭)

আরও পড়ুন: ঈদের দিন কোলাকুলির বিধান

ঈদের নামাজের নিয়ত
ইসলামে নিয়ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সকল কিছুই নিয়তের উপর নির্ভরশীল। নিয়ত অর্থ হলো, মনের ইচ্ছা, সঙ্কল্প বা প্রতিজ্ঞা। এটি অন্তরের কাজ, জিহ্বার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোনো কাজের শুরুতে মনের মধ্যে যে ইচ্ছাপোষণ করা হয়, সেটাকেই নিয়ত বলা হয়। তাই মনে মনে নির্দিষ্ট করতে হবে যে, আমি এই ঈদের নামাজ কিবলামুখী হয়ে ইমামের পেছনে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে আদায় করছি।

ঈদের নামাজের নিয়ম
ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির ওয়াজিব। প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমা ও ‘ছানা’র পর তিন তাকবির। দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর রুকুতে যাওয়ার আগে তিন তাকবির। এই তাকবিরগুলো বলার সময় ইমাম-মুক্তাদি সবাইকে হাত ওঠাতে হবে। তৃতীয় তাকবির ছাড়া প্রতিটি তাকবিরের পর হাত ছেড়ে দিতে হবে। কেউ যদি এই তাকবিরগুলো না পায়, তাহলে সে রুকুতে থাকা অবস্থায় আদায় করে নেবে। কারো পূর্ণ এক রাকাত ছুটে গেলে সে দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর তাকবিরগুলো আদায় করে নেবে। কেরাতের আগে আদায় করারও সুযোগ রয়েছে। নামাজ শেষে খুতবা প্রদান ইমামের জন্য সুন্নত, তা শ্রবণ করা নামাজির জন্য ওয়াজিব। (ফতোয়ায়ে শামি: ১/৫৫৯, ৫৬০)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে যে দোয়া পড়া সুন্নত

ঈদের দিনের সুন্নত ও মোস্তাহাব
১. মেসওয়াক করা সুন্নত। ২. গোসল করা সুন্নত। ৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। ৪. কিছু খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত। বিজোড় সংখ্যায় যেকোনো মিষ্টিদ্রব্য খাওয়া উত্তম; খেজুর অতি উত্তম। ৫. ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া উত্তম। এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া, অন্য রাস্তা দিয়ে আসা মোস্তাহাব। ৬. ঈদগাহে যাওয়ার পথে নিচুস্বরে তাকবির (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) পড়া সুন্নত। ৭. সাধ্যমতো উত্তম পোশাক পরিধান করা মোস্তাহাব। ৮. নামাজের জন্য ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকায়ে ফিতর আদায় করা সুন্নত (দাতা ও গ্রহীতার সুবিধার্থে রমজানেও প্রদান করা যায়)। ৯. ঈদের দিন চেহারায় খুশির ভাব প্রকাশ করা এবং কারো সঙ্গে দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলা মোস্তাহাব। ১০. আনন্দ-অভিবাদন বিনিময় করা মোস্তাহাব। (ফতোয়ায়ে শামি : ১/৫৫৬, ৫৫৭, ৫৫৮, হেদায়া: ২/৭১, বুখারি: ১/১৩০, ইবনে মাজাহ: ৯২)

পরিচিত কারো সঙ্গে কিছুদিন বা অনেক দিন পর দেখা হলে উভয়ে ডান গলা মিলিয়ে মহব্বতের সঙ্গে একবার কোলাকুলি করা এবং ‘আল্লাহুম্মা জিদ মহাব্বাতি লিল্লাহি ওয়া রাসুলিহ’ পড়া সুন্নত। তবে ঈদের দিন জরুরি মনে করে কোলাকুলি করা বিদআত। অন্যথায় জায়েজ। (তিরমিজি: ২/১০২, মাহমুদিয়া: ২৮/২১১, ইসলাহি খুতুবাত: ১/১৮৬-১৮৭)

ঈদ মহান আল্লাহর নেয়ামত। নেয়ামতের চাহিদা হলো, এর শুকরিয়া আদায় করা এবং অবাধ্য আচরণ না করা। এসব দিকে লক্ষ রাখা সকল মুসলমানের কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈদের দিনের যাবতীয় সুন্নত-মুস্তাহাবগুলো মেনে চলার এবং আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দান করুন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর