বুধবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ওমরা কেমন ইবাদত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

ওমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ওমরা শব্দের অর্থ জিয়ারত করা, পরিদর্শন করা ও সাক্ষাৎ করা। পবিত্র কাবাঘরের জিয়ারতই মূলত ওমরা। ইসলামের ভাষায় হজের সময় ছাড়া অন্য যেকোনো সময় পবিত্র কাবাঘরের তাওয়াফসহ নির্দিষ্ট কিছু কাজ করাকে ওমরা বলে। ওমরার জন্য নির্দিষ্ট সময় নেই। শুধু হজের মৌসুমে বা জিলহজ মাসের ৯-১৩ তারিখ পর্যন্ত পাঁচ দিন ওমরা করা মাকরুহ।

ওমরা ওয়াজিব না সুন্নত?
ওমরা পালন সুন্নত। সামর্থ্য থাকলে জীবনে একবার ওমরা করা সুন্নতে মোয়াক্কাদা। এটি পুরুষ ও মহিলা সবার জন্য প্রযোজ্য। ওমরা সম্পর্কে কোরআনে কারিমে রয়েছে, ‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনাবলির একটি; তাই যারা হজ করবে বা ওমরা করবে, তারা এ দুটি প্রদক্ষিণ (সাঈ) করবে।’ (সুরা বাকারা: ১৫৮) জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, নবী কারিম (স.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘ওমরা কি ওয়াজিব?’ তিনি বলেছেন, ‘না, ওমরা করা তোমার জন্য উত্তম।’ (সুনানে দারাকুতনি: ২৭২৪)


বিজ্ঞাপন


ওমরা কাদের জন্য
হজের মতো ওমরার জন্যও সুস্থ, শারীরিকভাবে সক্ষম এবং প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পাশাপাশি আর্থিক সামর্থ্যও থাকতে হবে, তাহলেই ওমরা করা সুন্নত। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়ার মর্ম হলো, সফরের সময়ে নিজের, পরিবারের ও অধীন ব্যক্তিদের সব ধরনের খরচ নিশ্চিত করার পর ওমরা পালনের মতো অর্থ জমা থাকা।

আরও পড়ুন: হজ ফরজ হওয়ার শর্ত, গুরুত্ব ও ফজিলত

হজ যেমন জীবনে একবার আদায় করা ফরজ, তেমনি ওমরাও জীবনে অন্তত একবার আদায় করা সুন্নত। সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য একাধিক ওমরা করতে অসুবিধা নেই। তবে হজ ফরজ থাকা অবস্থায় হজ বাদ দিয়ে বারবার ওমরা করা অনুচিত। অবশ্য ওমরা আদায় করলে হজ ফরজ হয়ে যায়, এই প্রচলিত কথাটিও সঠিক নয়। কারণ হজ ও ওমরার খরচে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। আর ওমরা হজের সফরে যেমন করা যায়, আলাদাভাবেও করা যায়। হজ ও ওমরার জন্য মক্কা ভ্রমণে নারীদের জন্য মাহরাম পুরুষ সঙ্গে থাকার শর্ত রয়েছে।

ওমরার ফজিলত
ওমরা পালনের অসংখ্য ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এক হাদিসে নবী কারিম (স.) ইরশাদ করেন, ‘এক ওমরার পর আরেক ওমরা, উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারা। আর জান্নাতই হজে মাবরুরের একমাত্র প্রতিদান।’ (সহিহ মুসলিম: ১৩৪৯)
জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন- ‘হজ ও ওমরাকারীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি দল। তারা দোয়া করলে তাদের দোয়া কবুল করা হয় এবং তারা কিছু চাইলে তাদেরকে তা দেওয়া হয়।’ (মুসনাদে বাজজার: ১১৫৩; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৫২৮৮; তবারানি: ১৭২১)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হজ ও ওমরাকারীগণ যখন দোয়া করে, তাদের দোয়া কবুল করা হয়। তারা যখন কারো জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে তাদেরকে ক্ষমা করা হয়। (ইবনে মাজাহ: ২৮৯২; নাসায়ি: ৫/১১৩)
রাসুলুল্লাহ (স.) আরও ইরশাদ করেন, তোমরা ধারাবাহিক হজ ও ওমরা আদায় করতে থাকো। এ দুটি আমল দারিদ্র্য ও গুনাহ বিদূরিত করে দেয়। যেমন—ভাটার আগুনে লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা-জং দূরীভূত হয়ে থাকে। (তিরমিজি: ৮১০)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: হজ ও ওমরা পালনকারীরা যেসব প্রতিদান পাবেন

ওমরা কবুল হওয়ার শর্ত
অন্যান্য ইবাদতের মতো ওমরাও বিশুদ্ধ নিয়ত, ইখলাস ও সুন্নতের অনুসরণ ছাড়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। কোনো ধরনের পার্থিব উদ্দেশ্য এখানে গ্রহণযোগ্য নয়; বিশেষ করে প্রচারপ্রিয়তা ইবাদতের সওয়াব নষ্ট করে দেয়। আর নবী কারিম (স.)-এর অনুসরণের মর্ম হলো, তিনি যেভাবে ওমরা পালন করেছেন, সাহাবিদের শিখিয়েছেন এবং সম্মতি দিয়েছেন, সেভাবেই তা পালন করা। হজ ওমরা কবুল হওয়ার জন্য আলেমরা কিছু বিষয়ে সতর্ক করেন। সেগুলো হলো—
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিয়ত। (বুখারি : ১) 
সুন্নতের অনুসরণ (সহিহ মুসলিম: ৮, ১৭১৮)
হালাল সম্পদ থেকে হজ-ওমরা সম্পাদন। (তিরমিজি: ২৯৮৯)
গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা। (সুরা বাকারা: ১৯৭)

রমজানে ওমরা পালনের বিশেষ সওয়াব
রমজান মাসে ওমরা করা সবচেয়ে উত্তম। নবী কারিম (স.) বলেছেন, রমজানে একটি ওমরা করা আমার সাথে একটি হজ করার সমতুল্য। (সহিহ বুখারি: ১৮৬৩)

ওমরা পালনে প্রধান চার কাজ
ওমরা পালনে প্রধানত ৪টি কাজ করতে হয়। এর মধ্যে দুইটি কাজ ফরজ— ১. ইহরাম পরিধান করা। ২. পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করা। 
আর দুইটি কাজ ওয়াজিব— ১. সাফা ও মারওয়া সাতবার সাঈ করা। ২. মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছোট করা।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub