ইসলাম স্ত্রীকে ভালোবাসার পাশাপাশি তার আত্মীয়-স্বজনকেও ভালোবাসার শিক্ষা দেয়। তাদের প্রতি কোনোরকম বিদ্বেষ না রাখা স্বামীর কর্তব্য। স্ত্রীর আত্মীয়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহারে দাম্পত্য জীবন সুন্দর ও সুখী হয়। প্রিয়নবী (স.) স্ত্রীদের আত্মীয়দের প্রতি সদাচারী ছিলেন। সাহাবিদেরও তিনি শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের সঙ্গে ভালো আচরণের শিক্ষা দিতেন।
এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে তোমরা নিশ্চয় মিসর জয় করবে। তা এমন একটি দেশ যেখানে কীরাত (আঞ্চলিক মুদ্রার নাম) ব্যবহার হয়ে থাকে। তোমরা যখন তা জয় করবে, তখন সেখানকার অধিবাসীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা তাদের সাথে সৌহার্দ্য ও আত্মীয়তার (অথবা আল্লাহর রাসুল বলেছেন) সৌহার্দ্য ও শ্বশুরাত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে।’ (মুসলিম: ২৫৪৩; মেশকাত: ৫৯১৬)
বিজ্ঞাপন
এই হাদিসে শ্বশুরপক্ষের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। যদিও রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়দের মতো তাদের কোনো হক বা অধিকার নেই। (উসাইমিন, ফতোয়া নুরুন আলাদ-দারব: ২৪/০২; বিন বায, ফতোয়া নুরুন আলাদ-দারব)
আরও পড়ুন: স্ত্রীর বাসস্থানের ব্যাপারে ইসলামি নির্দেশনা
তবে নিকটাত্মীয় হিসেবে তাদের প্রতি সদাচরণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে তাদের জন্য খরচ করবে। নিজ বংশ ও শ্বশুর বংশের সুসম্পর্কের গুরুত্ব ও মর্যাদা বুঝাতে আল্লাহ তাআলা বলেন, তিনিই মানুষকে পানি হতে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি তার বংশগত ও বিবাহগত সম্পর্ক নির্ধারণ করেছেন। আর তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান।’ (সুরা ফুরকান: ২৫/৫৪)
রাসুল (স.) বলেন, জেনে রেখো! তোমাদের যেরূপ অধিকার রয়েছে তোমাদের স্ত্রীদের ওপর, তোমাদের স্ত্রীদেরও তদ্রূপ অধিকার রয়েছে তোমাদের ওপর (কাজেই উভয়ের প্রতি উভয়ের অধিকার আদায় করা কর্তব্য)। (তিরমিজি: ১১৬৩)
বিজ্ঞাপন
স্বামী যদি স্ত্রীর মা-বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনদের সম্মান না করে, তাদের ব্যাপারে উল্টাপাল্টা মন্তব্য করে এতে স্ত্রীর মনে আঘাত লাগে। ফলে আপনি স্ত্রীকে যতই ভালোবাসুন, তিনি ওই আঘাত ভুলতে পারেন না।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে অনেকে স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে অথবা ঠুনকো কারণে শশুরবাড়ির আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। অথচ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা অন্যতম কবিরা গুনাহ। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ বুখারি: ৫৯৮৪)
আরও পড়ুন: স্ত্রীর উপার্জনে স্বামীর অধিকার কতটুকু?
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যারা আল্লাহকে দেওয়া দৃঢ় অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আল্লাহ তাআলা আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের জন্য রয়েছে অভিসম্পাত এবং তাদের জন্যই রয়েছে মন্দ বাসস্থান।’ (সুরা রাদ: ২৫)
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের আমল কবুল হয় না বলেও হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আদম সন্তানের আমলসমূহ প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে (আল্লাহর কাছে) উপস্থাপন করা হয়। তখন আত্মীয়তার বন্ধন বিচ্ছিন্নকারীর আমল গ্রহণ করা হয় না।’ (মুসনাদে আহমদ: ১০২৭৭)
অন্যদিকে স্ত্রীর মন খুশি রাখতে এবং তার প্রয়োজনে তাকে তার মা-বাবা, ভাই-বোন ও নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়ার শিক্ষা রয়েছে নবীজির জীবনীতে। ইফকের ঘটনাকালে আয়েশা (রা.) অসুস্থ হলে তিনি পিতার বাড়িতে গমনের জন্য রাসুল (স.)-এর কাছে অনুমতি চান। রাসুল (স.) তাঁকে অনুমতি দিলে তিনি পিতৃগৃহে চলে যান। (বুখারি: ২৬৬১)
অতএব ইসলামের দেওয়া শ্বশুর-শাশুড়ির প্রতি মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, শ্বশুর-শাশুড়িকে পিতা-মাতার মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের কর্তব্য শ্বশুর-শাশুড়িকে পিতা-মাতার চোখে দেখা। এর মাধ্যমে নবীজির পবিত্র সুন্নত রক্ষা হবে। একইসঙ্গে দাম্পত্য জীবনে উভয়ের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি বজায় থাকবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবীজির সুন্নত মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।