শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ঢাকা

যে ৭ দোয়া জীবন বদলে দেবে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ০১:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

যে ৭ দোয়া জীবন বদলে দেবে

দোয়া মুমিনের হাতিয়ার। দোয়া কবুলের মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করে দেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো; আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।’ (সুরা মুমিন: ৬০) দোয়াকে বলা হয় ইবাদতের মগজ। হাদিস অনুযায়ী, যে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। (তিরমিজি: ৩৩৭৩) ‘মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো কিছু নেই।’ (ইবনু মাজাহ: ৩৮২৯)

সুতরাং আমরা দোয়া থেকে বিমুখ হতে পারি না। সকল প্রয়োজনে একমাত্র আল্লাহরই সাহায্য চাইব। আর যে বান্দা একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়, তাকে আল্লাহ তাআলা না দিয়ে পারেন না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মহান প্রভু চিরঞ্জীব ও অতি দয়ালু। যখন তাঁর কোনো বান্দা তাঁর প্রতি হাত উঠায়, তখন তিনি খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৩২০)


বিজ্ঞাপন


এখানে আমরা এমন ৭টি দোয়া তুলে ধরছি, যেগুলো একজন মুমিনের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে দুনিয়া-আখেরাতে সর্বাধিক কল্যাণ লাভের উপায়। 

১. হেদায়াত লাভের দোয়া: হেদায়াতের সম্পর্ক কেবল আল্লাহ তাআলার সঙ্গে। আল্লাহ তাআলা যাদেরকে হেদায়াত করেন, তারা ছাড়া সবাই পথভ্রষ্ট। তাই মহান আল্লাহর কাছে হেদায়াত বা সুপথপ্রাপ্তির দোয়া করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে তাঁর বান্দাদের শিখিয়েছেন কীভাবে এই প্রার্থনা করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, اِهۡدِ نَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ ‘আমাদের সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন।’ (সুরা ফাতিহা: ৫)

রাসুলুল্লাহ (স.) পথভ্রষ্টতার ঊর্ধ্বে থাকার পরও হেদায়াত লাভের দোয়া করতেন। হেদায়াতের জন্য অনেক দোয়া করা যায়। এখানে একটি দোয়া তুলে ধরা হলো— اللَّهُمَّ أَلْهِمْنِي رُشْدِي وَأَعِذْنِي مِنْ شَرِّ نَفْسِي উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আলহিমনী রুশদী, ওয়া আয়িজনী মিন শাররি নাফসী’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাকে হেদায়াত দান করো এবং আমার নফসের খারাবি থেকে রক্ষা করো।’ (সূত্র: সুনানে তিরমিজি: ৩৪৮৩)

২. দুনিয়া-আখেরাতে সর্বাধিক কল্যাণ লাভের দোয়া: রাসুলুল্লাহ (স.) উম্মতকে দুনিয়া-আখেরাত উভয় জাহানের কল্যাণ লাভের দোয়া করতে শিখিয়েছেন। এ বিষয়ে সর্বোত্তম দোয়াটি হলো— اللَّهمَّ إنِّي أسألُك المعافاةَ في الدُّنيا والآخرةِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল মুআফাতা ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা কামনা করি।’ আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, বান্দা যত রকম দোয়া করে তার মধ্যে এই দোয়ার চেয়ে উত্তম কোনো দোয়া নেই। (ইবনে মাজাহ: ৩৮৫১)


বিজ্ঞাপন


৩. জীবনের সকল চাওয়া পূর্ণ হওয়ার দোয়া: প্রিয়নবী (স.) আল্লাহর কাছে এমন এক বিশেষ দোয়া করতেন, যে দোয়ায় জীবনের সকল চাওয়া নিহিত। সে দোয়ার মাধ্যমে আমরাও জীবনের সকল প্রয়োজন আল্লাহর কাছে চেয়ে নেব। দোয়াটি হলো- اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আফাফা; ওয়াল গেনা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়াত কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা তাকওয়া কামনা করি এবং আপনার কাছে সতীত্ব তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ তথা সামর্থ্য বা সচ্ছলতা কামনা করি।’ (মুসলিম: ২৭২১; তিরমিজি: ৩৪৮৯; ইবনে মাজাহ: ৩৮৩২; মুসনাদে আহমদ: ৩৬৮৪, ৩৮৯৪) 

৪. উৎকৃষ্ট জ্ঞান ও বিচক্ষণতার দোয়া: উৎকৃষ্ট বোধশক্তি, গভীর জ্ঞান, তত্ত্বজ্ঞানের সমন্বয় হলো প্রজ্ঞা। এটি এমন শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার আলোকে প্রাপ্ত জ্ঞানের নাম, যার মাধ্যমে সবসময় মঙ্গল সাধিত হয়। এই অমূল্য সম্পদ যাদের নসিব হয়, তারা পরম ভাগ্যবান। এই জ্ঞানলাভের জন্য একটি দোয়া রয়েছে। যা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত ইবরাহিম (আ.) এই দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা দোয়াটি খুব পছন্দ করেছেন, তাই পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন। দোয়াটি হলো—رَبِّ هَبۡ لِیۡ حُکۡمًا وَّ اَلۡحِقۡنِیۡ بِالصّٰلِحِیۡنَ ‘রাব্বি হাবলী হুকমাওঁ ওয়ালহিক্বনী বিস সালিহীন’ অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রজ্ঞা দান করুন এবং সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন।’ (সুরা শুআরা: ৮৩)
এই দোয়ার মাধ্যমে লাভ হবে প্রজ্ঞা। যা জ্ঞানের চেয়ে অনেক উত্তম। জ্ঞানী ব্যক্তি ভণ্ডও হতে পারেন, কিন্তু প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি কর্মে সৎ, চিন্তায় সৎ। তাই প্রজ্ঞা মহান আল্লাহপ্রদত্ত অনন্য নেয়ামত। উৎকৃষ্ট জীবনের মহৌষধ।

৫. জান্নাত প্রাপ্তি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া: একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো- সে জান্নাত লাভ করবে ও জাহান্নাম থেকে মুক্ত থাকবে। সর্বোচ্চ এই সফলতা অর্জনের জন্য নবীজি দোয়া শিখিয়েছেন উম্মতকে। দোয়াটি হলো—اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আউজুবিকা মিনান্নার।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’ ‘রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৩ বার আল্লাহর কাছে জান্নাত চায়, জান্নাত তখন বলে, ‘হে আল্লাহ! এই ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ৩ বার জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করে, জাহান্নাম বলে, ‘হে আল্লাহ এই ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও।’ (তিরমিজি: ২৫৭২, ইবনে মাজাহ: ৪৩৪০)

৬. ঋণমুক্ত থাকার দোয়া: মানুষের হক নিয়ে মৃত্যুবরণ করলে জান্নাতে যাওয়া ও জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাকা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। তাই সবসময় ঋণমুক্ত থাকার চেষ্টা করার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে ঋণমুক্তির দোয়া করার বিকল্প নেই। ঋণমুক্ত থাকার একটি সুন্দর দোয়া হলো—اللهم اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عن حَرَامِكَ ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ ‘আল্লাহুম্মাকফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করো। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী করো না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে সচ্ছলতা দান করো।’ আলী (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (স.) এই দোয়া শিখিয়েছেন। আলী (রা.) বলেন, এই দোয়া পাঠ করলে আল্লাহই ঋণমুক্তির ব্যাপারে দায়িত্ব নেবেন, যদি ঋণ পর্বতসমানও হয়।’ (তিরমিজি: ৩৫৬৩; মুসনাদ আহমদ: ১৩২১)

৭. গুনাহ মাফের শ্রেষ্ঠ দোয়া: পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা বান্দার গুনাহ ক্ষমা করার ঘোষণা দিয়েছেন। কারণ হলো- তিনি ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু। তাওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে এই সুযোগ লুফে নেওয়া বুদ্ধিমানের পরিচায়ক। এক হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘যদি কেউ গুনাহ করে ফেলে, তারপর পবিত্রতা অর্জন করার মাধ্যমে দুই রাকাত সালাত আদায় করে; আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।’ (তিরমিজি: ৩২৭৬) যে দোয়া জীবন বদলে দেবে, যে দোয়া পড়লে জীবন পাল্টে যাবে

গুনাহ মাফের অনেক দোয়া রয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য দুটি দোয়া তুলে ধরা হলো। এক. اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা। খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা। ওয়া আনা আলা আহদিকা। ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতা’তু। আউজু বিকা মিন শাররি মা-সানা’তু। আবুয়ু লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা। ওয়া আবুয়ু লাকা বি জাম্বি। ফাগফিরলী। ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনবা ইল্লা আনতা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! একমাত্র আপনিই আমাদের প্রতিপালক। আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আপনিই আমার স্রষ্টা এবং আমি আপনার দাস। আমি আপনার সঙ্গে কৃত ওয়াদা ও অঙ্গীকারের ওপর সাধ্যানুযায়ী অটল ও অবিচল আছি। আমি আমার কৃতকর্মের সব অনিষ্ট হতে আপানার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমার উওর আপনার দানকৃত সব নেয়ামত স্বীকার করছি। আমি আমার সব গুনাহ স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। কেননা, আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।’ এই দোয়াকে বলা হয় সায়্যিদুল ইস্তেগফার। নবী কারিম (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকালে সায়্যিদুল ইস্তেগফার পাঠ করবে, সে যদি সন্ধ্যা হওয়ার আগে মারা যায় তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সন্ধ্যায় সায়্যিদুল ইস্তেগফার পড়ে সে যদি সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহিহ বুখারি: ৬৩০৬)

দুই. رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ‘রব্বানা ইন্নানা আ-মান্না ফাগফিরলানা যুনূবানা ওয়াক্বিনা ‘আযা-বান্না-র।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব! নিশ্চয় আমরা ঈমান এনেছি। অতএব আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করুন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৬) 

উল্লেখ্য, দোয়ার আগে আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামের জিকির অথবা আল্লাহর গুণবাচক নাম যুক্ত আছে—এমন সুরা পাঠ করা উত্তম। এরপর নবীজির প্রতি দরুদ পড়ে দোয়া শুরু করলে আল্লাহ তাআলা সেই দোয়া কবুল করেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উল্লেখিত দোয়াগুলোর মাধ্যমে একটি সুন্দর দুনিয়াবি জীবন লাভ ও পরকালীন মুক্তিলাভের তাওফিক দান করুন। আমিন। 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর