আর মাত্র আট মাস পর ২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে চলতি বছরের নভেম্বরে। তবে এরইমধ্যে ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে দেশজুড়ে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে চায়। দলটি ইতিমধ্যে তাদের নির্বাচনী প্রচারণাও শুরু করেছে। ঈদের আগে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় উন্নয়ন প্রচারের তাগিদ দিয়েছেন। সে হিসেবে কাজও করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনের মাঠে আছে বিএনপি। ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত বিএনপির অবস্থান কি হবে তা সময়ই বলে দেবে।
দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২০টি ঢাকায়। তার একটি ঢাকা-১০। রাজধানীর ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান এবং হাজারীবাগ থানার সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ১৮৩নং আসন ঢাকা-১০।
বিজ্ঞাপন
২০১৪ ও ২০১৮ সালে টানা দুইবার আসনটি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ২০২০ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হওয়ায় সংসদ সদস্য পদ ছাড়তে হয় তাকে।
ওই বছরের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে আসনটিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। এই ব্যবসায়ী নেতা যখন ঢাকা-১০ আসনের দায়িত্ব পান তখন দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব।
জানা গেছে, করোনার ওই সময় নেতাকর্মীসহ স্থানীয়দের পাশে দাঁড়ান তিনি। খাদ্যসামগ্রী ও আর্থিক সহযোগিতা দেন। তবে দ্বিমতও রয়েছে। স্থানীয়দের মতে, তিন লাখের বেশি ভোটারের ঢাকা-১০ আসনে সংসদ সদস্য পরিবর্তন হয়েছে তা অনেকেই জানেন না। স্থানীয়দের অনেকেই এখনো শেখ ফজলে নূর তাপসকে আসনটির সংসদ সদস্য মনে করেন।
ঢাকা-১০ আসনের অন্তর্গত এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানকার সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট। আরেকটি বড় সমস্যা হয়ে সড়ক ও ফুটপাত দখল। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোড, নিউমার্কেট এলাকা, হাজারীবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও ফুটপাত দখল করে দোকান বসার প্রবণতা বেড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতৃত্বেই চলছে এই দখলদায়িত্ব।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তা এড়িয়ে যান সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন প্রায় দুই বছর। এরমধ্যে স্থানীয় মানুষের কতটা ঘনিষ্ঠ হতে পেরেছেন এবং কতটা আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, অনেক কঠিন প্রশ্ন। আমি চেষ্টা করি মানুষের পাশে থাকতে। মানুষের তো অনেক রকমের সমস্যা থাকে। যেমন করোনা চলে এলো, আর্থিকভাবে এবং খাবার দিয়ে যারা পিছিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছিলাম শুধু ঢাকা-১০ আসনের জন্য। যখন যেখানে মানুষের পাশে যাওয়া প্রয়োজন আমি সেখানে গিয়েছি।
তিনি বলেন, মানুষ চায় কোনো অত্যাচার না হোক, চাঁদাবাজি না হোক, নিরাপত্তা যেন ঠিক থাকে, মাদকের উপদ্রব না হোক। এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন বলে দাবি করেন এই সংসদ সদস্য।
শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আমাদের দলের বাইরে যারা গরিব আছেন তাদেরকে আর্থিকভাবে সাহায্য করে যাচ্ছি। দলের মধ্যে অনেকের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তারা দলটা করেন নির্মোহভাবে। ওদের চিকিৎসা, খোঁজখবর রাখা যতদূর পারি করে যাচ্ছি।
আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে কতটুকু আশাবাদী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নিজেকে নিয়ে কোনো আশা করি না। আমি আশা করি দেশকে নিয়ে। দেশের জন্য। যেখানে যখন ছিলাম সারা জীবন বিজনেস ডেভেলপমেন্টের জন্য কাজ করেছি।
এদিকে আলোচনা রয়েছে- আগামী নির্বাচনে ঢাকা-১০ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ অথবা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করীম সেলিমের ছোট ছেলে শেখ ফজলে নাঈম।
বিষয়টি নিয়ে জোর আলোচনা চলছে আওয়ামী লীগের নানা মহলে৷ যুবলীগের মধ্যে আলোচনা যেন আরও বেশি। কারণ শেখ ফজলে নাঈম যুবলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, শেখ পরিবার থেকে আবারও কেউ এই আসনে সংসদ সদস্য হবেন।
এমন আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নেন বলে জানান শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, এ জন্য আমার চেয়ে ভালো অনেক লোক আছে এদেশে। দল যদি মনে করে অন্য কাউকে দিলে আরো ভালো হবে, তাহলে আমিও তার জন্য কাজ করব।
কারই/জেএম