সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ঢাকা-২: বুড়িগঙ্গার দুই তীরে নৌকার লড়াই, এক তীরে শক্তিধর বিএনপি

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:৫০ এএম

শেয়ার করুন:

ঢাকা-২: বুড়িগঙ্গার দুই তীরে নৌকার লড়াই, এক তীরে শক্তিধর বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর এক বছরও নেই। ২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহে ভোট এবং তফসিল ঘোষণা চলতি বছরের নভেম্বরে। এরইমধ্যে ভোটের হাওয়া বইছে দেশজুড়ে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে চায়। অপরদিকে সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনের মাঠে আছে বিএনপি। আর পারিবারিক কলহ থাকলেও ভোটের বিষয়ে চোখ-কান খোলা জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের।

দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২০টি ঢাকায়। এরমধ্যে ঢাকা-২ আসনটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭নং ওয়ার্ড, হাজারীবাগ থানার সুন্দরগঞ্জ, সাভার উপজেলার আমিনবাজার ইউনিয়ন, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন ও ভাকুর্তা ইউনিয়ন, কেরানীগঞ্জ উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন (হজরতপুর, কলাতিয়া, তারানগর, শাক্তা, রোহিতপুর, বাস্তা, কালিন্দী এবং আগানগর ইউনিয়ন) নিয়ে গঠিত।


বিজ্ঞাপন


জাতীয় সংসদের ১৭৫নং এই আসনটিতে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম তিনবারের সংসদ সদস্য। তবে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন চান কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন আহমেদ। দুই নেতাই এখন এলাকায় নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন।

১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আসনটি ছিল বিএনপির দখলে। এর আগেও এই আসন ভাগাভাগি হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য হন তিনি।

dm

বর্তমান সংসদের মেয়াদ আছে আর এক বছরেরও কম সময়। ইতিমধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনা ও কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। ঢাকা-২ আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী কে হচ্ছেন সেটা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও সমীকরণ।


বিজ্ঞাপন


কামরুল ইসলাম অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০তম জাতীয় সম্মেলনে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। সম্প্রতি তাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিমত, এ আসনের কামরাঙ্গীরচর অংশে বেশ জনপ্রিয় কামরুল ইসলাম। সেখানে তার শক্ত হাত হিসেবে কাজ করেন ৫৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন। ৫৫ ও ৫৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলররাও তার অনুসারী। তবে টানা তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য থাকার পরও তেমন জনপ্রিয়তা গড়ে ওঠেনি কেরানীগঞ্জ এলাকায়।

কেরানীগঞ্জ অংশে জনপ্রিয়তায় কামরুল ইসলামের চেয়ে এগিয়ে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে স্থানীয়দের সঙ্গে তার যোগাযোগ বেশ ভালো। সেই সঙ্গে জনপ্রিয়তাও গড়ে তুলেছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়নও সংগ্রহ করেছিলেন শাহীন। তবে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় দলের জ্যেষ্ঠ নেতা কামরুল ইসলামকে।

dm

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের একাংশের দাবি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন শাহীন। বর্তমান সংসদ সদস্যের চেয়েও শাহীন আহমেদ বেশি জনপ্রিয় বলে দাবি তাদের।

এছাড়া কেরানীগঞ্জ ও সাভার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বার এবং কামরাঙ্গীর চর, কেরানীগঞ্জ ও সাভারের ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মীদের মতেও কামরাঙ্গীর চরের বাইরেও শাহীন আহমেদের সমর্থন রয়েছে। তবে শাহীন সমর্থিতরা অনেকটা কোণঠাসা।

এদিকে কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া, তারানগর, শাক্তা, রোহিতপুর, বাস্তায় জনপ্রিয়তা রয়েছে বিএনপি নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানের। গত নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারলেও তার জায়গায় প্রার্থী ছিলেন ছেলে ইরফান ইবনে আমান অমি। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩২ হাজার ৪৯০ ভোট পেয়েছিলেন আমানপুত্র।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমান উল্লাহ আমানই প্রার্থী হতে পারেন। যদি কোনো কারণে তিনি প্রার্থী না হতে পারেন সে ক্ষেত্রে আবারও নির্বাচনের মাঠে দেখা যেতে পারে আমানপুত্র ইরফানকে।

নির্বাচনি আসনটি ঘুরে দেখা যায়, পুরো কামরাঙ্গীরচর জুড়ে সাটানো পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন শুধুমাত্র কামরুল ইসলাম সমর্থকদের। সমর্থনও রয়েছে বেশ।

তবে নাগরিকদের মুখে ভিন্ন বোল। কামরুল ইসলাম টানা তিনবার সংসদীয় আসনটির জনপ্রতিনিধি থাকলেও এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন তার হাত ধরে বেশি আসেনি। এলাকার অনেক সড়কই এখনো ভাঙা, জায়গায় জায়গায় খানাখন্দ।

বুড়িগঙ্গার ওপারে কেরাণীগঞ্জ, একইসঙ্গে নদী পার হতেই যেন রাজনীতির হাওয়াও বদলে যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কামরুল ইসলাম আসনটির সংসদ সদস্য হলেও কেরাণীগঞ্জ অংশে তার জনসমর্থন যেন হাতেগোনা।

আটিবাজার, ভাওয়াল, খোলামোড়া, ব্রাহ্মণকীর্তা, দুদু মার্কেট, শ্যামলাসী, কলাতিয়া এলাকায় একক অধিপত্য আওয়ামীপন্থী উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের।

এসব এলাকায় কামরুল ইসলামের সমর্থক নামমাত্র। সংসদ সদস্যের পোস্টার-ব্যানারও সেভাবে চোখে পড়ে না।

dm

আটিবাজারের বাসিন্দা আব্দুস সালামের কাছে সংসদীয় আসনটির রাজনৈতিক অবস্থা জানতে চাইলে ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, সবাই আছে শাহীন আর কামরুল ইসলামরে নিয়া। দুজনই জনপ্রিয়। শাহিন ভাই কেরাণীগঞ্জে, কামরুল সাহেব কামরাঙ্গীর চরে।

ইজিবাইক চালালেও রাজনীতির বেশ খোঁজখবর রাখেন মো. দুলাল। ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, কেরাণীগঞ্জে শাহিন চেয়ারম্যানের সাপোর্টার বেশি, এইডা পুরান কথা। এখন কামরাঙ্গীর চরেও তার প্রচুর লোক। আওয়ামী লীগ থেকে শাহীন চেয়ারম্যানরে নমিনেশন দিলে এক চান্সে হইয়া যাইব।

কামরাঙ্গীরচরের ৫৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও থানা আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, আমাদের কামরাঙ্গীরচরে রাজনৈতিক অবস্থান অনেক শক্তিশালী। সেটি হয়েছে আমাদের তিনবারের এমপি অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের হাত ধরে।

পুরো ঢাকা-২ আসন জুড়ে ‘কামরুল ইসলামের প্রতিদ্বন্দ্বী নেই’ বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে রুহিতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলীর ভাষ্য, সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন দুইভাগে বিভক্ত।

ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, চরে কামরুল ইসলাম সাহেবের জনসমর্থন বা লোকজন বেশি। কেরানীগঞ্জে শাহীন চেয়ারম্যানেরর।

কারই/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর